প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner
Adyapeath Kali

অন্নদা ঠাকুরের স্বপ্নাদেশে মিলেছিল দেবী আদ্যার মূর্তি, সেই আদ্যাপীঠেই আজ কালীর আরাধনা

কালীপুজোর আগে কালীসাধনার এক অন্য অধ্যায়— স্বপ্নাদেশ, অলৌকিক কাহিনি আর ভক্তির স্পর্শে গড়ে ওঠা আদ্যাপীঠ

আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ২০:১০
Share: Save:
০১ ২০
দরজায় কড়া নাড়ছে কালীপুজো। বাড়িতে, পাড়ায়, মণ্ডপে মণ্ডপে শুরু হবে প্রস্তুতি। এরই মাঝে বর্তমানে দক্ষিণেশ্বরের অদূরে এক অনন্য তীর্থস্থান আদ্যাপীঠ। যার সঙ্গে জড়িয়ে বেশ কিছু অলৌকিক কাহিনি।

দরজায় কড়া নাড়ছে কালীপুজো। বাড়িতে, পাড়ায়, মণ্ডপে মণ্ডপে শুরু হবে প্রস্তুতি। এরই মাঝে বর্তমানে দক্ষিণেশ্বরের অদূরে এক অনন্য তীর্থস্থান আদ্যাপীঠ। যার সঙ্গে জড়িয়ে বেশ কিছু অলৌকিক কাহিনি।

০২ ২০
গল্পের শুরু শতবর্ষ আগে, ১৯১৫ সালে। জন্মসূত্রে চট্টগ্রামের ব্রাহ্মণ অন্নদাচরণ ভট্টাচার্য তখন কলকাতায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় বেশ নাম করেছেন।

গল্পের শুরু শতবর্ষ আগে, ১৯১৫ সালে। জন্মসূত্রে চট্টগ্রামের ব্রাহ্মণ অন্নদাচরণ ভট্টাচার্য তখন কলকাতায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় বেশ নাম করেছেন।

০৩ ২০
কবিরাজি পড়ে সাতটি পেটেন্ট ওষুধও আবিষ্কার করে ফেললেন অন্নদাচরণ। কিন্তু শুধু বিজ্ঞান নয়, তাঁর মনে ছিল দেবী কালী এবং শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি গভীর ভক্তি।

কবিরাজি পড়ে সাতটি পেটেন্ট ওষুধও আবিষ্কার করে ফেললেন অন্নদাচরণ। কিন্তু শুধু বিজ্ঞান নয়, তাঁর মনে ছিল দেবী কালী এবং শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি গভীর ভক্তি।

০৪ ২০
এই অন্নদাচরণই পরবর্তী কালে অন্নদা ঠাকুর নামে পরিচিত হন।

এই অন্নদাচরণই পরবর্তী কালে অন্নদা ঠাকুর নামে পরিচিত হন।

০৫ ২০
সফল চিকিৎসক হলেও তাঁর জীবনে ঘটতে থাকে নানা অলৌকিক ঘটনা। কখনও দেখেন চারটি কুমারী কন্যা দেবীর মূর্তি নিয়ে কলকাতার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, যা তিনি ছাড়া আর কারও চোখে পড়ছে না।

সফল চিকিৎসক হলেও তাঁর জীবনে ঘটতে থাকে নানা অলৌকিক ঘটনা। কখনও দেখেন চারটি কুমারী কন্যা দেবীর মূর্তি নিয়ে কলকাতার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, যা তিনি ছাড়া আর কারও চোখে পড়ছে না।

০৬ ২০
আবার কখনও স্বপ্নে দেখেন, এক সন্ন্যাসী এসে মাথা কামিয়ে গঙ্গা স্নানের আদেশ দিচ্ছেন, যা শুনে প্রথমটায় তিনি রেগেই যান।

আবার কখনও স্বপ্নে দেখেন, এক সন্ন্যাসী এসে মাথা কামিয়ে গঙ্গা স্নানের আদেশ দিচ্ছেন, যা শুনে প্রথমটায় তিনি রেগেই যান।

০৭ ২০
এর পরে স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর স্বপ্নে এসে মাথা মুণ্ডন করে গঙ্গা স্নানের নির্দেশ দিলেন। সেই আদেশ উপেক্ষা করার সাহস পেলেন না অন্নদা ঠাকুর।

এর পরে স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর স্বপ্নে এসে মাথা মুণ্ডন করে গঙ্গা স্নানের নির্দেশ দিলেন। সেই আদেশ উপেক্ষা করার সাহস পেলেন না অন্নদা ঠাকুর।

০৮ ২০
শ্রীরামকৃষ্ণের আদেশেই এক দিন তিনি গেলেন ব্রিটিশ-নির্মিত ইডেন গার্ডেন্সের মনোরম বাগানে। নির্দেশ ছিল— যেখানে নারকেল গাছ আর পাকুড় গাছ একসঙ্গে আছে, সেখানে ঝিলের নীচে কালী মূর্তি খুঁজতে হবে।

শ্রীরামকৃষ্ণের আদেশেই এক দিন তিনি গেলেন ব্রিটিশ-নির্মিত ইডেন গার্ডেন্সের মনোরম বাগানে। নির্দেশ ছিল— যেখানে নারকেল গাছ আর পাকুড় গাছ একসঙ্গে আছে, সেখানে ঝিলের নীচে কালী মূর্তি খুঁজতে হবে।

০৯ ২০
নির্দেশ মতো তিন সঙ্গীকে নিয়ে সেখানে গিয়ে ১৮ ইঞ্চি উঁচু, একখণ্ড কষ্টিপাথরের এক অপরূপ মূর্তি পেলেন অন্নদা ঠাকুর।

নির্দেশ মতো তিন সঙ্গীকে নিয়ে সেখানে গিয়ে ১৮ ইঞ্চি উঁচু, একখণ্ড কষ্টিপাথরের এক অপরূপ মূর্তি পেলেন অন্নদা ঠাকুর।

১০ ২০
সে দিন ছিল রামনবমী তিথি। মূর্তির চোখদু’টিতে বসানো ছিল ঝকঝকে রত্ন, কোথাও সামান্যতম চিড় ধরেনি।

সে দিন ছিল রামনবমী তিথি। মূর্তির চোখদু’টিতে বসানো ছিল ঝকঝকে রত্ন, কোথাও সামান্যতম চিড় ধরেনি।

১১ ২০
মূর্তি পেয়ে অন্নদা ঠাকুর সযত্নে তার পুজো শুরু করলেন। দেবীর অলৌকিক আবির্ভাবের কথা ছড়িয়ে পড়তেই ভক্তের ভিড় জমল।

মূর্তি পেয়ে অন্নদা ঠাকুর সযত্নে তার পুজো শুরু করলেন। দেবীর অলৌকিক আবির্ভাবের কথা ছড়িয়ে পড়তেই ভক্তের ভিড় জমল।

১২ ২০
এমনকি, কলকাতা জাদুঘরের লোকেরা এসে সেই মূর্তি দেখে তাকে অতি প্রাচীন বুদ্ধ-পরবর্তী আমলের বলে রায় দিলেন এবং চড়া দামে কেনার প্রস্তাব দিলেন। সে প্রস্তাব অবশ্য ফিরিয়ে দেন অন্নদা ঠাকুর।

এমনকি, কলকাতা জাদুঘরের লোকেরা এসে সেই মূর্তি দেখে তাকে অতি প্রাচীন বুদ্ধ-পরবর্তী আমলের বলে রায় দিলেন এবং চড়া দামে কেনার প্রস্তাব দিলেন। সে প্রস্তাব অবশ্য ফিরিয়ে দেন অন্নদা ঠাকুর।

১৩ ২০
এর পরে শুরু হয় আরও এক চরম পরীক্ষা। স্বয়ং দেবী স্বপ্নে এসে তাঁকে বললেন—তাঁর এই মূর্তি গঙ্গায় বিসর্জন দিতে হবে! যে মাকে এত কষ্ট করে তুলে আনলেন, তাঁকে ফের জলে ফেলে দেবেন? এ কেমন আদেশ!

এর পরে শুরু হয় আরও এক চরম পরীক্ষা। স্বয়ং দেবী স্বপ্নে এসে তাঁকে বললেন—তাঁর এই মূর্তি গঙ্গায় বিসর্জন দিতে হবে! যে মাকে এত কষ্ট করে তুলে আনলেন, তাঁকে ফের জলে ফেলে দেবেন? এ কেমন আদেশ!

১৪ ২০
টানা তিন রাত দেবী স্বপ্নে এসে আদেশ করলেন, অনুরোধ করলেন, আবার ভয়ও দেখালেন। দেবী বললেন— শুধু শাস্ত্র মেনে নয়, সহজ সরল প্রাণের ভাষায় কেউ যদি 'মা খাও, মা পরো' বলে তাঁকে নিবেদন করে, সেটাই তাঁর আসল পুজো। স্পষ্ট জানালেন, তিনি শুধু এক জায়গায় আটকে থাকতে চান না, বরং প্রতিটি ভক্তের হৃদয়ে পূজিত হতে চান।

টানা তিন রাত দেবী স্বপ্নে এসে আদেশ করলেন, অনুরোধ করলেন, আবার ভয়ও দেখালেন। দেবী বললেন— শুধু শাস্ত্র মেনে নয়, সহজ সরল প্রাণের ভাষায় কেউ যদি 'মা খাও, মা পরো' বলে তাঁকে নিবেদন করে, সেটাই তাঁর আসল পুজো। স্পষ্ট জানালেন, তিনি শুধু এক জায়গায় আটকে থাকতে চান না, বরং প্রতিটি ভক্তের হৃদয়ে পূজিত হতে চান।

১৫ ২০
ষোলোটি কারণ দেখিয়ে দেবী যখন তাঁর ইচ্ছা জানালেন, অন্নদা ঠাকুর আর দ্বিমত করলেন না। তাঁর আদেশ মেনে পরদিন সকালে তিনি কষ্টিপাথরের সেই মূর্তির ছবি তুললেন— যা আজও আদ্যাপীঠের মূল ছবি। এর পরে বিজয়া দশমীর দিনে মাঝগঙ্গায় বিসর্জন দিলেন সেই মূর্তি, যা আজও গঙ্গাতেই বিরাজমান বলে বিশ্বাস ভক্তদের।

ষোলোটি কারণ দেখিয়ে দেবী যখন তাঁর ইচ্ছা জানালেন, অন্নদা ঠাকুর আর দ্বিমত করলেন না। তাঁর আদেশ মেনে পরদিন সকালে তিনি কষ্টিপাথরের সেই মূর্তির ছবি তুললেন— যা আজও আদ্যাপীঠের মূল ছবি। এর পরে বিজয়া দশমীর দিনে মাঝগঙ্গায় বিসর্জন দিলেন সেই মূর্তি, যা আজও গঙ্গাতেই বিরাজমান বলে বিশ্বাস ভক্তদের।

১৬ ২০
পরে স্বপ্নে দেবী অন্নদা ঠাকুরকে 'আদ্যশক্তি' এবং 'আদ্যা মা' রূপে পূজিত হওয়ার নির্দেশ দেন এবং আদ্যাস্তোত্র রচনা করে দেন।

পরে স্বপ্নে দেবী অন্নদা ঠাকুরকে 'আদ্যশক্তি' এবং 'আদ্যা মা' রূপে পূজিত হওয়ার নির্দেশ দেন এবং আদ্যাস্তোত্র রচনা করে দেন।

১৭ ২০
শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে সন্ন্যাস দীক্ষা পেলেও মোক্ষ চাইলেন না অন্নদা ঠাকুর। চোখের সামনে হাজার হাজার দুঃখী মানুষকে দেখে তাঁর সংকল্প ছিল, ‘মুক্তি চাই না। বরং লক্ষ নরকযন্ত্রণা সহ্য করে পরের ভাল করব: এই আমার ধর্ম।’ এর পরে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে আদ্যা মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব দেন। ১৯২১ সালে কমিটি তৈরি হয় এবং ১৯২৮ সালে প্রায় ১৪ একর জমিতে মন্দিরের শিলান্যাস হয়।

শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে সন্ন্যাস দীক্ষা পেলেও মোক্ষ চাইলেন না অন্নদা ঠাকুর। চোখের সামনে হাজার হাজার দুঃখী মানুষকে দেখে তাঁর সংকল্প ছিল, ‘মুক্তি চাই না। বরং লক্ষ নরকযন্ত্রণা সহ্য করে পরের ভাল করব: এই আমার ধর্ম।’ এর পরে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে আদ্যা মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব দেন। ১৯২১ সালে কমিটি তৈরি হয় এবং ১৯২৮ সালে প্রায় ১৪ একর জমিতে মন্দিরের শিলান্যাস হয়।

১৮ ২০
এই আদ্যাপীঠের মূল কাঠামোটি তিনটি মন্দিরকে ঘিরে— নীচে শ্রীরামকৃষ্ণ, মাঝে আদ্যা মা এবং উপরে রাধা-কৃষ্ণ, আর এই সব কিছুকে ঘিরে রয়েছে পবিত্র 'ওঁ' অক্ষরটি। অন্নদা ঠাকুরের নির্দেশ ছিল— মন্দিরের টাকায় ছেলে ও মেয়েদের জন্য আশ্রম, স্কুল, হাসপাতাল হবে। তাঁর সেই নির্দেশ আজও ব্রহ্মচারী ও শিষ্যরা পালন করে চলেছেন।

এই আদ্যাপীঠের মূল কাঠামোটি তিনটি মন্দিরকে ঘিরে— নীচে শ্রীরামকৃষ্ণ, মাঝে আদ্যা মা এবং উপরে রাধা-কৃষ্ণ, আর এই সব কিছুকে ঘিরে রয়েছে পবিত্র 'ওঁ' অক্ষরটি। অন্নদা ঠাকুরের নির্দেশ ছিল— মন্দিরের টাকায় ছেলে ও মেয়েদের জন্য আশ্রম, স্কুল, হাসপাতাল হবে। তাঁর সেই নির্দেশ আজও ব্রহ্মচারী ও শিষ্যরা পালন করে চলেছেন।

১৯ ২০
এমনকি এই পীঠের ভোগও বিশেষ ধরনের— সাড়ে ২২ সের চালের ভোগ আদ্যার জন্য, রাধাকৃষ্ণের জন্য সাড়ে ৩২ সের এবং শ্রীরামকৃষ্ণের জন্য সাড়ে ১২ সের চালের ভোগ রান্না হয়, যা পঞ্চব্যঞ্জনে নিবেদন করা হয়। শুধু পরমান্ন ছাড়া অন্য কোনও ভোগ মন্দিরের ভিতরে যায় না।

এমনকি এই পীঠের ভোগও বিশেষ ধরনের— সাড়ে ২২ সের চালের ভোগ আদ্যার জন্য, রাধাকৃষ্ণের জন্য সাড়ে ৩২ সের এবং শ্রীরামকৃষ্ণের জন্য সাড়ে ১২ সের চালের ভোগ রান্না হয়, যা পঞ্চব্যঞ্জনে নিবেদন করা হয়। শুধু পরমান্ন ছাড়া অন্য কোনও ভোগ মন্দিরের ভিতরে যায় না।

২০ ২০
রোজ ভোরে, দুপুরে আর সন্ধ্যায় খোলে মন্দিরের দরজা। শিয়ালদহ থেকে দক্ষিণেশ্বর, সেখান থেকে রিক্সা বা টোটো করে মিনিট কুড়িতেই পৌঁছে যাওয়া যায় এই পবিত্র স্থানে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।

রোজ ভোরে, দুপুরে আর সন্ধ্যায় খোলে মন্দিরের দরজা। শিয়ালদহ থেকে দক্ষিণেশ্বর, সেখান থেকে রিক্সা বা টোটো করে মিনিট কুড়িতেই পৌঁছে যাওয়া যায় এই পবিত্র স্থানে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy