প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

তর্পণ অর্থাৎ তৃপ্তিদান! পিতৃপুরুষগণ তৃপ্ত হলে তাঁদের আশীর্বাদে উপকৃত হয় উত্তরপুরুষ

তর্পণ কী? কেন? তর্পণ কত রকম হয়? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর দিতেই এই নাতিদীর্ঘ রচনা।

শ্রী মণি ভাস্কর

শ্রী মণি ভাস্কর

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:০৯

মহাভারত অনুসারে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মৃত্যুর পর স্বর্গে গেলে কর্ণকে খাদ্য হিসাবে দেওয়া হয় স্বর্ণ, রত্ন-মণিমাণিক্য।

এর কারণ জানতে চাইলে দেবরাজ ইন্দ্র(মতান্তরে যম) বলেন, জীবিত অবস্থায় সূর্য-পুত্র বিস্তর দান করলেও তা ছিল শুধুই স্বর্ণ ও রত্ন। তিনি কখনও কাউকে খাদ্য এবং জল দান করেননি। কর্ণ স্বীকার করেন, এ বিষয়ে তিনি অবহিত ছিলেন না, এই ত্রুটি অনিচ্ছাকৃত। ভুল সংশোধন করতে ভাদ্র পূর্ণিমার পরবর্তী প্রতিপদ থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত ১৬ দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিয়ে পাপস্খলন করেন কর্ণ। এই সময়কালই পিতৃপক্ষ। যার শেষ মহালয়ায়। দেবীপক্ষের সূচনাও এ দিন। বিশ্বাস, এ দিন পূর্বপুরুষদের আত্মাদের অন্ন-জল গ্রহণের দিন। আসলে, যেমন আমাদের পৃথিবী বা মৃত্যুলোক তেমনই দেবলোক, বৈকুন্ঠলোক, শিবলোক, অন্তরীক্ষলোক, পিতৃলোক, স্বর্গলোক— এরূপ নানাবিধ লোক আমাদের শাস্ত্রে উল্লিখিত আছে।

পিতৃলোকের এক দিন, মনুষ্যলোকের এক বছরের সমান। আমাদের যেমন প্রতি দিন নূন্যতম একবার খাদ্যের প্রয়োজন, পিতৃপুরুষদেরও (প্রয়াত আত্মা, যাদের পুনর্জন্ম হয়নি) তাই। পুরাণ মতে কন্যারাশিতে সূর্য অবস্থান করাকালীন অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপুরুষগণ পিতৃলোক ত্যাগ করে মহান আলয়ে আসেন, যা পৃথিবীর কাছাকাছি। এই সময় তাঁদের খাদ্যগ্রহণের সময়। এ দিন জল, তিল, অন্ন, দুগ্ধ ইত্যাদি পেয়ে তাঁরা তৃপ্ত হন।

তর্পণ অর্থাৎ তৃপ্তিদান। শুধুমাত্র মাতৃকূল বা পিতৃকূল নয়, হিন্দুশাস্ত্রে নানা রকম তর্পণের উল্লেখ রয়েছে, দেব তর্পণ, গুরু তর্পণ, মনুষ্য তর্পণ, ঋষি তর্পণ, দিব্যপিতৃ তর্পণ, যম তর্পণ, ভীষ্ম তর্পণ, পিতৃ তর্পণ, মাতৃ তর্পণ, অগ্নিদগ্ধাদি তর্পণ, রাম তর্পণ ও লক্ষণ তর্পণ। যিনি অপুত্রক বা বন্ধুবান্ধবহীন অবস্থায় পরলোক গমন করেছেন— সমস্ত মানুষ, পশু, কীটপতঙ্গ, তরু-বৃক্ষ, যক্ষ-গন্ধর্ব-রাক্ষস-পিশাচ, প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে তর্পণের বিধান রয়েছে।

এক কথায়, সমগ্র বাস্তুতন্ত্রেই তৃপ্তিসাধন করানোর এক মহান প্রচেষ্টা হল মহালয়ার তর্পণ। এই বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হলে, যখন মানুষের আগ্রাসনে কোনও প্রাণী বা উদ্ভিদ পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়, তা মানুষের জীবনীশক্তিকে নষ্ট করার ভয়াবহতা ডেকে আনতে পারে। তেমনই যে আত্মারা পিতৃলোকে রয়েছেন, তাঁদের শান্তিপ্রদান করা না হলে, তাঁদের থেকেও ঋণাত্মক কম্পাঙ্ক আমাদের জীবনে নেমে আসতে পারে। দুই তরফে ভারসাম্য রাখার জন্যই এই তর্পণের বিধান হিন্দু শাস্ত্রে রয়েছে।

একটি নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের বাইরের শব্দ আমরা শুনতে পাই না। সব কিছু দেখতেও পাই না। মানুষের দৃশ্য জগতের বাইরেও রয়েছে অদৃশ্য জগৎ। সেই জগতে রয়েছেন আমাদের পিতৃপুরুষরা। উপনিষদের ঋষিরা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, পিতৃপুরুষদের তৃপ্তিসাধন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পুরাণে বলা হয়েছে, পিতৃপুরুষগণ তৃপ্ত হলে তাঁদের আশীর্বাদে মানুষের জীবদ্দশায় আয়ু-ধন-সম্পত্তি রক্ষা হয়। জ্ঞান ও শান্তি লাভ হয়।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

tarpana
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy