প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

লখনউ যাননি? এই পুজোয় পশ্চিমবাংলাতেই নিন তার স্বাদ

চলুন মালদহ। যেখানে ইতিহাস কানে কানে কথা কয়।

প্রদীপ্ত চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:১৬
ছবি: লেখক

ছবি: লেখক

কাজে অকাজে ঘুরতে আমরা প্রায়ই উত্তরবঙ্গ দৌড়ই। এই যাতায়াতের পথে একটা দিন বরাদ্দ করুন গৌড়ের জন্য। নিউ জলপাইগুড়িগামী যে কোনও গাড়িতে বা গৌড় এক্সপ্রেসে মালদহ নামুন ভোরে। হোটেলে একটু স্নান-টান সেরে সারাদিনের জন্য একটা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন।

কদম রসুল

কদম রসুল

গৌড় মানেই নিঃশব্দ ইতিহাস। পোড়া মাটির ইটের তৈরি মসজিদ, বড় বড় দরওয়াজা বা তোরণ, সে সবের গায়ে যেটুকু কারুকার্য, এখনও রয়ে গিয়েছে তা বাকরুদ্ধ করে দেয়।

প্রথমেই চলুন বড় সোনা মসজিদ বা বারোদুয়ারি, মালদহ গৌড়-এর সবচেয়ে বড় ইট ও পাথরের তৈরি সৌধ। রামকেলির পাশে এই সৌধের নির্মাণ কাজ শুরু করেন আলাউদ্দিন হুসেন শাহ। ১৫২৬ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করেন তার পুত্র নাসিরুদ্দিন নুসরত শাহ। এর বিরাট নামাজ পড়ার কক্ষটির ছাদ ধ্বসে গিয়েছে। যেটুকু আছে তার থেকে এর অপূর্ব গঠনশৈলী অনেকটাই আন্দাজ করা যায়। পাশেই রয়েছে দাখিল দরওয়াজা, নবাব প্রবেশ করলে এখান থেকে তাকে স্বাগত জানান হত।

একটু এগোলেই ফিরোজ মিনার। সইফুদ্দিন ফিরোজ শাহের হাতে তৈরি এই ৫ তলা মিনারটির প্রথম দু’টি তল অষ্টকোণ। পরের তল গুলি গোলাকার। সুন্দর করে বাগানে সাজানো মিনারটি দেখতে বেশ লাগে। এখান থেকে আম বাগানের মধ্য দিয়ে গেলে বাইশ গজি দেওয়াল, বল্লাল সেনের দরবার। এবার যেখানে গাড়ি দাঁড়াবে, তার চার দিকেই সৌধের ছড়াছড়ি। প্রথমেই বাঁ দিকে কদম রসুল মসজিদ, যেখানে রয়েছে হজরত মহম্মদের পায়ের ছাপ। তার উল্টো দিকে আওরঙ্গজ়েবের সেনাধ্যক্ষ ফতে খানের সমাধি। অবাক করবে এর চালাঘরের মতো গঠন।

বড় সোনা মসজিদ

বড় সোনা মসজিদ

চত্বর থেকে বেড়িয়ে এসে চলুন চিকা মসজিদ। নাসিরুদ্দিন মহম্মদ শাহ এটি তৈরি করেন। মসজিদ নাম হলেও সম্ভবত এটি নামজাদা লোকেদের নজরবন্দী করে রাখার কাজে ব্যবহার করা হত। ভিতরের আলো-আঁধারিতে দাঁড়িয়ে বেশ ছমছমে লাগে। এর উত্তর-পশ্চিমে গুমতি দরওয়াজা, আলাউদ্দিন হুসেন শাহ নির্মিত পোড়া মাটির ইটের তৈরি এই সৌধটির গায়ে এখনও যে নানা রঙের মিনা করা কাজ লেগে আছে, তা অসাধারণ।

মসজিদের সামনের রাস্তায় গৌড় এ প্রবেশের পূর্ব গেট, লুকোচুরি দরওয়াজা, ১৬৫৫ সালে শাহ সুজা এই তোরণ নির্মাণ করেন। বলা হয়, নবাব এই তিন তলা তোরণে তার বেগমদের নিয়ে লুকোচুরি খেলতেন বলেই এর নাম লুকোচুরি দরওয়াজা।

ফতে খানের সমাধি

ফতে খানের সমাধি

এবার চলুন লোটন মসজিদের দিকে। সুলতান ইউসুফ শাহ তার রাজনর্তকীর নামে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন, সমাজে ব্রাত্য এই নারী অন্তত কোথাও সম্মান পেয়েছিলেন! এর গায়েও নানা রঙের মিনা করা কাজ, অনেকটাই উঠে গিয়েছে, কিন্তু যেটুকু সময়ের ধকল সয়ে রয়ে গিয়েছে, তা’ও কম নয়। এর পর পথে গুণমন্ত মসজিদ। এর সারা গায়ে অসমান খোঁচা খোঁচা পাথর। কেন? কারণ জানা নেই। তবে ভিতরের কাজ, গঠনশৈলী অপূর্ব। একটু এগোলেই চামকাটি মসজিদ, সুলতান ইউসুফ শাহ তার চর্মকার প্রজাদের নামাজ পড়ার জন্য এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।

দুপুরের খাওয়ার পাট চুকিয়ে এগোন আদিনার পথে। পথে ডিয়ার পার্কে সময় নষ্ট না করে সোজা চলুন আদিনার দিকে। আদিনা মসজিদ, ভারতের সবচেয়ে বড় এই মসজিদ দামাস্কাসের একটি মসজিদের অনুকরণে ইলিয়াস শাহি বংশের সিকান্দার শাহর আমলে তৈরি হয়। অসাধারণ এই স্থাপত্য ঘুরে দেখতে অন্তত দুটি ঘন্টা রাখুন। খিলানের কাজ, অপূর্ব সুন্দর আর্চ মন ভাল করে দেবে।

লুকোচুরি দরওয়াজা

লুকোচুরি দরওয়াজা

একটু এগিয়ে একলাখি মসজিদ। ভিতরে পাশাপাশি সমাধি। সম্ভবত জালালুদ্দিন হুসেন শাহ, তার স্ত্রী ও পুত্র সামসুদ্দিন আহমদ শাহের, সম্ভবত কারণ ইতিহাসবিদদের মধ্যে এই নিয়ে মত পার্থক্য আছে। যাই হোক না কেন, মসজিদের মধ্যে আলো আঁধারি ভাল লাগবে। ছোট সোনা মসজিদ, অনেকটা বড় সোনা মসজিদ বা বারোদুয়ারির ধাঁচে তৈরি, তবে আকারে অনেক ছোট, তাই ছোট সোনা মসজিদ। সুলতান হুসেন শাহের আমলে তৈরি এই মসজিদটি ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এর ছাদের ৫টি গম্বুজ ধ্বসে পড়ে। তবু এখনও এর অপূর্ব গঠন মুগ্ধ করে।

এবার ফেরার পালা। রাতের ট্রেনে কলকাতা ফিরতে পারেন বা রাতটা মালদায় কাটিয়ে সকালের ট্রেনে শিলিগুড়ি।

ছবি:লেখক

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

Malda Travel durga pujo Tourist Spot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy