E-Paper

ভোটের আগে কি ফের অবৈধ অস্ত্রের রমরমা

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩ থেকে ১৫ মার্চ, পর পর তিন দিনেই অন্ডাল ও রানিগঞ্জে বেশ কিছু পাইপগান, কার্তুজ ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, অতীতে এই অঞ্চলেই অস্ত্র তৈরির অভিযোগ উঠত।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩২
উদ্ধার হওয়া অস্ত্র।

উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। —ফাইল ছবি।

ভোটের কয়েক মাস আগে থেকেই বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে তৎপরতার নির্দেশ ছিল প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের তরফে। পুলিশের নাকাবন্দি, তল্লাশিতে গত কয়েক দিনে পশ্চিম বর্ধমানের কয়েকটি জায়গা থেকে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু লোকসভা ভোটের আবহে খনি-শিল্পাঞ্চলে বাইরে থেকে যে অস্ত্র ঢুকছে, তা এ সব ঘটনাতেই প্রমাণ বলে অভিযোগ নানা রাজনৈতিক দল ও নাগরকিদের একাংশের। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, পড়শি রাজ্য থেকে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে অস্ত্র আমদানি চলছেই। নির্দিষ্ট দরে তা বিক্রিও হচ্ছে দুষ্কৃতীদের কাছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩ থেকে ১৫ মার্চ, পর পর তিন দিনেই অন্ডাল ও রানিগঞ্জে বেশ কিছু পাইপগান, কার্তুজ ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, অতীতে এই অঞ্চলেই অস্ত্র তৈরির অভিযোগ উঠত। প্রায় দু’দশক আগে অন্ডাল থানার অদূরে একটি
আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানা ভেঙে দেয় পুলিশ। আবার, বছর দুয়েক আগে হিরাপুর, কুলটি ও সালানপুরে তিনটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানার হদিস মেলে। সেগুলি নষ্ট করে পুলিশ। তার পরেও আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা কমছে না কেন?

২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পাঞ্চলে সভা করতে এসে জানিয়েছিলেন, অন্ডাল হয়ে জেলায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে বলে খবর রয়েছে। নানা সূত্রের দাবি, এখনও বিহারের মুঙ্গের থেকে নানা পথে পশ্চিম বর্ধমানে অস্ত্র আমদানি বন্ধ হয়নি। তার মধ্যে বীরভূমের ভীমগড়া হয়ে অজয়ের সেতু পেরিয়ে পাণ্ডবেশ্বর, অন্ডাল ও দুর্গাপুর হয়ে একটি রুট রয়েছে। এ ছাড়া, অজয়ের কয়েকটি অস্থায়ী সেতু হয়ে জামুড়িয়া এবং ঝাড়খণ্ডের নলা ও দুমকা জেলা থেকে রুনাকুড়া ঘাট হয়ে বারাবনি, সালানপুর, কুলটিতে ঢোকার পথ রয়েছে। পুরুলিয়া ও ঝাড়খণ্ডের নিরশা থেকেও দামোদর পেরিয়ে ডিসেরগড়, বরাকর হয়ে জেলায় অস্ত্র আসার পথ রয়েছে বলে অভিযোগ।

দেশি পাইপগান পাঁচ থেকে ছ’হাজার, সেভেন থেকে নাইন এমএম পিস্তল ৩০-৪০ হাজার টাকা, দু’নলা বন্দুক ১০-১২ হাজার টাকা, পাঁচ-ছয় রাউন্ডের রাইফেল ২০-২৫ হাজার টাকা, কার্বাইন ৫০-৬০ হাজার টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে বলেও নানা সূত্রের দাবি। এ সবের বেশির ভাগই বিহারের মুঙ্গের থেকে সরবরাহ হচ্ছে বলে ওয়াকিবহাল সূত্র মনে করছে।

ভোটের আগে অস্ত্র সরবরাহের বাড়বাড়ন্ত বাড়ে বলে অভিযোগ রাজনৈতিক দলগুলির। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে পাঁচ জন সিপিএম নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। একটি ক্ষেত্রে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা অভিযুক্তকে ঘিরে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। বাকি ঘটনাগুলিতে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার বা আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। পার্থের অভিযোগ, ভোটের আগে কিছু ধরপাকড় করে সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দেওয়া হয়। ভোটে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব হবে বলেই তাঁদের আশঙ্কা।

বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়েরও দাবি, নির্বাচন কমিশনের চাপে পড়ে ভোটের আগে ধরপাকড়ের নাটক করতে হয় পুলিশকে। যারা ধরা পড়ে, তাদের বেশির ভাগই স্থানীয়। তা থেকেই পরিষ্কার, কাদের কাছে অস্ত্র আছে পুলিশ জানে।

তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন যদিও বলেন, ‘‘স্বচ্ছ নির্বাচনের লক্ষ্যে দুষ্কৃতীদের ধরা নির্বাচন কমিশনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই পড়ে। প্রতিটি রাজ্যেই পুলিশ-প্রশাসন এ বিষয়ে তৎপর হয়েছে। এ নিয়ে বিরোধীদের অমূলক মন্তব্যের কোনও গুরুত্ব নেই।’’

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক শুধু বলেন, ‘‘অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে অভিযান সারা বছরই চলে। সে জন্য বিভিন্ন সময়ে নাকা তল্লাশির ব্যবস্থা করা হয়। ভোটের আগে স্বাভাবিক কারণেই সতর্কতা বাড়াতে হয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 weapon

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy