দুর্গাপুজোর সঙ্গে বাঙালির আবেগ অন্য ভাবে জড়িয়ে। বহু মানুষ সেই কারণে পুজোর সময়ে কলকাতা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চান না। কিন্তু বেড়াতে যাওয়ার জন্য তো ছুটিও দরকার। ছুটি বলতেও তো সেই পুজোরই সময়। আপনি কি বার বার পুজোর ছুটিতে বাইরে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যানটা ভেস্তে দেন এই ভেবে যে, অঞ্জলি দেওয়ার সুযোগ পাবেন না? তাহলে আপনাকে বলা যে, কলকাতার বাইরে বেড়াতে গিয়েও অঞ্জলি দেওয়া সম্ভব। বিশেষ করে যদি দার্জিলিং বা ডুয়ার্সের দিকে বেড়াতে যান, তা হলে অঞ্জলি দেওয়ার সুযোগ পেতেই পারেন। দার্জিলিংয়ের পাহাড় ও ডুয়ার্সের পুজোও তার নিজস্ব ধারায় মনোমুগ্ধকর। বিশেষত দার্জিলিং এবং ডুয়ার্সের বিভিন্ন স্থানে বড় করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়, যা পর্যটকদের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা হতে পারে।
দার্জিলিং-এর দুর্গাপুজো: দার্জিলিং-এর দুর্গাপুজো অনেকটা শান্ত এবং আন্তরিক পরিবেশে হয়। এখানে বড় বাজেটের থিমের পুজোর চেয়ে ঐতিহ্যবাহী এবং পারিবারিক পুজোই দেখা যায় বেশি। এই পুজোয় স্থানীয় নেপালি, ভুটিয়া এবং বাঙালি সংস্কৃতির এক সুন্দর মিশ্রণ দেখা যায়। দেখে নেওয়া যাক, এমনই কয়েকটি পুজোর নাম।
বিবেকানন্দ রোড: এখানকার রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের পুজো খুব প্রসিদ্ধ। এই পুজোর বিশেষত্ব হল, এখানে কেবল পুজোই নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা থাকে। এখানে অঞ্জলি দিতে চাইলে পুজোর দিন সকালে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছতে হবে এবং লাইনে দাঁড়িয়ে নিয়ম মেনে অঞ্জলি দেওয়া যাবে।
ম্যাল: এখানে কিছু বড় হোটেল এবং রেস্তরাঁ তাদের নিজস্ব উদ্যোগে পুজো করে, যা অনেক সময়ে জনসাধারণের জন্য খোলাই থাকে। পর্যটকেরা এখানে সহজেই অঞ্জলি দিতে পারেন।
দার্জিলিং গোর্খা পাবলিক লাইব্রেরি: এখানেও একটি ঐতিহ্যবাহী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয়দের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পুজোর জায়গা। এখানেও অঞ্জলি দেওয়ার জন্য পূর্বনির্ধারিত নিয়মাবলী মেনে চলতে হয়।
ডুয়ার্সের দুর্গাপুজো: ডুয়ার্স মূলত চা বাগান এবং বনের জন্য বিখ্যাত। এখানকার দুর্গাপুজো সাধারণত চা বাগানের শ্রমিকদের উদ্যোগে এবং বিভিন্ন ক্লাবের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত হয়। ডুয়ার্সের পুজোয় থাকে প্রকৃতির এক স্নিগ্ধ ছোঁয়া। রইল এই এলাকার কয়েকটি বড় পুজোর হদিস।
মালবাজার: ডুয়ার্সের মধ্যে মালবাজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। এখানে অনেকগুলি বড় পুজো হয়। মালবাজারের বিভিন্ন ক্লাব তাদের থিম এবং মণ্ডপ সজ্জার জন্য পরিচিত। এখানে পুজোর সময়ে প্রচুর লোক সমাগম হয়।
চালসা এবং মেটেলি: এই দু’টি জায়গার চা বাগানগুলিতে বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো হয়। চা বাগানের শ্রমিকেরা মিলেমিশে এই পুজোর আয়োজন করেন। এখানকার পুজোতে চা বাগানের এক নিজস্ব সংস্কৃতি ফুটে ওঠে।
লাটাগুড়ি: এই বনভূমির কাছাকাছি এলাকাতেও কিছু বড় পুজো হয়ে থাকে। স্থানীয় বন দফতর এবং পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মানুষ এর আয়োজন করেন। এখানকার পুজোয় স্থানীয় লোকনৃত্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
দার্জিলিং এবং ডুয়ার্সের দুর্গাপুজো কলকাতার থেকে একটু অন্য রকমের হলেও, তা কোনও অংশে কম আকর্ষণীয় নয়। পাহাড়ের সৌন্দর্য বা বনের স্নিগ্ধতার মাঝে পুজো দেখার অভিজ্ঞতা কিন্তু সত্যিই অসাধারণ। যাঁরা ভিড় থেকে দূরে, প্রকৃতির মাঝে পুজো উপভোগ করতে চান, তাঁদের জন্য এই দু’টি স্থানই আদর্শ। পুজোর সময়ে বেড়াতে গেলে এই স্থানগুলির দুর্গাপুজো এক নতুন ধরনের আনন্দ এবং শান্তি নিয়ে আসবে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)