দুর্গাপুজোয় হাওড়ার বনেদি বাড়ির পুজো দেখা সত্যিই এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। গঙ্গাতীরের এই শহরে আজও এমন কিছু পুরনো বাড়ি আছে, যেখানে শতকের পর শতক একই প্রথা ও রীতিনীতি মেনে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। এই মণ্ডপগুলি শুধুমাত্র পুজোর জন্য নয়, বরং বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির জীবন্ত উদাহরণ হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি হাওড়ার বনেদি বাড়ির পুজো দেখতে চান, তবে এই তালিকাটি আপনার কাজে লাগতে পারে।
১. শিবপুরের পাল বাড়ি
হাওড়ার সবচেয়ে পুরনো পুজোগুলির অন্যতম শিবপুরের পাল বাড়ির পুজো। প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো এই শারদোৎসবে দেবী দুর্গা 'অভয়া' রূপে পূজিতা হন। এখানে প্রতিমার দু’টি হাত এবং কোনও অসুর থাকে না। এখনও এই পুজোয় মহিষ বলি প্রচলিত রয়েছে, যা একে অন্যান্য পুজো থেকে আলাদা হিসাবে চিহ্নিত করে।
২. আন্দুল রাজবাড়ি
হাওড়ায় আন্দুল রাজবাড়ির পুজো তার জাঁকজমক এবং রাজকীয় ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। এই পুজোর পরিবেশ এবং প্রতিমার সাজসজ্জা আপনাকে পুরনো দিনের রাজকীয় ভাবনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। এই পুজোয় সাধারণত বহু দর্শনার্থীর ভিড় হয়।
৩. রামকৃষ্ণপুরের বসু বাড়ি
হাওড়ার রামকৃষ্ণপুরে বসু পরিবারের পুজো প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। এই পুজোয় মায়ের প্রসাদ হিসাবে লুচি এবং নানা রকমের ভাজাভুজি নিবেদন করা হয়। এখানে এক সময়ে বলি প্রথা প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে তা উঠে গিয়েছে। এই বাড়ির প্রতিমা একচালা এবং চালচিত্র হাতে আঁকা হয়, যা খুবই সুন্দর।
৪. মাকড়দহের শ্রীমানী বাড়ি
হাওড়ার মাকড়দহে শ্রীমানী পরিবারের পুজো প্রায় ১০৩ বছরের পুরনো। এই বাড়ির দেবী দুর্গা 'হরগৌরী' রূপে পূজিতা হন। এখানে দুর্গার সঙ্গে মহাদেবও থাকেন। জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজো করে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়। পুজো দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন।
৫. পাঁতিহালের রায় বাড়ি
হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের পাঁতিহাল গ্রামে রায় বাড়ির পুজো প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। জন্মাষ্টমীর দিন এখানে কাঠামো পুজো করে প্রতিমা তৈরি শুরু হয়। এই পুজোয় এখনও বলি প্রথা প্রচলিত রয়েছে। সন্ধিপুজোর সময়ে তোপধ্বনি দিয়ে পুজোর সূচনা করা হয়, যা এক বিশেষ আকর্ষণ।
এই বনেদি বাড়িগুলির পুজো দেখে আপনি এক দিকে যেমন প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হবেন, তেমনই পুজোর এক ভিন্ন পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।