বসন্তে দেবী বাসন্তীর আরাধনাই ছিল বাঙালির আসল দুর্গাপুজো। কিন্তু রামচন্দ্র শরতে দেবী দুর্গার ‘অকাল বোধন’ করেছিলেন। অকাল অর্থাৎ আদৰ্শ কাল বা যথাযথ সময় নয় এমন। পুরাণ অনুযায়ী, আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস দেবতাদের নিদ্রাকাল। লঙ্কানরেশকে পরাজিত করার উদ্দেশে রামচন্দ্র অকালেই দেবীকে জাগিয়েছিলেন। দেবী প্রসন্ন হন। রামও রাবণকে পরাজিত করেন দেবীর আশীর্বাদে। বাসন্তী পুজোর বদলে ‘অকাল বোধন’ অর্থাৎ শরতের শারদীয় দুর্গাপুজো ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেয়ে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে পরিণত হয়েছে।
অসময় হলেও কেন শরৎকাল দেব-দেবীর আরাধনার শ্রেষ্ঠ সময়?
ঋগবেদের সময়ে এক শরৎ থেকে আর এক শরতে বছর গণনা করা হতো। শরৎ ঋতুতে নতুন বছর আরম্ভ হত। বাজসনেয়ী সংহিতায় রয়েছে, ইষশ্চোর্জশ্চ শারদাবৃতু। ইষ অর্থাৎ আশ্বিন এবং উর্জ অর্থাৎ কার্তিক মাস। আশ্বিন ও কার্তিক, বৈদিক যুগে এই দুই মাস নিয়ে ছিল শরৎকাল। বেদের কালে বলা হতো ‘শারদেন ঋতুনা দেবাঃ’। যার অর্থ, শরৎকালই হচ্ছে দেব-দেবীর আরাধনার শ্রেষ্ঠ সময়। দুর্গা, লক্ষ্মী, কালী, জগদ্ধাত্রী, কার্তিক সারা বছরের সর্বাধিক দেব, দেবীর পুজো এই সময়টাতেই হয়।
দুর্গাপুজোর সময়কাল সম্পর্কে পণ্ডিতগণ বলে গিয়েছেন, ৬ আশ্বিনের আগে নয়। ৬ কার্তিকের পরে নয়। অর্থাৎ বৈদিক যুগের নিয়মানুযায়ী ‘ভরা-শরৎ’ হল রাজসিক উমার আরাধনার উপযুক্ত সময়।
বর্ষার পর পরিবেশ সবুজ হয়ে ওঠে শরতে। বৃষ্টি প্রায় থাকে না। নদ-নদী শান্ত। পথঘাট শুকনো। নতুন করে কোনও এলাকা বানভাসী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। না-শীত, না-গরম মনোরম আবহাওয়া। মাঠ ভর্তি শস্য। ভাদ্রে পচানো পাট বিক্রি করে লক্ষ্মীলাভ হয়েছে, এমন একটি সময় হল শরৎ। খাদ্য, বাসস্থান নিয়ে নিশ্চিন্তি এলেই মানুষের উৎসব, পুজো, পার্বণের প্রয়োজন পড়ে। এই কারণে শরৎ-ই দেব-আরাধনার যথার্থ সময়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।