প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

উত্তরবঙ্গের লোককথার ‘মাসান’ আসলে কে, দেবতা না অপদেবতা?

চেনা যাক দেবী কালীর এক ভয়ঙ্কর লৌকিক সন্তানকে, যাঁকে তুষ্ট না রাখলে, সাড়ে সর্বনাশ। মায়ের মতোই সেই সন্তানও পুজো পান মঙ্গল, শনিবার অথবা অমাবস্যায়।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৪২
সংগৃহীত চিত্র।

সংগৃহীত চিত্র।

চিরায়ত বিশ্বাসে আদ্যাশক্তি মহামায়া/ মাতা কালিকার তত্ত্বকথা, পৌরাণিক কাহন অনেকেরই জানা।

এ বারে বরং জানা হোক লৌকিক কথা। চেনা যাক দেবীর এক ভয়ঙ্কর লৌকিক সন্তানকে, যাঁকে তুষ্ট না রাখলে, সাড়ে সর্বনাশ। মায়ের মতোই সেই সন্তানও পুজো পান মঙ্গল, শনিবার অথবা অমাবস্যায়। তিনি আর কেউ নন, উত্তরবঙ্গের অন্যতম লৌকিক দেবতা ‘মাসান ঠাকুর’। যাকে প্রেত দেবতা বা অপদেবতা জ্ঞানেও পুজো করা হয়। মূলত ভাদ্র ছাড়াও সারা বছর, এমনকী দীপান্বিতা অমাবস্যাতেও কোথাও কোথাও পুজো পান তিনিও।

।।জন্মকথা।।

” নাচিতে নাচিতে কালী,

চুইয়া পড়ে ঘাম,

তাতে সৃষ্টি হইল,

এ জলা মাসান। ”

রাজবংশীদের লোকবিশ্বাস বলে, স্নানরতা প্রকৃতি বা দেবী কালীকে দেখে ধর্মরাজ বা ধর্মঠাকুর উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ধাতুর স্খলন হয় নদীতে। সেই নদীতেই মাসান দেবতার জন্ম। তাই অনেক ক্ষেত্রেই মাছ তাঁর সহচর।

কোচবিহারে রাজবংশী জনগোষ্ঠীর একাংশ বিশ্বাস করে, কালীর ১৮ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান মাসান।

আর ধর্মঠাকুর হলেন বাস্তুর দেবতা। স্থাবরজঙ্গমাদি সব তাঁর। খুব সোজা ভাবে বললে, জীবিতের পালনীয় কর্তব্য ও ধর্মের ধারক তিনি। এক সর্বোত্তম দেব।

ভাদ্রমাসের শনিবারে মাসান ঠাকুরের জন্ম। জলে জন্ম, তাই ধাইমা যথারীতি মাসানের নাড়িকুণ্ডলী জলে ফেলে দেয়। সেখান থেকে কলমী শাকের জন্ম হয়। রাজবংশীদের একাংশ মাসান বাবাকে সম্মান জানাতে ভাদ্র মাসে কলমীশাক খায় না। এ প্রসঙ্গে একটি ছড়া বিশেষ ভাবে প্রচলিত –

” ভাদর মাসে কলমু শাকে যে বা জন খায়।

মাসানের নাড়ি সে অবশ্য চবায়।”

।।চরিত্র চিত্রণ।।

মাসান দেবতা সর্ব ক্ষেত্রেই বিকট দর্শন। কোথাও বুকেই চোখ,মুখ, প্রলম্বিত জিহ্বা। কোথাও ইয়া ভুঁড়ি, ক্রুর দৃষ্টি। কোথাও মাছের পিঠে আসীন। কোথাও শূকরপৃষ্ঠে। পুজোয় ভক্তির চেয়ে ভয় ও তুষ্টির দিকে লক্ষ্য থাকে বেশি। মোট ১৮ প্রকার মাসান পুজো পান এই বঙ্গে। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই যেটা লক্ষ্য করা যায়, সেটা হল অপরাধ বা অন্যায় করলে বা তাদের একা বাগে পেলে মাসান তাদের ধরেন বা তাদের উপরে ভর করেন। দিন বা রাত, নিঝুম দুপুর বা ভর সন্ধ্যায় নজরে পড়ে গেলেই হল।

১) বাড়ীকা মাসান— লোকালয়ের বাঁশবন বা জঙ্গলে বাস করেন।

২) তিসিলা মাসান— জলে বাস করেন।

৩) ঘাটিয়া মাসান— নদী বা পুকুরের ঘাটে থাকেন।

৪) চুঁচিয়া মাসান— মাঠে/ঘাটে থাকেন।

৫) চালান মাসান— পথ পার্শ্ববর্তী গাছে বাস করেন।

৬) বহিতা মাসান— ভেলা নষ্ট হলে যে সব কলাগাছ জলে ভেসে যায় সেগুলিতে বাস করেন এবং ভুলক্রমে সেই কলাগাছে স্পর্শ করলে বা পা দিলে ভর করেন।

৭) কাল মাসান— শ্মশানে বাস করেন।

৮) কুহুলীয়া মাসান— গাছে বাস করেন এবং কুহুলীর (কোকিলের) মতো ডাকেন এবং সেই ডাকে

সাড়া দিলে মানুষের বিপদ আসে।

৯) নাঙ্গা মাসান— সর্বদা উলঙ্গ থাকে। একে দর্শন মাত্রই মানুষের মৃত্যু হয়।

১০) বিষুয়া মাসান— ভর করলে মানুষের সর্বাঙ্গে বিষময় বেদনা হয়।

১১) ওবুয়া মাসান— ভর করলে রোগী কেবল বমি করে।

১২) শুকনা মাসান— ভর করলে রোগী শীর্ণ হতে থাকে।

১৩) ভুলা মাসান— মাঠে বাস করেন। রাত্রে পথ ভোলান।

১৪) ড্যামশা মাসান – ঘন বনে বাস করেন।

১৫) অঙ্গিয়া মাসান— অর্থাৎ রঙ্গিয়া বা বহুরূপী মাসান।

১৬) ছলনার মাসান

১৭) ন্যাড়া মাসান

১৮) কলি মাশান— গ্রামের মধ্যেই নির্জনে থাকেন। অনেক বেশি ক্ষতিকর।

মাসান আক্রান্ত ব্যক্তি উনুনের মাটি, কাঠকয়লা, দেওয়ালের কাঁকর আঁচড়ে খায়। প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ঘুম এলেই বিকট মাছ ধরার স্বপ্ন দেখে। এ ভাবেই রোগী ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েন। মাশানের কোপদৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আক্রান্তের বাড়ির লোক শনি-মঙ্গলবারে কিংবা অমাবস্যায় বাবার থান বা মন্দিরে গিয়ে বড় করে পুজো দেয়।

উপকরণও অদ্ভুত! চালভাজা, সাটিমাছ পোড়া, ঝাঁটার কাঠি, কলা, দুধ ও ঘি।

সব শেষে কালীর লৌকিক সন্তান মাসান বাবার তুষ্ট মন্ত্র,

” নমঃ নমঃ মাসান দেব,

নমঃ কালী পুত্র

কৃষ্ণ আদেশ পায়া

তোক করিম যে তুষ্ট।।”

তথ্যসূত্র ~

উত্তরবঙ্গে রাজবংশী ক্ষত্রিয় জাতির পূজা-পার্বণ- গিরিজাশংকর রায়।

Rajbanshis of North bengal - চারুচন্দ্র সান্যাল

উত্তরবঙ্গ প্রবাসের ক্ষেত্রসমীক্ষা

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Kali Puja 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy