জয়ের পর শম্পাদেবী।— নিজস্ব চিত্র।
জঙ্গলমহলের হাসি কী তবে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে? প্রশ্ন তুলে দিল মৌলাড়া!
নেপুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের মৌলাড়া গ্রামসংসদ আসনের উপনির্বাচনে খুড়শাশুড়ি ও বৌমার লড়াইকে এ র ইজ্জতের লড়াই হিসেবে নিয়েছিল তৃণমূল। সব রকম কৌশল ও পদক্ষেপ যে একেবারে জলে যাবে তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি শাসকদল। এ দিন ‘তৃণমূল’ খুড়শাশুড়ি শিবানী ঘোষকে মাত্র ৫৭ ভোটে হারিয়ে দিয়ে জয়ী হলেন বিরোধী জোটের নির্দল প্রার্থী শম্পা ঘোষ।
জয় ঘোষণার পরে শম্পাদেবী চওড়া হেসে বলেন, “অনেকেই ভোট দিতে পারেননি। নিরপেক্ষ ভোট হলে জয়ের মার্জিন অন্তত ৬০০ হত। এত ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসের মধ্যেও এই জয় প্রমাণ করল জঙ্গলমহলের মানুষ বাস্তবিকই ফের পরিবর্তন চাইছেন।” অথচ এই আসনের উপনির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূল শিবিরে তত্পরতা ছিল দেখার মতো। ভোটের আগের রাত থেকে এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন ব্লক তৃণমূলের তাবড় নেতারা। ভোটের দিন এলাকা দাপিয়ে বেড়িয়েছিল তৃণমূলের বাইক-বাহিনী।
এ দিন শম্পাদেবীর জয়ের ফলে জঙ্গলমহলের আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখছে তৃণমূল। জয়ের পরে বিরোধী জোটের নির্দল প্রার্থী শম্পাদেবীকে সবুজ আবির মাখিয়ে দেন অত্যুত্সাহী কর্মীরা। বিরোধী জোটের নেতাদের অবশ্য ব্যাখ্যা, সিপিএম ও বিজেপির পাশাপাশি, জোটের নির্দল প্রার্থী শম্পাদেবীকে সমর্থন করেছিল ঝাড়খণ্ড পার্টি। ঝাড়খণ্ডী দলের দলীয় পতাকার রং সবুজ। তাই জয়ের পরে ঝাড়খণ্ডী কর্মীরা শম্পাদেবীকে সবুজ আবির মাখিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূলের অন্দরের খবর, দলের বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরাই শম্পাদেবীকে এ দিন সবুজ আবির মাখিয়ে দেন। যা নিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছেন লালগড় ব্লক তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায়। বনবিহারীবাবুর অভিযোগ, “এলাকায় মুকুল রায়ের কিছু লোকজন রয়েছেন। ওদের সঙ্গে দলের একাংশ হাত মিলিয়ে অন্তর্ঘাত করায় আমাদের এভাবে হারতে হল। না হলে তৃণমূল প্রার্থীর জয় নিশ্চিত ছিল।”
রাজনৈতিক মহল সূত্রেরও খবর, পুরার পঞ্চায়েত প্রধান অঞ্জলি হেমব্রমের বকলমে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম মূলত তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি রিন্টু বিশ্বাস ও তাঁর গোষ্ঠীর লোকেরা নিয়ন্ত্রণ করেন। রিন্টুবাবু দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের অনুগামী। অন্য দিকে, রিন্টু-বিরোধী স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মুকুল রায়ের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিরোধী জোটের মুখোশের আড়ালে এই জয় আসলে মুকুল গোষ্ঠীরই জয়। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় অবশ্য বলেন, “ওই আসনে আমাদের পরাজয়ের ব্যবধান কমেছে।”
১৩ আসনের নেপুরা পঞ্চায়েতের ৭ জন সদস্য তৃণমূলের। বিরোধী জোটের ৬ পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে মৌলাড়া গ্রাম সংসদ থেকে নির্বাচিত সিপিএম সদস্য কাঞ্চন মণ্ডল ক্তিগত কারণে ইস্তফা দেন। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। কাঞ্চনবাবু ইস্তফা দেওয়ায় মৌলাড়া গ্রাম সংসদের শূন্য আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যায়। এই আসনে বিরোধী প্রার্থী শম্পাদেবীর জয়ের পরেও পঞ্চায়েতে আসনের বিন্যাসে (তৃণমূল-৭, বিরোধী জোট ৬) কোনও হেরফের হয়নি। ইতিমধ্যেই এক তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য গোপনে বিরোধী জোটের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বলে খবর। শাসক দলের কেবলমাত্র এক জন সদস্য বিরোধীদের আনাস্থা সমর্থন করলেই সেক্ষেত্রে নেপুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতার রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy