প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

তিন কিংবদন্তিতে ঘেরা কোচবিহার রাজবাড়ির বড় দুর্গা

কোচবিহার রাজবাড়ির পুজো ঘিরে আজও সাধারণ মানুষজনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৩৪

'রাজার শহর' কোচবিহার। কোচ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা বিশ্বসিংহের পুত্র মহারাজা নরনারায়ণ এবং তাঁর ভাই বীর যোদ্ধা কোচ রাজবংশের সেনাপতি চিলা রায় মণিপুর, জয়ন্তিয়া, ত্রিপুরা, শ্রীহট্ট রাজ্য অবধি জয় করেছিলেন। পূর্বে বর্মার সীমান্তবর্তী দক্ষিণে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত ছিল তার সীমানা। মহারাজা নরনারায়ণের সময়কালে কোচ সাম্রাজ্যের শৌর্য-বীর্যের খ্যাতি সর্বাধিক বিস্তৃতি পায়।

কোচ রাজবংশে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয় বিশ্বসিংহের আমলে। দুর্গা এখানে 'বড় দুর্গা' নামে পরিচিত। দেবীকে ঘিরে হাজারো কিংবদন্তী ছড়িয়ে কোচবিহার জুড়ে। যার মধ্যে তিনটি কাহিনি জনপ্রিয়।

প্রথমটি বলে, কোচ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বসিংহের নাকি জন্ম হয়েছিল শিবের ঔরসে। মহাদেবের সন্তান হিসাবে তিনি রাজক্ষমতা প্রাপ্ত হন। স্বয়ং মহাদেব রাজাকে একটি 'হনুমান দণ্ড' প্রদান করেন, যেটিকে এখনও বিভিন্ন সময়ে পুজো করা হয়। জয়নাথ মুন্সীর রাজোপখ্যান থেকে জানা যায়, বিশ্বসিংহের বাবা হরিদাস চিকনার জঙ্গলে পার্শ্ববর্তী ভূঁইয়া তুর্ক কোতোয়ালের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হন। বন্দি পিতাকে উদ্ধার করতে শিশু বিশ্বসিংহ জঙ্গলে ঢুকে এক রমণীর কাছ থেকে একটি 'কৃষ্ণপট' লাভ করেন। তার পরেই তিনি তুর্ক কোতোয়ালকে পরাজিত করে রাজক্ষমতার অধিকারি হন। সেই 'কৃষ্ণপট' বা 'কৃষ্ণপট দেহড়’টি আজও কোচবিহারের মদনমোহন বাড়িতে রক্ষিত রয়েছে।

দ্বিতীয় কাহিনিটি এ রকম-- বিশ্বসিংহ ওরফে বিশু, শিশু বয়সে চিকনার জঙ্গলে তেরো জন বালকবন্ধু-সহ একটি ময়নাগাছের তলায় এক টুকরো ডাল পুঁতে দেবীর আরাধনায় লিপ্ত হন।

পূজা শেষে প্রতীকী বলি হিসেবে এক বালক বন্ধুকে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে কুশ ঘাস দিয়ে তার গলায় কোপ দিলে বালকের শিরচ্ছেদ ঘটে। উপস্থিত বালকেরা তাতে ঘাবড়ে যায়। তখন দেবী আবির্ভূত হন। সেই থেকে দেবীপুজোর সাথে জুড়ে যায় ময়না কাঠ। দেবীর কাঠামো তৈরির জন্য ময়না কাঠ আসে পার্শ্ববর্তী গ্রাম ডোডোয়ার হাট থেকে।

তৃতীয় কাহিনি অনুযায়ী, মহারাজা নরনারায়ণের ভাই সেনাপতি শুক্লধ্বজ ওরফে চিলা রায় নিজে রাজা হওয়ার জন্য নরনায়ারণকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। সেই অভিসন্ধি নিয়ে এক দিন প্রকাশ্য রাজসভায় তরবারি নিয়ে হাজির হন তিনি। দেখেন, স্বয়ং দেবী দুর্গা মহারাজের পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন! চিলা রায় এই দৃশ্য দেখে সংজ্ঞা হারান। জ্ঞান ফিরে এলে তিনি এই ঘটনা মহারাজাকে ব্যক্ত করেন। মহারাজা নরনারায়ণ সব শুনে ক্ষুব্ধ না হয়ে মাতৃমূর্তি দর্শনে আকুল হন। তিন দিন-তিন রাত ধ্যানস্থ থাকার পরে মহামায়ার দর্শন পান রাজা। তার পরে মা ভবানীকে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

মহারাজা বিশ্ব সিংহের পাওয়া ‘কৃষ্ণপট' এবং মহারাজা নরনারায়ণের ধ্যানদৃষ্ট মাতৃমূর্তির আঙ্গিক একই, যা আজও মৃন্ময়ী মূর্তিতে 'বড়দেবী' রূপে পূজিত হয়।

কোচবিহার রাজবাড়ির পুজো ঘিরে আজও সাধারণ মানুষজনের মনমধ্যে হাজারো প্রশ্ন। দীর্ঘ দিন ধরে কোচবিহারের দুর্গাপুজো এবং রাজবাড়ি নিয়ে গবেষণা করছেন অরূপজ্যোতি মজুমদার। তিনি কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক। রাজবাড়ির পুজো এবং দেবীমূর্তি ঘিরে চলে আসা কিংবদন্তি প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত - "পাঁচশো বছর আগে উত্তর পূর্ব ভারতের এই অঞ্চলে সংস্কৃতিকরণ সফল ভাবে ঘটে । কামতাপুরের দেবী গোসাইনি বা দেবী-বাড়ির বড়দেবীর আবাহন ভারতের মূল ধারায় নানা জনগোষ্ঠীর আত্তীকরণের পরম্পরাকে তুলে ধরে।"

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Cooch Behar Rajbari Durga Puja 2023 Durga Puja Celebration Heritage Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy