প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

মুঘল সাম্রাজ্ঞী যোধাবাইয়ের অনুরোধে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন শিবভক্ত শঙ্কর!

কথিত আছে, যোধাবাই স্বপ্নে ইঙ্গিত পেয়েছিলেন দশভূজার আরাধনা করার!

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৪৮
সংগৃহীত চিত্র।

সংগৃহীত চিত্র।

রাজপুত রাজকন্যা তথা মুঘল সাম্রাজ্ঞী যোধাবাইয়ের অনুরোধে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের দক্ষিণ পাড়ায় নিজের বসত ভিটেয় দশভুজার পুজো শুরু করেছিলেন যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের সেনাধ্যক্ষ শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। সেই পুজো আজও বহমান। এই পুজোর নেপথ্যে রয়েছে রোমাঞ্চে ভরা এক ইতিহাস! সেই 'কাহিনি'র পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে - দেশপ্রেম, স্বাধীনতার সংগ্রাম, আত্মবলিদান, ঈশ্বর ভক্তি, এমনকী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গাথা!

ইতিহাস বলছে, বাংলার বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য। তাঁর রাজধানী ছিল বারাসাতের নিকটবর্তী ধূমঘাটে। সেখানেই ছিল তাঁর পেল্লায় প্রাসাদ। কথিত আছে, প্রবল পরাক্রমশালী রাজা প্রতাপাদিত্য ছিলেন দেবী যশোরেশ্বরীর আশীর্বাদধন্য। তিনি কোনও দিন মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করেননি। ফলত, মুঘল সম্রাট আকবরের রোষানলে পড়েন। কিন্তু, আকবরও তাঁকে পরাস্ত করতে পারেননি।

পরবর্তীতে আকবরের পুত্র, সম্রাট জাহাঙ্গীর প্রতাপাদিত্যকে হারাতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। তাঁকে সাহায্য করেন সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতার সাবর্ণ জমিদার এবং বাঁশবেড়িয়ার জমিদাররা। কিন্তু, হাজার চেষ্টা করেও রাজার সেনাধ্যক্ষ শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়কে দলে টানতে পারেননি জাহাঙ্গীর।

সংগৃহীত চিত্র।

সংগৃহীত চিত্র।

পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরের নির্দেশেই অম্বররাজ মান সিংহ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং সেই যুদ্ধে হার শিকার করতে হয় প্রতাপাদিত্য ও শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের জুটিকে। তাঁদের বন্দি করা হয় এবং দেবী যশোরেশ্বরীর বিগ্রহ অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় অম্বরে। আজও সেখানে পূজিতা হন প্রতাপাদিত্যের আরাধ্যা দেবী!

অন্য দিকে, মুঘল সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার পর প্রতাপাদিত্যের মৃত্যু হলেও শঙ্করকে আজীবন কারাবাসের শাস্তি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে রাজমাতা বৃদ্ধা যোধাবাইয়ের মধ্যস্থতায় তিনি মুক্তি পান এবং তাঁকে সম্রাটের তরফে তাঁরই পিতৃপুরুষের বসত ভিটের কাছে একটি ‘জায়গীর’ বা ভূমি দান করা হয়। কারামুক্তির পর সেখানে ফিরে দুর্গাপুজো শুরু করেন শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়।

কিন্তু, শঙ্কর নিজে শৈব ছিলেন। তাই যোধাবাইয়ের অনুরোধ মেনে, তাঁর নামেই সঙ্কল্প করে মায়ের পুজো শুরু করেন তিনি। খাতায় কলমে এই পুজোর নাম ছিল - 'শিবের কোঠার দুর্গা'। কিন্তু, অনেকেই আজও একে 'যোধাবাইয়ের পুজো' বলেই সম্বোধন করেন। কথিত আছে, যোধাবাই নাকি স্বপ্নে ইঙ্গিত পেয়েছিলেন পুজো করার। তাই, শঙ্করকে দিয়ে সেই ব্যবস্থা করান।

বারাসাতে শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের বংশের একটি শাখার বর্তমান পুরুষ কিরণশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পুজোর রীতি আজও বহাল থাকলেও যোধাবাইয়ের নামে আর সঙ্কল্প করা হয় না। অন্য দিকে, চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আরও একটি শাখা চলে যায় পুরুলিয়া শহরে। সেই পরিবারের তৎকালীন কর্তা ছিলেন নীলকণ্ঠ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে আলাদা করে দেবীর পুজো শুরু হয়। পুজো উপলক্ষে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। 'নীলকণ্ঠ নিবাস'-এর সেই ধারা আজও বহমান।

প্রসঙ্গত, নীলকন্ঠ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী এবং ব্রিটিশ ভারতের পুরুলিয়া পুরসভার প্রথম চেয়ারম্যান। তাঁর উত্তরসূরি রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন। শোনা যায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কোনও এক বছর মহাষ্টমীর দিনে এই বাড়িতে এসেছিলেন!

অন্য দিকে, এই পরিবারই আবার একটা সময় থাকত বর্ধমানের আউসগ্রাম লাগোয়া অমরার গড়ে। কিন্তু, প্রায় ২০০ বছর আগে সেখানকার পাট চুকিয়ে গোটা পরিবার পাকাপাকি ভাবে পুরুলিয়ায় চলে যায়। সংশ্লিষ্ট সমস্ত সম্পত্তি 'দেবত্র' করে দেওয়া হয়। তবে, আজও অমরার গড়ে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের প্রথা মেনে দুর্গাপুজো করা হয়। সেই দায়িত্ব পালন করে স্থানীয় মুখোপাধ্যায় পরিবার। টানা চোখের একচালা দেবী, নবমীর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা আর পুরুলিয়ার মাটি আজও যোধাবাইয়ের দেবী ভক্তির কাছে ঋণী।

কৃতজ্ঞতা: ভাস্কর বাগচী

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Bonedi Barir Pujo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy