গৌরীপুত্র গণেশ হলেন সৌভাগ্য, সুখ, সমৃদ্ধি, সিদ্ধির দেবতা। শুভ কাজে, প্রতিটি পুজোর শুরুতে সিদ্ধিদাতা গণেশের বন্দনা করা হয়। ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী গণেশের জন্মতিথি। স্কন্দ পুরাণ অনুযায়ী, এই তিথিতেই গণেশের জন্ম। গণেশ চতুর্থী মহাসমারোহে পালিত হয় গোটা দেশে। তবে গণেশ আরাধনার আরও একটি চতুর্থী তিথি রয়েছে।
সরস্বতী পুজোর আগের দিন, অর্থাৎ মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে গণেশের পুজো করা হয়। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতেই গণেশের জন্ম হয়েছিল। একে বিনায়ক চতুর্থীও বলা হয়।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের গণেশ খণ্ডে রয়েছে, স্বয়ং বিষ্ণুর ইচ্ছেয় গিরিরাজ-কন্যা পার্বতী ও মহেশ্বরের পুত্র হিসেবে গণেশের জন্ম। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী শ্রীবিষ্ণুকে দেখে মুগ্ধ হয়ে পার্বতী তাঁর মতো পুত্রকামনা করেন। বিষ্ণু দেবীকে ইচ্ছাপূরণের বরদান করেন। এর পরে এক দিন শিব-পার্বতী স্বগৃহে রতিক্রিয়ায় মগ্ন ছিলেন, সেই সময়ে বিষ্ণু বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বেশে ভিক্ষা চাইতে আসেন। পার্বতী তাঁকে ভিক্ষা দিতে গেলে শিবের বীর্যপাত হয়। বিষ্ণু তখন শিশুর বেশে পালঙ্কে আবির্ভূত হন। এ ভাবেই গণেশের জন্ম। দিনটি ছিল মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী।
দক্ষিণ ভারতে, মহারাষ্ট্রের কিছু অংশে এবং পূর্ব ভারতে মাঘ মাসে শ্রীপঞ্চমীর আগের দিন গণেশ চতুর্থী বা বিনায়ক চতুর্থী পালিত হয়। বাংলায় গণেশ পুজোর জন্য এই তিথিটি অধিক জনপ্রিয় ছিল। গোটা বঙ্গদেশে এই তিথিতেই গণেশ পূজিত হতেন। বিভূতিভূষণের কাহিনি অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘অপরাজিত’য় (১৯৫৬) মাঘ মাসে গণেশ পুজোর প্রসঙ্গ এসেছে। অপু তাঁর মাকে চিঠিতে জানায়, ‘কলেজে গণেশপূজায় ছুটি থাকে না। তাছাড়া আগামী মাসে আমার পরীক্ষা।’ চিঠির তারিখ ১৩ পৌষ, ১৩৩৩ সন। অর্থাৎ আসন্ন মাঘে গণেশ পুজোয় কলেজ ছুটি না-থাকার কথাই সম্ভবত অপু তাঁর মাকে জানাচ্ছিলেন বাড়িতে না যাওয়ার কারণ হিসেবে। এটাই প্রমাণ করে মাঘের শুক্ল চতুর্থীতে বাংলায় গণেশ পুজোর প্রচলন ছিল। ধীরে ধীরে তা হ্রাস পেয়েছে। তবে কিছু কিছু বনেদি বাড়িতে আজও মাঘের শুক্ল চতুর্থীতে পুজো পান গণেশ। খাস কলকাতায় ভবানীপুরের মল্লিক বাড়িতে শ্রীপঞ্চমীর আগের দিন সিদ্ধিদাতার পুজো করা হয়।
‘অপরাজিত’ ছবির সেই দৃশ্য
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।