বসুমল্লিক বাড়ির পুজো
পুরনো কলকাতার আনাচে কানাচে যেমন বিভিন্ন ছোট বড় গল্প লুকিয়ে থাকে ঠিক তেমনই ক্ষেত্র চন্দ্র বসুমল্লিক নির্মিত কলকাতা অতি প্রাচীন এই বাড়ির প্রতি স্তরে স্তরে নানাবিধ গল্প ছড়িয়ে রয়েছে । ১৮৯১ সালে মার্টিন মান কোম্পানির করা নকশার আদলে এই বাড়ির নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। সেই সময় থেকেই মধুসূদন জেয় এবং অন্নপূর্ণা ঠাকুররানীর সঙ্গে ক্ষেত্রচ্ন্দ্র পাল বাড়িতে দুর্গাপুজো প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকেই এখনও বসুমল্লিক বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে ।
এই বাড়ির কাঠামোর দিকে নজর দিলে দেখা যায়, বাড়ির বাইরের দিকে জাফরির কাজ করা হয়েছিল যা ইসলামিয় শিল্প কলার নিদর্শন। ভিতর দিকে বড় বড় স্তম্ভের উপস্থিতি চোখে পড়ে যা সেই সময় হিন্দু মন্দির গুলির আদলে নির্মিত। এবং বাড়ির পেছন দিকে গোলাকৃতি বড় রঙিন কাঁচ দিয়ে নির্মিত গথিক শিল্প অর্থাৎ খ্রিস্টান ধর্মের নিদর্শন লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ এই বসুমল্লিক বাড়িটি আজ থেকে প্রায় ১৩০ বছর আগে নির্মিত হলে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
প্রাচীন কালের জৌলুশ কিছুটা খর্ব হলেও আজকের দিনেও বাড়ির সকল সদস্যের ঐকান্তিক ইচ্ছায় বসু মল্লিক পরিবার তাদের দুর্গাপুজোর আদি রীতি রেওয়াজ ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মহালয়ার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদের দিন থেকে দেবী বোধনের মাধ্যমে পুজো শুরু হয়ে যায়। পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত টানা চলে পুজো। প্রতিদিনই নৈবদ্য তৈরী হয়। ষষ্ঠীর দিন দেবী দুর্গার বরণ হয়। সপ্তমীতে বাড়ির অন্দরেই হয় কলাবৌ স্নান। অষ্টমীতে সন্ধি পুজোয় পুরনো নিয়ম মাফিক ১০৮ টি প্রদীপ জ্বালানো হয় এবং একটা বড় পিতলের থালায় বিভিন্ন ফল, মিষ্টি, চাল সহযোগে নৈবদ্য দেবী দুর্গাকে অর্পণ করা হয়। আগে এই নৈবদ্য ১০০ কেজি চালের ব্যবহার করা হলে ও কালের নিয়মে তার পরিমাণ আজ কমে এসেছে। দশমীতে দেবী প্রতিমা বরণের পরে বিসর্জনের উদ্দেশ্য এই বাড়ির চিরচারিত নিয়ম অনুযায়ী বাবুঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy