দিনভর বৃষ্টিতে নাজেহাল শহরবাসী। বুধবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
রসগোল্লা বিজয়ের রাত পোহাল নিম্নচাপে নাজেহাল হয়ে। হেমন্ত-কার্তিকের চিহ্নমাত্র নেই। বুধবারের জলরঙে আঁকা সকাল যেন ঘন শ্রাবণ।
শুরুটা অবশ্য হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে। টুপটাপ দু’-এক ফোঁটা পড়লেও অনেকেই তাতে তেমন আমল দেননি। কিন্তু বুধবার ভোর থেকে শুরু হওয়া নাছোড়বান্দা বৃষ্টি সারাদিন ভুগিয়ে ছাড়ল নদিয়া আর মুর্শিদাবাদকে। দিন পনেরো আগের নিম্নচাপের আতঙ্ক এখনও পিছু ছাড়েনি। তার মধ্যে ফের নিম্নচাপে সিঁদুরে মেঘ দেখছে সাধারণ মানুষ থেকে চাষি। ফসলের ক্ষতি আশঙ্কার সঙ্গে ডেঙ্গির ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকছে।
তবে বিরামহীন বৃষ্টিতে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে ২৩ ডিগ্রিতে। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে এমনটাই নাকি চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। অকাল বর্ষণে ব্যাহত হয়েছে জনজীবন। কৃষ্ণনগর থেকে কান্দি, নবদ্বীপ থেকে নিমতিতা। কার্যত ঘরবন্দি হয়ে কাটালো গোটা দিন। ব্যতিক্রম মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর। বুধবার সকালের দিকে সেখানে সামান্য দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি হয়েছে।
তবে সর্বত্রই এই দিন অফিস-কাছারি বাজার-হাটে হাজিরা ছিল চোখে পড়ার মতো কম। দুই জেলার বাজারেই বিকিকিনি ছিল নিতান্তই অল্প। গ্রাম থেকে শহরের বাজারে দৈনিক আনাজ বিক্রি করতে আসা চাষি কম এসেছেন। বরং খিচুড়ির আদর্শ আবহাওয়ায় এ দিন মুদির দোকানে মুগ ডালের সঙ্গে গোবিন্দভোগ বা তুলসীভোগের বিক্রি ছিল তুঙ্গে।
মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্সের জেলা সম্পাদক কল্যাণ সাহা বলেন, “একে সকাল থেকে বৃষ্টি, অন্য দিকে প্রয়াত প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেনের এদিন শেষকৃত্য ছিল। দুয়ে মিলে এ দিন বাজারে লোকজন কম এসেছিলেন।” পুজোর ছুটির পর স্কুল-কলেজ, অফিস আদালতে পুরোদমে ব্যস্ততা। কিন্তু বৃষ্টির দাপটে রেলস্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড, খেয়াঘাট কোথাও নিত্যযাত্রীদের ভিড় ছিল না। নবদ্বীপ মায়াপুরে বহিরাগতদের যে ভিড় এই সময়ে থাকে, এ দিন তা একেবারেই চোখে পড়েনি। বাস থেকে ট্রেন, সবই ছিল প্রায় যাত্রিহীন। পর্যটক কম ছিল হাজারদুয়ারিতেও। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পথে যাত্রী এবং বাসের সংখ্যা কমেছে। নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির তরফে অসীম দত্ত বলেন, “সারাদিনে হাতে গোনা যাত্রী ছিল। অল্প কিছু রুটে পরের দিকে বাস তুলে নিতে হয়। এই আবহাওয়া থাকলে বৃহস্পতিবার কি হবে বলা যাচ্ছে না।” নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির তরফে জানানো হয়েছে, এ দিন নিত্যযাত্রী থেকে দিনমজুর কেউই বড় একটা কাজে বের হয়নি।
খারাপ আবহাওয়ায় বাতিল হয়ে গিয়েছে নবদ্বীপ শহর এবং নবদ্বীপ উত্তর চক্রের বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও। ওই অঞ্চলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক খাইরুল মিদ্দা জানান, আগে থেকে ক্রীড়াসূচি ঠিক থাকলেও আবহাওয়ার জন্য এ দিন প্রতিযোগিতা বাতিল করা হয়। সবচেয়ে বিপদে মুর্শিদাবাদ বেলডাঙার কার্তিক পুজো উদ্যোক্তারা। শুক্রবার থেকে শুরু কার্তিক পুজো। শেষ পর্যায়ে প্রস্তুতির মুখে বৃষ্টিতে আকাশের মতোই মুখভার পুজো উদ্যোক্তাদের। দিনের তাপমাত্রা বেশি রাতে কম। এক দিন আগে আবহাওয়া ছিল এমনই। চিকিৎসকদের আশংকা, ফের নিম্নচাপের ফলে ডেঙ্গির দাপট বাড়তে পারে। সোমবার নবদ্বীপের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পেনশনের লাইভ সার্টিফিকেটের ফর্ম তুলতে গিয়ে ৪০ জনের পিছনে দাঁড়াতে হয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাখন দেবনাথকে। বুধবার তারি হয়েই গিয়েছিলেন। ব্যাঙ্কে ঢুকে অবাক। লাইনে কেউ নেই। কাউন্টার ফাঁকা। ঘাবড়ে গিয়ে তাকাতেই ব্যাঙ্ক কর্মী জানালেন ‘আপনিই আজ প্রথম’। তখন ঘড়িতে প্রায় সাড়ে ১১টা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy