প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

কলকাতা কেন ‘কালীক্ষেত্র’ নামে পরিচিত? আকবর থেকে বল্লাল সেন সবার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই ইতিহাস

মহানগরী কেন পরিচিত কালীক্ষেত্র হিসাবে? কবে থেকে তার এই পরিচয়? জেনে নেওয়া যাক দু’হাজার বছর প্রাচীন সেই গল্প।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৪৯
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কল্লোলিনী তিলোত্তমা, মহানগরী, ‘সিটি অফ জয়’ – নানা মানুষ নানা নামে ডাকেন তাঁদের প্রাণের শহর কলকাতাকে। তবে, কলকাতার আরও একটি পরিচিত নাম রয়েছে— কালীক্ষেত্র কলকাতা। রামকৃষ্ণ দেব, বামাখ্যাপা – বহু কালী সাধকের ভূমি এই নগরী। দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, আদ্যাপীঠ – বহু জাগ্রত শক্তিপীঠ ছড়িয়ে রয়েছে এই শহরে।

যেমন শিবক্ষেত্র বলতেই মনে হয় কাশী বিশ্বনাথের বেনারস বা বারাণসী, কৃষ্ণ নাম নিলেই মনে হয় মথুরা- বৃন্দাবন, তেমনই মহামায়া কালীকে পেতে যুগে যুগে ভক্ত— সাধকেরা এসেছেন এই শহর, কলকাতায়।

কালীক্ষেত্র কলকাতা। কেন মা কালীর নামে নামাঙ্কিত এই জনপদ? নথিবদ্ধ উল্লেখ এবং পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ বলছে দু’হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অঞ্চল পরিচিত কালীক্ষেত্র হিসেবে।

প্রায় দু’হাজার বছর আগে সরস্বতী ও আদিগঙ্গায় বাঙালি বণিকরা বানিজ্য করতে যেতেন সিংহল, যবদ্বীপ, মালদ্বীপ, সুবর্ণদ্বীপ, ক্রীট, গ্রীস, রোম, মিশরে; সেই সময়ে এই শহরতলির জনপদটি কী নামে পরিচিত ছিল? সেই উত্তর রয়েছে গ্রীক দার্শনিক গণিতজ্ঞ টলেমির বিবরণে।

তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী, এই জনপদটির নাম ছিল ‘কলিগ্রামাম’ (Colygrammam); যার বাংলা করলে হয় কালীগ্রাম। এই নামটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আজ থেকে দু’হাজার বছর আগেও আমাদের জাতীয় জীবনে কালীনাম এতটাই প্রাসঙ্গিক ছিল যে জনপদের নাম ছিল কালীর নামে।

কালীঘাটের মায়ের মূর্তিটি বহু প্রাচীন শিল্পরীতির নিদর্শন বহন করে। মূর্তির হাত সে যুগে পূর্ণাঙ্গ হত না। কাঁধ থেকে দু’দিকে সামান্য প্রসারিত হত। সুগোল মুখমণ্ডলের দু’দিকে চক্ষুদ্বয় সুবিশাল হত। কলেবর প্রায়ই কোমর পর্যন্ত হত।

যাঁরা হরপ্পা সভ্যতার টেরাকোটা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তাঁরা সবাই বুঝতে পারবেন যে আজকের পুরীধামের জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা মূর্তিকল্পনার সঙ্গে আশ্চর্য মিল আছে আছে এই মূর্তির। পালযুগে এই স্থান সম্রাট দেবপালের পুত্র যোগীপাল চৌরঙ্গীনাথের সাধনভূমি ছিল। কালীঘাট যাওয়ার পথটি আজও তাঁর সমাধির পাশ দিয়েই চৌরঙ্গী রোড নামে এগিয়ে গেছে।

সেনযুগে কালীঘাটের নবনির্মাণের সাথে বল্লাল সেনের নাম জড়িয়ে আছে। নবদ্বীপের বল্লাল ঢিবি কালীযন্ত্রের আকারে নির্মিত। এই কালীক্ষেত্র আইন-ই-আকবরীর সময়ে ‘কালীকোটা’ নামে পরিচিত ছিল, যা থেকে আজকের কলকাতা নামের উৎপত্তি। বঙ্গভূমির বারো ভুঁইয়াদের শিরোমণি মহারাজা প্রতাপাদিত্যের একাধিক দুর্গ ছিল কলকাতায়, আজকের শ্যামনগরে, বাগবাজারে। তিনি ছিলেন মা যশোরেশ্বরী কালীর সাধক। কালীঘাট মন্দিরের পুনর্নির্মাণের কাহিনীতে তাঁর এবং তাঁর কাকা বসন্ত রায়ের নাম জড়িয়ে আছে।

এ বার আসা যাক সতীপীঠ প্রসঙ্গে। সতীপীঠ বিষয়টির সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। খেয়াল করলে দেখা যাবে একান্ন সতীপীঠের বেশিরভাগই বৃহৎবঙ্গে অবস্থিত।

 দক্ষিণেশ্বরের পুরনো ছবি

দক্ষিণেশ্বরের পুরনো ছবি

এ ছাড়া ভারতের কিছু জায়গায় এবং পাকিস্তানেও সতীপীঠ পাওয়া যায়। আর প্রতিটি সতীপীঠেই শত শত বছর ধরে পুজো চলে আসছে। শুধু সতীপীঠই নয়, এই সব জায়গায় সতীপীঠ ছাড়াও বহু কালী পীঠ রয়েছে। এর কারণ, বাঙালির দিগবিজয়।

নানা সময়ে বাংলার নানা রাজবংশ ভারত দখল করেছে। জানা যায় পালযুগে বাঙালির সাম্রাজ্য আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, তাই সেখানেও কালী মন্দির পাওয়া যায়। বর্তমানে বাঙালি যেখানেই যায় একটি করে কালীবাড়ি স্থাপন করে। সে যুগেও এর ব্যতিক্রম ঘটত না।

তাই, এই বঙ্গ বরাবরই মহাকালী মহামায়ার বিচরণস্থান।তাই, মহানগরীও সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই কালীক্ষেত্র কলকাতা নামেই বহুল পরিচিত।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ

Kali Puja 2024 Ananda Utsav 2024 Kolkata Diwali 2024
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy