Advertisement
Hinglaj Mata mandir

পাকিস্তানের হিংলাজ মায়ের মন্দির! হিন্দু এবং মুসলিম তাঁকে একই ভাবে সম্ভ্রম করে

হিংলাজ মা। তাঁর অধিষ্ঠান পাকিস্তানে। হিন্দু এবং মুসলিম, দুই ধর্মের মানুষই তাঁকে সম্ভ্রম করে।

তমোঘ্ন নস্কর
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:১৫
Share: Save:

মা! জগতের সবচেয়ে বড় শব্দটি বোধহয় ’ মা ’! কারণ, মা বোধের ব্যাপ্তিকে ক্ষুদ্র মানব ব্রহ্মে ধরা অসম্ভব। মা আবিশ্ব শক্তির আধার!

যে শিলা বা মূর্তিতে তাঁকে পুজো করি, তা আদতে এই অসীম শক্তির অংশ বিশেষ। যাকে বলা হয় শক্তি স্বরূপিনী। আর তাই বোধহয় 'মা' শব্দে বাতাসে ভেসে বেড়ায় অস্ফূট আবেগ। এক ব্যাপক কাতরতা।

আর ভণিতা না করে মায়ের এক রূপ বর্ণনায় যাই। যার সঙ্গে জড়িয়ে এ দেশ নয়। পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র পাকিস্তান।

পাকিস্তান। বালোচ প্রদেশ। দুর্গম, ঘন অরণ্য বেষ্টিত অঞ্চল। মরুময়। শুষ্ক। রুক্ষ। খাড়াই মসৃণ পর্বত শৃঙ্গে ঘেরা। অথচ তার মধ্যে দিয়ে মানুষ যান এক অখণ্ড অগ্নিকুণ্ডের সন্ধানে। সেই কোন কাল হতে, ওই কুণ্ড জ্বলে চলেছে। এক দিনের তরেও নেভেনি! আর তার সম্মুখে অনিয়ত, লাল টকটকে শিলায় অধিষ্ঠিতা এক মা। মা হিংলাজ।

কী আশ্চর্য জানেন, হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সবাই ওই শিলাকে মাতৃ জ্ঞান করে! মুসলিমরা তাঁকে ধরেন প্রবৃদ্ধ মাতা, নানী। আর ওই ক্ষেত্রটিকে বলে 'নানীজি কা হজ'।

কে এই হিংলাজ?

মা এখানে রক্তবর্ণা। এই হিঙ্গুলা অর্থাৎ রক্তবর্ণা রঙের জন্যই মায়ের নাম হিংলাজ মাতা। সতী মায়ের দেহত্যাগের পর তার খণ্ডিত দেহখণ্ডের প্রজ্ঞা অর্থাৎ ব্রহ্মরণ পতিত হয় এই অঞ্চলে।

সেই ব্রহ্মরন্ধ্রই হিংলাজ মাতা শিলা রূপে এখানে প্রতিষ্ঠিত। এই পীঠ একান্ন সতী পীঠের মধ্যে অন্যতম। মা এখানে কোট্টারি রূপে পূজিতা। তাঁর ভৈরব ভীমলোচন হিসেবে তাঁর সঙ্গেই দণ্ডায়মান।

মন্দিরে মায়ের শিলার সঙ্গে আরেকটি ছবি পাওয়া যায়। সেখানে মা অষ্ট হস্তে শঙ্খ, চক্র, ত্রিশূল, অগ্নি, পদ্ম ও বরাভয় প্রদায়িনী। আর তাঁর পদতলে বসে আছেন পরশুরাম।

তবে আরেকটি লোকভাষ্য পাওয়া যায়, মা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই অঞ্চলের মানুষ তাঁর কাছে কেঁদে পড়েন। এই অঞ্চলের ভয়ানক শাসক হিঙ্গলের থেকে মা তাদেরকে রক্ষা করেন। তাই তারা মাকে হিঙ্গুল দমনকারী 'হিংলাজ মা' বলেন।

কথিত, পরশুরাম যখন ক্ষত্রিয় নিধন করে চলেছিলেন, সে সময় দ্বাদশ ক্ষত্রিয় ব্রাহ্মণকুল শ্রেষ্ঠ দধিচির কাছে আপন প্রাণ প্রার্থনা করে। দধিচি মুনি তাদেরকে এই দুর্গম স্থানে লুকিয়ে দেয় লুকিয়ে রাখেন এবং হিংলাজ মাতার স্তব করতে বলেন।

হিংলাজ মা পরশুরামকে দেখা দিয়ে তাদের নিধন রদ করেন। সেই ক্ষত্রিয়রা সেখানেই বসবাস করেন এবং মায়ের সেবায় রত হন। তারাই ব্রহ্ম ক্ষত্রিয় বংশ নামে পরিচিত।

যুগের পরে যুগ কেটে গেছে সেই সমস্ত পৌরাণিক অঞ্চল বর্তমান সময়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের বসবাস। কিন্তু মা মা-ই রয়ে গেছেন। তিনি সবার কাছেই মা।

হিন্দুদের কাছে মাতা হিংলাজ আর স্থানীয় জিকরি মুসলমানদের কাছে নানি মা।

মন্দিরে যেমন বাৎসরিক পুজো হয়, তেমনি হয় হজ যাত্রা। ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহকারে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মায়ের পুজো দেন। এই অবিরাম প্রজ্জ্বলন কুণ্ড দর্শন করেন। এ দেশ থেকেও এক কালে সাড়ম্বরে তীর্থযাত্রা ও দর্শন বেরোত, এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চিড়ে সেই তীর্থযাত্রা হয় না কিন্তু ও দেশে মায়ের পুজো ও হজ হয় একইভাবে।

মায়ের মন্দিরে গুড়ি দিয়ে ঢুকে, পশ্চাতের শুঁড়ি পথ বেয়ে মায়ের আশীর্বাদ এবং প্রসাদী নারকেল নিয়ে বেরিয়ে আসেন যিনি, তাঁর একটাই পরিচয় তিনি সন্তান। হিংলাজ মায়ের কাছে পরিচয় সবাই তাঁর সন্তান।

মাতৃত্ববোধ এক শক্তি। যার আদতে লিঙ্গ, প্রাণী, জাত ভেদ হয় না। তিনি কাল ও ব্যোমের ন্যায় অসীম। তাই তো বলি "ব্যোম কালী"।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kali Puja 2023 Hinglaj Mata Temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE