প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner
Hatibagan Darjipara Roy Bari Jagadhatri Puja

হাতিবাগানের দর্জিপাড়ার রায় বাড়িতে বিরাজ করেন বিন্ধ্যবাসিনী জগদ্ধাত্রী! ময়ূরের নাচ, ধুনো পোড়ানোর পর দেবীরূপী নারীদের আশীর্বাদেই টিকে আছে ঐতিহ্য

মাটির তলা থেকে উঠে আসে দেবীমূর্তি, আজ ৯৭ বছর ধরে কলকাতার বুকে জ্বলজ্বল করছে বিন্ধ্যবাসিনী রূপে রায়বাড়ির মা জগদ্ধাত্রী।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ১০:২০
Share: Save:
০১ ২২
চন্দননগরের নাম শুনলেই জাঁকজমকপূর্ণ জগদ্ধাত্রী পুজোর ছবি মনে আসে, কিন্তু সেই দৌড়ে কিন্তু এই শহর কলকাতাও পিছিয়ে নেই। এই শহরেও অত্যন্ত বড় করে, জাঁকজমকের সঙ্গেই দেবী জগদ্ধাত্রীকে পুজো করা হয় এমন প্রচুর বনেদি বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত হল দর্জিপাড়ার রায় বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো।

চন্দননগরের নাম শুনলেই জাঁকজমকপূর্ণ জগদ্ধাত্রী পুজোর ছবি মনে আসে, কিন্তু সেই দৌড়ে কিন্তু এই শহর কলকাতাও পিছিয়ে নেই। এই শহরেও অত্যন্ত বড় করে, জাঁকজমকের সঙ্গেই দেবী জগদ্ধাত্রীকে পুজো করা হয় এমন প্রচুর বনেদি বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত হল দর্জিপাড়ার রায় বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো।

০২ ২২
কলুটোলা থেকে কলকাতার নানা প্রান্তে ২৫টির ও বেশি বাড়িতে আজও বিস্তৃত হয়ে আছে বিরাট এই রায় পরিবার। শোনা যায়, প্রায় ৪০০-৫০০ বছর আগে রাজস্থানের মারওয়া থেকে তাঁরা আসেন হুগলির সপ্তগ্রাম নামের এক গ্রামে, যা আজও রয়েছে। সেখান থেকেই পরে কলকাতায় কলুটোলায় বসত গড়েন সোনার বেনে এবং রেশম ব্যবসায় যুক্ত এই পরিবার।

কলুটোলা থেকে কলকাতার নানা প্রান্তে ২৫টির ও বেশি বাড়িতে আজও বিস্তৃত হয়ে আছে বিরাট এই রায় পরিবার। শোনা যায়, প্রায় ৪০০-৫০০ বছর আগে রাজস্থানের মারওয়া থেকে তাঁরা আসেন হুগলির সপ্তগ্রাম নামের এক গ্রামে, যা আজও রয়েছে। সেখান থেকেই পরে কলকাতায় কলুটোলায় বসত গড়েন সোনার বেনে এবং রেশম ব্যবসায় যুক্ত এই পরিবার।

০৩ ২২
রায় পদবিটি তাঁদের পাওয়া সম্মান, কুলদেবী জগদ্ধাত্রীর পুজোয় বংশধররা আজও পাল পদবি ব্যবহার করেন।

রায় পদবিটি তাঁদের পাওয়া সম্মান, কুলদেবী জগদ্ধাত্রীর পুজোয় বংশধররা আজও পাল পদবি ব্যবহার করেন।

০৪ ২২
এই পরিবারের হাতেই ছিল গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল, ১৮৫৩-এর বেঙ্গল বন্ডেড ওয়ারহাউসের মতো কলকাতার বহু স্থাপত্যের মালিকানা। ট্যাংরাতেও ছিল তাঁদের আচারের কারখানা। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জ-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন সুপ্রতিম রায়ের ঠাকুরদা।

এই পরিবারের হাতেই ছিল গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল, ১৮৫৩-এর বেঙ্গল বন্ডেড ওয়ারহাউসের মতো কলকাতার বহু স্থাপত্যের মালিকানা। ট্যাংরাতেও ছিল তাঁদের আচারের কারখানা। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জ-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন সুপ্রতিম রায়ের ঠাকুরদা।

০৫ ২২
এই পুজো এ বছর পা দিচ্ছে ৯৭তম বর্ষে। তাঁদের রয়েছে ১৬৮তম বর্ষের বিখ্যাত বদন চাঁদ রায় বাড়ির দুর্গা পুজো।।

এই পুজো এ বছর পা দিচ্ছে ৯৭তম বর্ষে। তাঁদের রয়েছে ১৬৮তম বর্ষের বিখ্যাত বদন চাঁদ রায় বাড়ির দুর্গা পুজো।।

০৬ ২২
কলকাতা জুড়ে আজও রয়েছে তাঁদের ২৫টির ও বেশি বাড়ি— কোথাও পূজিত হয় দেবী দুর্গা, কোথাও জগন্নাথ, কোথাও বা দেবী জগদ্ধাত্রী।

কলকাতা জুড়ে আজও রয়েছে তাঁদের ২৫টির ও বেশি বাড়ি— কোথাও পূজিত হয় দেবী দুর্গা, কোথাও জগন্নাথ, কোথাও বা দেবী জগদ্ধাত্রী।

০৭ ২২
রায় বাড়ির ৬ষ্ঠ প্রজন্মের বড় ছেলে সুপ্রতিম (পাল) রায় জানান, ১৯২৮ সালে সুলক্ষণা দাসী (রায়) এই পুজো শুরু করেন। তবে এর পিছনে লুকিয়ে আছে এক আশ্চর্য ইতিহাস।

রায় বাড়ির ৬ষ্ঠ প্রজন্মের বড় ছেলে সুপ্রতিম (পাল) রায় জানান, ১৯২৮ সালে সুলক্ষণা দাসী (রায়) এই পুজো শুরু করেন। তবে এর পিছনে লুকিয়ে আছে এক আশ্চর্য ইতিহাস।

০৮ ২২
এই বাড়ি তৈরির সময় ভিত খুঁড়তে খুঁড়তে মাটির তলা থেকে দেবী জগদ্ধাত্রীর একটি মূর্তি পাওয়া যায়। কিন্তু সেই আদি মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়! সেই মূর্তির আদলেই তৈরি হয় অষ্টধাতুর এই কুলদেবী মা জগদ্ধাত্রীর বর্তমান মূর্তি। এই দেবী এখানে 'বিন্ধ্যবাসিনী' রূপে পূজিত হন।

এই বাড়ি তৈরির সময় ভিত খুঁড়তে খুঁড়তে মাটির তলা থেকে দেবী জগদ্ধাত্রীর একটি মূর্তি পাওয়া যায়। কিন্তু সেই আদি মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়! সেই মূর্তির আদলেই তৈরি হয় অষ্টধাতুর এই কুলদেবী মা জগদ্ধাত্রীর বর্তমান মূর্তি। এই দেবী এখানে 'বিন্ধ্যবাসিনী' রূপে পূজিত হন।

০৯ ২২
মন্দিরের মাঝখানে তিনি বিরাজমান, তাঁর ডান দিকে জগন্নাথ ও বাঁ দিকে গোপাল এবং রয়েছে নারায়ণ শিলা। কুলদেবী বলে অন্য কোনও দেবী এই মন্দিরে বসেন না।

মন্দিরের মাঝখানে তিনি বিরাজমান, তাঁর ডান দিকে জগন্নাথ ও বাঁ দিকে গোপাল এবং রয়েছে নারায়ণ শিলা। কুলদেবী বলে অন্য কোনও দেবী এই মন্দিরে বসেন না।

১০ ২২
সপ্তমী থেকে নবমী— এই তিন দিন আমিষ খাওয়া বারণ। নবমীর দিন মূল পুজো হয়, চলে সঙ্কল্প থেকে আরতি ও সন্ধিপুজো।

সপ্তমী থেকে নবমী— এই তিন দিন আমিষ খাওয়া বারণ। নবমীর দিন মূল পুজো হয়, চলে সঙ্কল্প থেকে আরতি ও সন্ধিপুজো।

১১ ২২
পুজো উপলক্ষে আগের দিনই চলে আসেন ঢাকিরা, ঢাক-ঢোল আর খঞ্জনি বাজিয়ে চলে পুজোর প্রস্তুতি।

পুজো উপলক্ষে আগের দিনই চলে আসেন ঢাকিরা, ঢাক-ঢোল আর খঞ্জনি বাজিয়ে চলে পুজোর প্রস্তুতি।

১২ ২২
দেবী সেজে ওঠেন গয়নায়, সঙ্গে থাকে ১০৮টি পদ্ম, বেলপাতা ও গোলাপের মালা। সব মিলিয়ে ১০৮টি ২টি রুপোর প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন পরিবারের সদস্যরা।

দেবী সেজে ওঠেন গয়নায়, সঙ্গে থাকে ১০৮টি পদ্ম, বেলপাতা ও গোলাপের মালা। সব মিলিয়ে ১০৮টি ২টি রুপোর প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন পরিবারের সদস্যরা।

১৩ ২২
এই বাড়িতে অষ্টমীর পুজোর পর এক বিশেষ আনন্দময় অনুষ্ঠান হয় – ধুনো পোড়ানো। বাড়ির মহিলারা মাথায় গামছা রেখে , দু’হাতে মাটির হাড়িতে ধুনো ও খড় নিয়ে দেবীর সামনে বসেন। মনে করা হয়, এই সময় দেবী মা তাঁদের মধ্যে ভর করেন এবং তখন সেই দেবীরূপী নারীদের কোলে বসে পরিবারের সকলে সেই গামছা দিয়ে আশীর্বাদ নেন।

এই বাড়িতে অষ্টমীর পুজোর পর এক বিশেষ আনন্দময় অনুষ্ঠান হয় – ধুনো পোড়ানো। বাড়ির মহিলারা মাথায় গামছা রেখে , দু’হাতে মাটির হাড়িতে ধুনো ও খড় নিয়ে দেবীর সামনে বসেন। মনে করা হয়, এই সময় দেবী মা তাঁদের মধ্যে ভর করেন এবং তখন সেই দেবীরূপী নারীদের কোলে বসে পরিবারের সকলে সেই গামছা দিয়ে আশীর্বাদ নেন।

১৪ ২২
পরিবারের মঙ্গল কামনায় চলে এই রীতি। এই অনুষ্ঠান শেষে তাঁরা উপবাস ভাঙেন। এই দিন পরিবারের শিশুরা পায় চকলেট, যা তাদের কাছে দেবীর আশীর্বাদ।

পরিবারের মঙ্গল কামনায় চলে এই রীতি। এই অনুষ্ঠান শেষে তাঁরা উপবাস ভাঙেন। এই দিন পরিবারের শিশুরা পায় চকলেট, যা তাদের কাছে দেবীর আশীর্বাদ।

১৫ ২২
এই বেনে বাড়ির বিশেষ এক পদ হচ্ছে আদা কুচি, লঙ্কা আর নুন মাখা।

এই বেনে বাড়ির বিশেষ এক পদ হচ্ছে আদা কুচি, লঙ্কা আর নুন মাখা।

১৬ ২২
পুজোর শেষে ঘটে ভাসান, পঞ্চব্যঞ্জনে ভোগ আর তারপর এই কদিন নিরামিষ খাওয়ার পর এ বার খাওয়া হয় আমিষ পদ।

পুজোর শেষে ঘটে ভাসান, পঞ্চব্যঞ্জনে ভোগ আর তারপর এই কদিন নিরামিষ খাওয়ার পর এ বার খাওয়া হয় আমিষ পদ।

১৭ ২২
সোনার বেনে এই পরিবারে শাখা পরার নিয়ম নেই। এয়ো স্ত্রীরা শুধু হাতে পলা পরেন, শাখা ছাড়া।

সোনার বেনে এই পরিবারে শাখা পরার নিয়ম নেই। এয়ো স্ত্রীরা শুধু হাতে পলা পরেন, শাখা ছাড়া।

১৮ ২২
বিশ্বাস, তাঁরা যেহেতু স্বর্ণ ব্যবসায়ী, তাই বেশি সোনা পরিধান করা তাঁদের জন্য শুভ।

বিশ্বাস, তাঁরা যেহেতু স্বর্ণ ব্যবসায়ী, তাই বেশি সোনা পরিধান করা তাঁদের জন্য শুভ।

১৯ ২২
তাই পুজোর সময়ে মহিলারা পায়ে মল, নাকে নথ, কোমরে বিছে ও হাতে সোনার চুড়ির সঙ্গে কেবল পলা পরেন।

তাই পুজোর সময়ে মহিলারা পায়ে মল, নাকে নথ, কোমরে বিছে ও হাতে সোনার চুড়ির সঙ্গে কেবল পলা পরেন।

২০ ২২
সিঁদুর পরার সময়েও ব্যবহার করা হয় রুপোর সিঁদুর পাটা।

সিঁদুর পরার সময়েও ব্যবহার করা হয় রুপোর সিঁদুর পাটা।

২১ ২২
এক সময় এই বাড়িতে পুজোর আরতির সময় ময়ূর আসত, সে পাখনা মেলে নাচত! সে দিনের সেই স্মৃতি আর আজকের পারিবারিক উচ্ছ্বাস, সব মিলিয়েই ৯৭ বছর ধরে এই রায় বাড়ির পুজো এক বিশেষ আকর্ষণ।

এক সময় এই বাড়িতে পুজোর আরতির সময় ময়ূর আসত, সে পাখনা মেলে নাচত! সে দিনের সেই স্মৃতি আর আজকের পারিবারিক উচ্ছ্বাস, সব মিলিয়েই ৯৭ বছর ধরে এই রায় বাড়ির পুজো এক বিশেষ আকর্ষণ।

২২ ২২
আর ঠিক তিন বছর পর এই পুজোই শতবর্ষে পা দেবে। সেই জন্য বেশ উদ্দীপিত বাড়ির সকলে।  (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)

আর ঠিক তিন বছর পর এই পুজোই শতবর্ষে পা দেবে। সেই জন্য বেশ উদ্দীপিত বাড়ির সকলে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy