Advertisement
০২ মে ২০২৪
সোদপুর

রিভলভার উঁচিয়ে ভরসন্ধ্যায় সাফ সোনার দোকান

জমজমাট সন্ধ্যায় দুঃসাহসিক ডাকাতি হল সোদপুরের এক সোনার দোকানে। বৃহস্পতিবার বিটি রোডে ওই দোকানের শো-কেস থেকে সোনা-হিরে-প্ল্যাটিনামের সমস্ত গয়না লুঠ করে নিয়ে গেল ডাকাতেরা। রইল কিছু রুপোর অলঙ্কার।

ডাকাতির পরে পুলিশি তদন্ত। বৃহস্পতিবার রাতে। — নিজস্ব চিত্র

ডাকাতির পরে পুলিশি তদন্ত। বৃহস্পতিবার রাতে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০১:০৩
Share: Save:

জমজমাট সন্ধ্যায় দুঃসাহসিক ডাকাতি হল সোদপুরের এক সোনার দোকানে। বৃহস্পতিবার বিটি রোডে ওই দোকানের শো-কেস থেকে সোনা-হিরে-প্ল্যাটিনামের সমস্ত গয়না লুঠ করে নিয়ে গেল ডাকাতেরা। রইল কিছু রুপোর অলঙ্কার। দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ডাকাতদের ছবি পেয়েছে পুলিশ। রাতেই ডাকাতদলের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।

বিটি রোডের সঙ্গে রাজা রোডের সংযোগস্থলে সার দিয়ে দোকান, লোকজনের ভিড়ে ঠাসা এলাকায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে পৌনে আটটার মধ্যে এমন ডাকাতি স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরাই। সেনকো গোল্ডের যে শো-রুমে এ দিন ডাকাতি হয়েছে, তার পাশে মিষ্টির দোকান, গাড়ির দোকান, ফ্ল্যাটবাড়ি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্যারাকপুরের কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলিশের নজরদারিতে কোথাও কোনও খামতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

তদন্তে জানা গিয়েছে, এ দিন ডাকাতেরা দূরে কোথাও গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটেই আসে। আট জনের দলটিতে তিন জনের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা থাকলেও বাকিদের মুখ খোলা ছিল। কারও হাতে বা কোমরে গোঁজা রিভলভার। কারও হাতে ভোজালি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সময়ে দোকানের ভিতরে প্রায় ১০ জন ক্রেতা ও ৭-৮ জন কর্মচারী ছিলেন। আট জনের দলটি দু’ভাগে ভাগ হয়ে অপারেশন চালায়। অভিযোগ, বাইরে পাহারায় ছিল তিন জন। বাকিদের মধ্যে দু’জন প্রথমে ভিতরে ঢোকে। তাদের পিছনে আরও তিন জন এসে বাইরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে দোকানের ভিতরে নিয়ে যায়। নিরস্ত্র ওই রক্ষীকে মারধরও করা হয়। মারধর করা হয় দোকানের কর্মচারীদেরও। লুঠপাট সেরে পায়ে হেঁটেই গাড়ি পর্যন্ত গিয়ে তাতে চেপে পালায় ডাকাতেরা।

পুলিশ জানায়, দোকানে ঢোকার সময়ে এক বার বোমা ফাটায় ডাকাতেরা। তার পরে ভিতরে থাকা ক্রেতা ও কর্মীদের রিভলভার, ভোজালি দেখিয়ে সমস্ত সোনা, হিরে ও প্ল্যাটিনামের গয়না ব্যাগে ভরে নেয়। বাদ দেয় শুধু রুপোর গয়না। দশ মিনিটের ‘অপারেশন’ শেষে বাইরে এসে পালানোর সময়ে ফের বোমা ফাটায় তারা। পুলিশের অনুমান, ওই সময়ে ওই মোড়ে এত লোকজন ছিল যে, দোকানের কর্মীরা চিৎকার করলে অন্তত ৫০-৬০ জন লোক জড়ো হয়ে যেতেন। তা মাথায় রেখেই ডাকাতেরা মোড়ের কাছে থাকা জনতাকে ভয় দেখাতে বোমা ছোড়ে বলে মনে করছে পুলিশ। স্থানীয়দের দাবি, প্রায় চারটি বোমার আওয়াজ পান তাঁরা। ভয়ে যে যার মতো পালালে ডাকাতেরা গাড়িতে বিটি রোড ধরে শ্যামবাজারের দিকে পালিয়ে যায়।

কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী রাতে জানান, দোকানের সিসিটিভির ফুটেজে বেশ কয়েক জন ডাকাতের মুখের স্পষ্ট ছবি মিলেছে। তিনি বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, ডাকাতেরা স্থানীয় দুষ্কৃতী নয়। আমাদের কমিশনারেটের অধীনে সব থানা ছাড়াও আশপাশের থানাগুলিকে ডাকাতদের ছবি পাঠিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’’ ডাকাতেরা ঝাড়খণ্ড বা বিহার থেকেও আসতে পারে, সেই সন্দেহও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। তাই রাজ্যের সীমানাগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশের একাংশের মতে, ডাকাতেরা পেশাদার নয়। তা না হলে এ ভাবে ঝুঁকি নিয়ে জনবহুল এলাকায় পায়ে হেঁটে ডাকাতির আগে দশ বার ভেবে দেখত তারা।

যে ভাবে দোকানের প্রতিটি কোণ থেকে গয়না নিয়েছে ডাকাতেরা, তাতে আগাম খোঁজখবর নিয়েই তারা এসেছিল বলে মনে করছে পুলিশ। তাদের সন্দেহ, দোকানের কোথায় কোথায় গয়না রাখা থাকে, তা জানা ছিল ডাকাতদের। ফলে ঘটনায় দোকানের কোনও কর্মী জড়িত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

burglary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE