দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পুজো বেহালার জগৎরাম মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির দুর্গাপুজো। ইতিহাস বলছে, ১৭৭৯ সালে জগৎরাম মুখোপাধ্যায় এই পুজোর সূচনা করেন। তিনি ছিলেন সেই সময়কার এক জন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং শোভাবাজার রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা নবকৃষ্ণ দেবের দেওয়ান। বিপুল তাঁর আর্থিক সমৃদ্ধি। এ হেন জগৎরামের বাড়িতে দশভুজার পুজো শুরু নিয়ে এক রোমাঞ্চকর কাহিনি প্রচলিত রয়েছে।
পুজো শুরুর প্রেক্ষাপট:
প্রচলিত কাহিনি অনুসারে, এই বংশের আদিপুরুষ জগৎরাম মুখোপাধ্যায়ের কন্যা জগত্তারিণীর আবদারেই নাকি শুরু হয়েছিল এই পুজো। বলা হয়, কোনও একটি বছরের দুর্গাপুজোয় তাঁর মামাবাড়িতে নিমন্ত্রিত ছিলেন জগত্তারিণী। কিন্তু মামারবাড়িতে যথাযথ আদর-আপ্যায়ন না পেয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে আসেন। তাঁরই বায়নায় সে বারই প্রথম মাত্র এক রাতের ব্যবস্থাপনায় নবমীতে করা হয় দেবীর আরাধনা। কিন্তু মায়ের মূর্তি তৈরির সময় হাতে ছিল না, তাই পুজো হয় ঘটে। সেটি ছিল ১৭৭৯ সাল। এর পরের বছর থেকে মৃন্ময়ী প্রতিমার পুজো শুরু হয় মুখোপাধ্যায় বাড়িতে। এই পুজোয় আজও বহু প্রাচীন প্রথা ও নিয়ম কঠোর ভাবে মেনে চলা হয়।
আরও পড়ুন:
এই পুজোর প্রধান আকর্ষণ হল সোনার তৈরি দুর্গামূর্তি, যা ১৮৭৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বিগ্রহের আদলে এই মূর্তি তৈরি করা হয়। যার নেপথ্যে ছিলেন জগৎরামেরই এক উত্তরসূরি যদুনাথ মুখোপাধ্যায়। এই দেবীমূর্তি জগত্তারিণী সোনার দুর্গা নামে সুপরিচিত।
প্রসঙ্গত, এই দুর্গাপুজো একটি বনেদি বাড়ির ব্যক্তিগত পুজো হলেও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। আপনি চাইলেই এই ঐতিহাসিক পুজো দেখতে যেতে পারেন। সাধারণত পুজোর চার দিন (ষষ্ঠী থেকে দশমী) বাড়ির দরজা খোলা থাকে দর্শনার্থীদের জন্য।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।