মহারাষ্ট্রের বাঘবন তাড়োবার মোহারলি গেট হল বাঘ দেখার সেরা প্রবেশ পথ। আর সেরা সময় এপ্রিলের শেষ বা মে মাসের প্রথম সপ্তাহের চামড়া পোড়া গরমে। কারণ পয়তাল্লিশ ডিগ্রির জ্বালা ধরানো গরম আর শুকনো হাওয়ার চাদরে মুড়িয়ে পড়ে থাকা শুকনো তাড়োবা আন্ধেরি টাইগার রিসার্ভে এ সময় প্রচন্ড জলকষ্ট। আর এ সময়েই জঙ্গলে পড়ে থাকা বিভিন্ন ওয়াটারহোল গুলোতে জল খেতে আসা বা জলে গা পিঠ ডুবিয়ে বসে থাকা বনচরদের দেখার সম্ভাবনাও বাড়ে খুব বেশি। এখানে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ওঠায় কোর বা বাফার দু’জায়গাতেই সাইটিং বেশ ভাল হয়। তবে ইদানীং নাগপুর থেকে ১৮০ কিলোমিটার দুরের গেট মোহারলিতে নাকি বাঘের দর্শন মিলবেই এমনটাই জানালেন এফডিসিএমের রিসর্ট ম্যানেজার।
মহারাষ্ট্রর চন্দ্রপুর জেলায় ১৭২৭ বর্গ কিলোমিটার পরিধি নিয়ে তাড়োবা। আন্ধেরি টাইগার রিসার্ভে আরও কিছু এন্ট্রি পয়েন্ট আছে। এ গুলি হল খুটওয়ান্ডা, কোলারা, নভেগাঁও, পাংড়ি আর জারি। অদিবাসী গোন্ড গ্রামপ্রধান তাড়ুর মৃত্যু হয় বাঘের সাথে লড়াই করে। আর তখন থেকেই তাড়োবায় ভেসে বেড়ায় বাঘেদেরই নানা কীর্তিকলাপ। আজও সেখানে আকাশে বাতাসে রিসর্টের ভেতর, এন্ট্রি গেটের জটলায় উচ্চারিত হয় তারা, মায়া, ছোটিতারা, গব্বর, মাধুরী বজরং,আর মটকাসুররের গল্প।
বাঘ তো আছেই এখানে চোখ ঘোরালেই নজরে আসে সম্বর, স্পটেড ডিয়ার, বার্কিং ডিয়ার লাঙুর, নীলগাই, ইন্ডিয়ান গাউর, অ্যান্টিলোপ, স্লথ ভালুক, বুনো শুওর, ঢোল বা বুনো কুকুর, চিতা প্রভৃতি। আর আছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। তবে তাড়োবায় জঙ্গল বলতে বেশিটাই শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর বাঁশঝাড়। সঙ্গে মহুয়া, আইন, জাম, অর্জুন, বহেড়া, বিজা, ফেল আর শালগাছের সারি। আজও আদিবাসী পরিবারে শিশুর জন্ম হলে মুখে দেওয়া হয় মহুয়া ফুলের মধু। আর আছে সম্পূর্ণ সাদা রঙের গাছ ঘোষ্ট ট্রি বা ভূতগাছ। দূর থেকে অন্ধকারে দেখলে ভুত বলেই বিভ্রম হয়। ভিন্ন ঋতুতে এ গাছ রং বদলে কখনো সবুজ, কখনো বা লাল হয়ে যায়।
হুডখোলা জলপাই সবুজ জিপসিতে কান মাথা হালকা কাপড়ে ঢেকে নিয়ে প্রচুর জলের বোতল ও গ্লুকোজের জল নিয়ে এ জঙ্গলে ঘুরে বেড়ালে গরমের রেশ বিন্দুমাত্র টের পাওয়া যায় না।
কী ভাবে যাওয়া যায়
তাড়োবার কাছের স্টেশন নাগপুর থেকে রিসার্ভ গাড়ি নিয়ে মোহরলি বা ট্রেনে নাগপুর থেকে চন্দ্রপুরা পৌছে সেখান থেকে ৪৫ কিলোমিটার দুরে মোহরলি পৌছানো যায়।
থাকার ব্যবস্থা
আছে অনেক বেসরকারি রিসর্ট। সরকারি কটেজে জঙ্গলের গেট লাগোয়া থাকা যায় ফরেস্ট ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনে অব মহারাষ্ট্র বা মহারাষ্ট্র টুরিসম ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের গেস্ট হাউসে।
বুকিং-এর জন্য
প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন মহারাষ্ট্র সরকারের ভ্রমণের ওয়েবসাইটে।
খরচ কেমন পড়ে
কম খরচে ঘোরার জন্য ছ’জনের দল করলে ভাল। কারণ সাফারি হয় ছ’সিটের জিপসিতে। এ ছাড়া ক্যামেরা, গাড়ির এন্ট্রি ফি, গাইড চার্জ আর জিপসি ট্রেইলের খরচ ধরে নিতে হবে। জিপসিতে না গেলে বাসে গেলে খরচ আরও কমে।
বিধিনিষেধ কেমন
জঙ্গলের আইন মেনে চলতে হবে। সাফারির সময় গাড়ি থেকে নীচে নামা একদমই বারণ। এতে ক্যানসেল হতে পারে ড্রাইভার ও গাইডের লাইসেন্স। বন্য পশুদের উত্যক্ত বা বিরক্ত করা মানা। কোন নেশা বা ধুমপান থেকে বিরত থাকুন। পোশাক পরুন হালকা বা জঙ্গল ঘেঁষা রংয়ের। পারফিউম বর্জন করুন। গ্লুকোন-ডি মেশানো জলের বোতল ও সাধারণ জলের বোতল সাথে রাখুন প্রচুর পরিমাণে।
সাফারির সময়
সকাল এবং বিকেলে, দু’ দফাতেই সাফারি করা যায়। নির্দিষ্ট সময় মেনে।
জাতীয় উদ্যানের প্রবেশপথ
কোলারা গেট: নাগপুর থেকে ১১৫ কিমি, নভোগাঁও গেট : নাগপুর থেকে ১৩০ কিমি, পাংড়ি গেট : নাগপুর থেকে ১৬০ কিলোমিটার, মোহরলি গেট : নাগপুর থেকে ১৮০ কিমি, খুটওয়ান্ডা গেট : চন্দ্রপুরা থেকে ৪ কিমি, জারি গেট - চন্দ্রপুরা থেকে ৩৮ কিমি।
সাফারি বুকিং
বুকিং হয় অনলাইন, অফলাইন অথবা ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে। অনলাইনে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অফলাইনে ন্যাশনাল পার্কের গেটে বুকিং কাউন্টার থেকে (শুধু মাত্র ক্যাশে) বুকিং করতে পারেন।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy