Advertisement
০৭ মে ২০২৪

দখলের লড়াই বহুতলে, দুর্ভোগে রোগীরা

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সল্টলেকের সিটি সেন্টারের সামনে একটি বাণিজ্যিক বহুতলের সব ক’টি প্রবেশ পথ জোর করে আটকে রাখার অভিযোগ উঠল একদল ‘বাহুবলী’-র বিরুদ্ধে।

ঘটনাস্থলে পুলিশ। বৃহস্পতিবার, সল্টলেকে। — নিজস্ব চিত্র

ঘটনাস্থলে পুলিশ। বৃহস্পতিবার, সল্টলেকে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০০:১৭
Share: Save:

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সল্টলেকের সিটি সেন্টারের সামনে একটি বাণিজ্যিক বহুতলের সব ক’টি প্রবেশ পথ জোর করে আটকে রাখার অভিযোগ উঠল একদল ‘বাহুবলী’-র বিরুদ্ধে।

ওই বহুতলেই একটি চক্ষু হাসপাতাল, অস্থি চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। সেই বাড়িটির প্রধান গেট জোর করে বন্ধ রাখায় এ দিন ফিরে গেলেন অসংখ্য রোগী। অভিযোগ, পুলিশ সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলেও প্রায় ৬ ঘণ্টা তারা কার্যত নীরব দর্শক হয়ে থাকল। পুলিশ ১৪ জনকে গ্রেফতার করল, ততক্ষণে প্রচুর রোগী এবং একাধিক সংস্থার কর্মীরা বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন।

এ ভাবে জোর করে গেট বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে ওই বাড়িতে জিম চালানো সৌরভ সাহার বিরুদ্ধে। বাড়ির মালিকপক্ষের অভিযোগ অনুযায়ী, বুধবার রাত থেকেই গেটে তালা মেরে দিয়েছেন সৌরভ ও তাঁর বাহুবলীরা। অভিযোগ, সৌরভের ওই জিমে পুলিশ কর্তা, তাঁদের আত্মীয়, রাজনৈতিক নেতা ও সমাজের বহু প্রভাবশালীর যাতায়াত রয়েছে। পুলিশের একাংশের মতে, সেই কারণেই চক্ষু হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার মতো সাহস দেখাতে পেরেছেন ওই ব্যক্তি।

এ দিন সকালে সল্টলেকের ওই ডিডি ৩০ নম্বর বহুতলে গিয়ে দেখা যায় তার সবক’টি গেট বন্ধ। বাইরে প্রচুর লোক। কেউ হাসপাতালের কর্মী, কেউ রেস্তোরাঁর, অনেকে একটি ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছাত্র। কয়েক জন রোগীও ছিলেন। দূরে গাড়িতে রোদচশমা পরে বসে রয়েছেন শ্যামল বসু (৭০)। তাঁর ছেলে তিমির বসু বন্ধ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু যুবককে বার বার করে অনুরোধ করছেন গেট খুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই গেট খোলেনি। উপায় না দেখে বাবাকে নিয়ে ফেরত চলে যান তিমির।

ওই দশতলা বহুতলে মোট ১৮টি বাণিজ্যিক সংস্থার অফিস রয়েছে। ওই সব সংস্থায় প্রায় ৭০০ কর্মী কাজ করেন। চক্ষু হাসপাতালের ওটি ইনচার্জ সুমন মল্লিক বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন। কিন্তু সকালে এসে দেখি গেট বন্ধ।’’ তাঁর অভিযোগ, হাসপাতালে এ দিন ৯ জনের চোখে অস্ত্রোপচার করার কথা ছিল। তাঁরা সবাই
ফিরে গিয়েছেন।

ওই বাড়ির সাত তলায় অস্থি চিকিৎসা কেন্দ্রে বেলঘরিয়া থেকে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন কাবেরী দত্ত (৫০)। তিনি বলেন, ‘‘আজ সব বন্ধ। ফিরেই যেতে হবে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটের মধ্যে গোলমালের ফলে এই কাণ্ড। ওই বহুতলের অন্যতম মালিক অনিতা তাঁতিয়ার অভিযোগ, বহুতলের ৯ তলায় জিমের মালিক সৌরভ সাহা বুধবার রাত থেকে গুণ্ডাবাহিনী এনে বহুতলের দখল নিয়েছে। ভাঙচুর করেছে। তাঁদের আক্রমণে নিরাপত্তা রক্ষীদের দু’জন হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশকে জানিয়েও কাজ হয়নি।

এই অভিযোগ অস্বীকার করে জিমের মালিক সৌরভ সাহার দাবি, তাঁর জিমের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে সমস্যা ছিল। বাড়িওয়ালা নিজে সেই সমস্যার সমাধান করেননি। তাঁকেও মেরামতি করতে দেননি। বাধ্য হয়ে তিনি এ দিন নিজের লোক এনে ওই মেরামতির কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁদের কেউ বাড়ির গেট বন্ধ করেননি। তা হলে গেট কে বন্ধ করল? এ প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

পুলিশের দাবি, সকাল থেকে বার বার বলা সত্ত্বেও বাড়িওয়ালার তরফে মারধর, ভাঙচুর কিংবা জোর করে বহুতল বন্ধ করার অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পরে এ দিন সকাল সাড়ে এগারোটায় পুলিশের হস্তক্ষেপে বাহুবলীরা গেট খুলে দিয়ে ৯ তলায় ওই জিমের মধ্য চলে যায়। তার পরেও বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটের লোকজন আলোচনায় বসলে ফের উত্তেজনা ছড়ায়। হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষই। সে সময় কোনও পুলিশকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি।

দুপুর দেড়টার পরে বিধাননগরের তিনটি থানার আইসি-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দু’পক্ষের প্রায় ১৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তার পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ পদক্ষেপ করেছে।’’

কিন্তু সকালে লিখিত অভিযোগ না এলেও জোর করে গেট বন্ধ করে দেওয়া হল, রোগীরা ফিরে যেতে বাধ্য হলেন, সবটা দেখে শুনেও পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিল না, সে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE