প্রতীকী চিত্র
সেই পুরাকালের কথা। মা দুর্গাকে অপমান করে কামান্ধ দৃষ্টিতে তাঁকে তখন বিদ্ধ করছে শুম্ভ-নিশুম্ভ। মা নিজেই কিন্তু হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। নিজের অপমানের জবাব নিজেই দিয়েছিলেন তিনি। ছিন্ন করেছিলেন অসুরের আসুরিক চিন্তার ভাণ্ড, তার মুণ্ড। তার পরে মহিষাসুর একই পথ অনুসরণ করলে দুর্গা নিজেই অস্ত্র তুললেন হাতে। একই ভাবে ব্রহ্মার বরে অমর অসুর শ্রেষ্ঠকেও শাস্তি পেতে হয়েছিল।
কিন্তু অপরাধ রক্তবীজের মতো প্রতিপল, অনুপলে মনের মধ্যে অঙ্কুরিত হয়। সামনে সীতা আসুন বা দ্রৌপদী, অপরাধের সে প্রবণতা আজও বর্তমান। কিন্তু তাঁরা আত্মরক্ষার্থে অস্ত্র তুলে নেননি। তাই বোধহয় অসুরেরা নারীকে এত বেশি অপমান করার সুযোগ পায়, সাহস পায়। তাই নারীদের এ বার দশপ্রহরণধারিণী, দশভূজা দশ আয়ুধা, মা দুর্গা হওয়া প্রয়োজন। যিনি মা-ও বটে, আবার সময়ে রণরঙ্গিণীও বটে। দেবতাদের দেওয়া সেই দশ অস্ত্রের মধ্যেই নিহিত সৃষ্টি, পালন ও সংহারের মাহাত্ম্য, আসুন জেনে নিই -
ত্রিশূল/ দাতা মহাদেব- এই মহাজাগতিক মানুষের ত্রিতাপ ও ত্রিগুণ -এর নির্ণায়ক এই ত্রিশূল। তাই ত্রিশূল দিয়েই মহিষাসুরকে বধ করেন মা দুর্গা।
সুদর্শন চক্র/ দাতা শ্রী বিষ্ণু- চক্র ঘূর্ণায়মান কালের প্রতীক। চক্র অর্থাৎ বৃত্ত দৃঢ়তা এবং সংহতির প্রতীক। মা দুর্গার আঙুলকে অক্ষ করে চক্র ঘুরছে। অর্থাৎ সমস্ত কিছুর কেন্দ্রে তিনিই।
পদ্মফুল/ ব্রহ্মা- প্রস্ফুটিত পদ্ম জ্ঞান ও বোধ দর্শায়। উমার হাতে অর্ধ প্রস্ফুটিত পদ্ম মানুষের মনে কুঁড়ি বা সুপ্ত চেতনা হতে ক্রমশ উত্থানের প্রতীক।
তির-ধনুক/ বনদেব ও সূর্যদেব- ধনুকের জ্যা( দড়ি) টেনে শক্তিকে একত্রিত করা হয়। এবং তির সেই শক্তির গতিরূপে ছুটে চলে। অর্থাৎ, মা দুর্গা মহাবিশ্বের সমস্ত শক্তির একত্রিত রূপ। গতি বা জাড্য সবই তিনি।
তলোয়ার/ গণেশ- ধারালো বিচার, বুদ্ধি এবং প্রজ্ঞার প্রতীক। বিচার-বুদ্ধির ধার ও প্রজ্ঞার ভারেই সমাজের সকল বৈষম্য ও অশুভকে খণ্ডিত ও অপসৃত হয়।
বজ্র/ ইন্দ্র- বজ্র কঠিন দৃঢ়তার প্রতীক। বজ্র জেদের প্রতীক। যে জেদ জলদগম্ভীর মেঘকেও বর্ষণে বাধ্য করে।
বর্শা/ অগ্নিদেব- তীক্ষ্ণ ধী শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। ধী শক্তিই ঠিক এবং ভুল-এর মধ্যে পার্থক্য করতে শেখায়।
সাপ/ শেষনাগ- নাগপাশ অস্ত্র আদতে অন্তরে কুণ্ডলীকৃত শুদ্ধ চেতনার প্রতীক।
কুঠার ও বর্ম / বিশ্বকর্মা- কুঠার সাহসের প্রতীক। বৃক্ষকাণ্ডের ন্যায় ভারকে সে ছিন্ন করতে পারে। আর বর্ম স্থির চিন্তন ও অধীত জ্ঞান, যা সব সময়ে আড়াল করে রাখে।
গদা/ যমরাজ - যমরাজের গদা কালদণ্ড একই সাথে আনুগত্য, ভালবাসা, ভক্তি, শক্তি ও বিচারের প্রতীক। শুভ-অশুভের প্রভেদ করে এই গদা।
শঙ্খ - শঙ্খ হল শুভ আহ্বায়ক, যার মঙ্গলধ্বনিতে অশুভ নাশ হয়। হয় শুভ-র সূচনা।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy