‘নেকেড ফ্লাইং’ !
নামটা শুনেই হয়তো চমকে গিয়েছেন। তবে শব্দ দুটো বিভ্রান্তিকর হলেও, বিষয়টি সম্পর্কে যা ভাবছেন, একেবারেই কিন্তু তা নয়। এর সঙ্গে পোশাক-বিহীন উড়ান-সফরের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি এমন এক ধরনের বেড়ানোর স্টাইল, যেখানে খুব কম বা একেবারেই মালপত্র ছাড়া বিমানযাত্রা করা হয়। নামমাত্ৰ জিনিস, যেমন পাসপোর্ট, ফোন, ওয়ালেট, চার্জারের মতো জিনিসগুলি নিয়েই বেড়াতে যান কেউ কেউ। আর সেই সব কিছু পকেটে বা ছোট ব্যাগেই এঁটে যায়।
‘নেকেড ফ্লাইং’-এর ধরন:
মূলত তিন রকম কায়দায় এই ‘নেকেড ফ্লাইং’ করা যায়। প্রথমটি হল ‘টোটালি বেয়ার’। এখানে শুধু প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী (যেমন ফোন, ওয়ালেট, সানগ্লাস) নিয়ে বিমানে ওঠেন যাত্রী। দ্বিতীয় ধরন হল ‘পকেট পিপল’। এ ক্ষেত্রে একাধিক পকেটযুক্ত পোশাক, যেমন কার্গো প্যান্ট বা জ্যাকেট পরে, তার মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বিমানে ওঠেন মানুষ। তিন নম্বর স্টাইলটি হল ‘ডেলিভারি ক্রু’। এখানে যাত্রার আগে নিজের মালপত্র বা পোশাক ক্যুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গন্তব্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে বিমানযাত্রা সম্পূর্ণ ‘ব্যাগবিহীন’ হয়ে যায়।
এ বার প্রশ্ন হল, কেন নতুন প্রজন্মের মধ্যে এ ভাবে সফর জনপ্রিয় হচ্ছে?
প্রথম যুক্তি, খরচ বাঁচানো। বিমান পরিষেবা সংস্থাগুলি ইদানীং ভারী ব্যাগের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নেয়। তা থেকে বাঁচার উপায় এটি। দ্বিতীয়ত, সময় বাঁচে এবং চাপমুক্ত থাকা যায়। চেক-ইন ও লাগেজ ক্লেম লাইনে অপেক্ষা করে সময় নষ্ট করতে হয় না। ব্যাগ হারিয়ে ফেলার মানসিক চাপও থাকে না। তৃতীয়ত, যত কম মালপত্র নিয়ে ভ্রমণ করা যায়, তত কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমে পড়ে। পরিবেশ সচেতন নতুন প্রজন্মের কাছে এটা একটা বড় বিষয়।
সুবিধা ও অসুবিধা কী কী?
মনে রাখতে হবে ‘নেকেড ফ্লাইং’-এর সুবিধা ও অসুবিধা, দুই-ই আছে।
সুবিধা বলতে – মালপত্র নেওয়ার খরচ বাঁচানো যায়। বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করতে হয় না। আর সর্বোপরি মালপত্র হারানোর ঝুঁকি কম।
এ বারে অসুবিধার তালিকাটাও জেনে নেওয়া যাক। এই পদ্ধতির বেড়ানোয় গন্তব্যে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হতে পারে। তাতে খরচ বৃদ্ধি হতে পারে। দীর্ঘ সময়ের জন্য বেড়াতে গেলে বা বেড়াতে গিয়ে নানা ধরনের ইভেন্টে অংশ নিলে তার মানানসই পোশাক কিনতে হতে পারে। আর ক্যুরিয়ার করে জিনিসপত্র আগে থেকে পাঠাতে গেলে তারও একটা খরচ আছে।
শেষে বলে রাখা দরকার, ‘নেকেড ফ্লাইং’ কোনও চটক নয়। নাম শুনে যা-ই মনে হোক না কেন, এটি আসলে নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভ্রমণকে দেখা। যেখানে টাকা বাঁচানো, এবং পরিবেশকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি বার বার ফিরে আসছে। তবে তার মানেই এটা নয় যে, সব ধরনের বেড়ানোর ক্ষেত্রেই এটা করে দেখা যেতে পারে। যেমন ধরুন খুব পাণ্ডবর্জিত জায়গায় যেতে হলে এই স্টাইলে সমস্যা বাড়তে পারে বই কী! সে ক্ষেত্রে পুজোয় বেড়াতে গেলে আপনি এ পথে হাঁটবেন কি না, তা আগে ভাগে ঠিক করে নিন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।