আগামী লোকসভা ভোটের বাদ্যি এখন থেকেই বাজাতে শুরু করেছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি। অথচ যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগের বার দিল্লি দখল সম্ভব হয়েছিল, তা পূরণের ধারেকাছেও পৌঁছনো যায়নি। চাষিদের আয় দ্বিগুণ হওয়ার কথা ছিল। সেখানে দেশ জুড়ে কৃষক অসন্তোষ। চাকরির আশায় ঢেলে ভোট দিয়েছিল তরুণ প্রজন্ম। অথচ কাজের সুযোগ তৈরিই করা যায়নি সে ভাবে। লগ্নিতে ভাটা। গতি কমেছে বৃদ্ধির চাকাতেও। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের পালে হাওয়া ফেরাতে এ বার শিল্পমহলের দিকে বেশি করে ঝুঁকছেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদী সরাসরি শিল্পমহলের কাছেই জানতে চান, অর্থনীতির হাল ফেরাতে কী করা জরুরি? কী ভাবে তৈরি হবে কাজের সুযোগ? গত সপ্তাহে নীতি আয়োগে তিনি প্রায় ২০০ জন তরুণ সিইও, উদ্যোগপতির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সোমবার থেকে কথা শুরু হয়েছে নানা ক্ষেত্রের আরও ২০০ জন কর্পোরেট কর্ণধারের সঙ্গে।
শিল্পমহলের সঙ্গে মোদীর বৈঠকের পরে বৃহস্পতিবার আবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বদলে মোদী সরকার যে তিন বছরের ‘অ্যাকশন অ্যাজেন্ডা’ নিয়ে এগোতে চায়, তা চূড়ান্ত করতে মুখ্যমন্ত্রীদের মতামত জানতে চাওয়া হবে। এপ্রিলে নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীদের হাতে এর খসড়া তুলে দেওয়া হয়েছিল।
২০২২ সালের মধ্যে ‘নতুন ভারত’ গড়ার সংকল্প করেছেন মোদী। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, কোন পথে সেই সিদ্ধিলাভ হবে, সে বিষয়ে শিল্পপতিদের কাছ থেকে নতুন ভাবনা শুনতে চাইছেন তিনি। সিইও, এমডি-দের উৎসাহ দিতে তাঁদের ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব চেঞ্জ’ বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে আশ্বাস, শিল্পপতিদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন মন্ত্রক সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। নীতি ও নির্দেশিকায় বদল আনবে। যেখানে রাজ্যের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, সেখানে নীতি আয়োগ না কি রাজ্যের কাছে দরবার পর্যন্ত করতে তৈরি।
সাধারণত এই ধরনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গিয়ে বক্তব্য জানিয়ে চলে আসেন। কিন্তু মোদী তা না-করে, তিন-চার ঘন্টা ধরে শিল্পপতিদের কথা শুনছেন। ক্যাবিনেটের বাকি মন্ত্রীদেরও সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘দু’বছর পরে লোকসভা ভোট। অথচ মোদী-সরকারের তিন বছর পার হওয়ার পরেও বেসরকারি লগ্নি এখনও দূর অস্ত্। সেই কারণেই এখন শিল্পমহলের মন বুঝতে তৎপর প্রধানমন্ত্রী।’’ সোমবার যেমন শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত সরকার বিপুল লগ্নি করেছে। এ বার বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন।’’
সরকারি সূত্রের খবর, এ সপ্তাহের বৈঠকের জন্য কিছু বিষয় বাছা হয়েছে। যেমন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ভবিষ্যতের শহর, বিশ্বমানের পরিকাঠামো, চাষিদের দ্বিগুণ আয় ও আর্থিক ক্ষেত্রের সংস্কার ইত্যাদি। প্রতিটির জন্য ছ’জন শিল্পকর্তার দল তৈরি করে তাঁদের কাছ থেকে নতুন ভাবনা চাওয়া হয়েছে। আর্থিক ক্ষেত্রের গোষ্ঠীতে যেমন রয়েছেন বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষ। চাষিদের আয় বাড়ানোর পথ খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এসকর্ট গোষ্ঠীর নিখিল নন্দা, কেভেন্টার্সের মায়াঙ্ক জালান, হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের প্রিয়া নায়ারদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy