Advertisement
০৮ মে ২০২৪

অধ্যক্ষকে ‘ডাকা হয়নি’ অনুষ্ঠানে, উঠল অভিযোগ

ছাত্রদের হাতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার হেনস্থা হওয়ার ঘটনায় অধ্যক্ষ কোনও ব্যবস্থা না-নেওয়ায় তাঁকে সুপারের দফতরের কর্মীদের একাংশ তাঁকে বয়কট করছেন বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫২
Share: Save:

ছাত্রদের হাতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার হেনস্থা হওয়ার ঘটনায় অধ্যক্ষ কোনও ব্যবস্থা না-নেওয়ায় তাঁকে সুপারের দফতরের কর্মীদের একাংশ তাঁকে বয়কট করছেন বলে অভিযোগ। রবিবার ‘নির্মল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল’ নামে সাফাই অভিযান করা হয়। সেখানে ডাকা হয়নি অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায়কে।

জেলাশাসক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অনুরাগ শ্রীবাস্তব, মহকুমাশাসক পানিক্কর হরিশঙ্কর-ও, সুপার এবং তাঁর দফতরের আধিকারিক, কর্মীরা অধিকাংশই ছিলেন। অধ্যক্ষ অবশ্য বলেন, ‘‘বয়কট বলব না। সমন্বয়ের কিছু অভাব হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।’’ সুপারের দফতর থেকে জানানো হয়েছে, জেলাশাসক হাসপাতালের আধিকারিকদের নিয়ে একটি ‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ’ করেছেন। তার মাধ্যমেই তিনি এ দিনের কর্মসূচি জানিয়েছিলেন। অধ্যক্ষের মোবাইলে সেই ব্যবস্থা না থাকায় তিনি জানতে পারেননি।

বাস্তবে, ক্যাম্পাস থেকে অটো স্ট্যান্ড তুলে দেওয়ার দাবিতে গত ২২ ডিসেম্বর অধ্যক্ষের দফতরে ছাত্রদের একাংশের ঘেরাও আন্দোলন চলার সময় সুপারকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কথা বলার পর জরুরি কাজে তিনি উঠে দফতরে যেতে চাইলে ছাত্ররা তাঁকে বাধা দেয়, হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। দফতরে ফিরে এসে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রতিবাদ জানিয়ে অধ্যক্ষের দফতরে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কর্মী, আধিকারিকরা। প্রকাশ্যে না জানালেও এর পর থেকেই সুপারের দফতরের ওই কর্মী আধিকারিকরা কৌশলে অধ্যক্ষকে বয়কট করছেন বলে হাসপাতালের একটি সূত্রই জানিয়েছে। এ দিনের ঘটনা তারই উদাহরণ বলে তাঁদের দাবি।

ওই দিন ঘটনার সময় অভীক দে-সহ যারা ছিলেন তাদের অধিকাংশই এখন আর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ছাত্র নন। তারা পাশ করে বেরিয়ে গিয়েছেন। অথচ তার পরেও দিনের পর দিন ক্যাম্পাসে থাকছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভীক বলেন, ‘‘কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়ে গিয়েছি ঠিকই। পরিচিত বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতেই এসেছিলাম।’’ তিনি আন্দোলনের সময় অধ্যক্ষের দফতরে ছিলেন কেন, তার জবাব মেলেনি।

হেনস্থার ঘটনা নিয়ে এ দিন সুপারের সঙ্গে কথা বললেন জেলাশাসক। হাসপাতালের সুপার নির্মল বেরা ছাত্রদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না জানালেও এ দিন জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিস্তারিত রিপোর্ট পেলে তা স্বাস্থ্য দফতরকেও জানাব।’’ কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত নন, যাঁদের কাজ নেই তাঁদের কোনও ভাবেই ক্যাম্পাসে থাকতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ, পুলিশের সঙ্গে কথা বলে, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেব।’’

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা কিসানগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ সমর দেব বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে বলেই জানতাম। তাই এই ঘটনা দুঃখজনক।’’ ইন্ডিয়ান সাইক্রিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক গৌতম সাহা ঘটনা জানার পর সুপারকে ফোন করে বিস্তারিত শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘‘অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। যারাই করে থাকুক তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।’’

ঘটনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না-নেওয়ায় অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়েও চিকিৎসক, কর্মী মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকী উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে অবৈধ ভাবে ছুটি নিয়ে আসছেন না এমন চিকিৎসক-অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে তিনি সঠিক ভাবে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলেও অভিযোগ। অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায়ের দাবি, ‘‘ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তা নয়।’’ ঘটনার জেরে ইতিমধ্যেই অন্তত ৭ জনকে শোকজ করা হবে বলে দাবি করেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Principal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE