Advertisement
১০ মে ২০২৪

উত্তরের কড়চা

কোনও গাছের ডালে দুপুরে হুকাস বসে দোল খায়। পড়ন্ত বিকেলে কোথায় ঘাসের উপরে পাথুড়িয়া ফড়িং উড়ে বেড়ায়। মোহনচূড়া পাখি দেখতে কেমন হয়, নীলটিঙ্গি প্রজাপতির পাখায় কটা রং? এমন নানা প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না মিললেও, কোথায় গেলে উত্তরগুলি মিলতে পারে তার হদিস পাওয়া যাবে বন দফতরের উদ্যান ও কানন শাখার প্রকাশিত পুস্তিকায়।

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০১:৪৩
Share: Save:

ওই দেখা যায় মোহনচূড়া
পাখি-পতঙ্গ পুস্তিকা

কোনও গাছের ডালে দুপুরে হুকাস বসে দোল খায়। পড়ন্ত বিকেলে কোথায় ঘাসের উপরে পাথুড়িয়া ফড়িং উড়ে বেড়ায়। মোহনচূড়া পাখি দেখতে কেমন হয়, নীলটিঙ্গি প্রজাপতির পাখায় কটা রং? এমন নানা প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না মিললেও, কোথায় গেলে উত্তরগুলি মিলতে পারে তার হদিস পাওয়া যাবে বন দফতরের উদ্যান ও কানন শাখার প্রকাশিত পুস্তিকায়। উদ্যান ও কানন শাখার শিলিগুড়ির মণ্ডল থেকে বইটি প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। বন দফতরের উত্তরবঙ্গের যতগুলি পার্ক রয়েছে তার তথ্য রয়েছে বইয়ে। সঙ্গে রয়েছে কোন পার্কে কোন কোন পাখি, পতঙ্গ এবং প্রাণী দেখা যায়। কোচবিহারের স্টেশন উদ্যানে দীর্ঘদিন ধরে একটি বেজি পরিবার নিয়ে রয়েছে তাও জানা গেল বইটি থেকে। জলপাইগুড়ি শহরের বুক চিরে যাওয়া করলা নদীর পাড়ে করলা উদ্যানে আবাবিল পাখি ডানায় রোদ লাগিয়ে উড়ে বেড়ায় বা চিতা নামের প্রজাপতি দেখতে কেমন তা দেখতে আলিপুরদুয়ার উদ্যানে যেতে হবে, তাও এই পুস্তিকার সৌজন্যেই জানা। শুধু তথ্য নয়, পুস্তিকায় রয়েছে সব কটি উদ্যানের উপগ্রহ চিত্র। রয়েছে উদ্যানে থাকা সব গাছের নাম এবং বৈশিষ্ট। পার্কের গাছগাছালি, ঘাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাখি এবং পতঙ্গদেরও সকলের নাম, বৈশিষ্ট লেখা রয়েছে। রয়েছে সরীসৃপদের আস্তানা, এবং আচার আচরণের খবরও। ছিয়াত্তর পৃষ্ঠার বইটির ছাপাও ঝকঝকে। সামনের হলুদ মলাটে খয়েরি রঙে লেখা ‘উদ্যানে জীব বৈচিত্র’। আর মলাটের ভিতরে বেনেবউ, মধুচিল, ডাহুক, হরিয়াল, তিলেঘুঘু, কাজল পাখির সংসারের সুলুক সন্ধান।

হারানো খেলা

এলাটিং বেলাটিং সই-ই লো, কীসের খবর আ-আইলো! সমবেত ছড়া বলার পরেই এক বালিকাকে নিয়ে শুরু হয়ে যেত দু’পক্ষের টানাটানি। এই সব খেলায় শুধু যে শরীরচর্তা হত তা নয়, ছিল মিলেমিশে খেলার মজাও। কিতকিত, এক্কা-দোক্কা, ডাংগুলি, কানামাছি, ছুরপাল, রসকস, বুড়িছোঁয়া, হাডুডু থেকে শুরু করে মারবেল বা ডাংগুলির মতো খেলাও হারিয়ে যেতে বসায় উদ্বিগ্ন ক্রীড়াপ্রেমীরা। গ্রাম তো বটেই, আধা শহর বা গঞ্জেও আর চোখে পড়ে না শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের এমন সব খেলায় মেতে উঠতে। অথচ ওই সব খেলা গ্রাম বাংলার সমাজ-সংস্কৃতির সঙ্গে এক দেড় দশক আগেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েছিল। লুপ্তপ্রায় ওই খেলাগুলি নিয়ে বালক-বালিকা ও কিশোর-কিশোরীদের ফের আগ্রহী করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের চণ্ডীপুর প্রোগ্রেসিভ ইয়ুথ ক্লাব। ক্লাবের তরফে আগামী ১৪ জুন একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ক্লাবের বার্ষিক ক্রীড়াতেও এ বার থেকে ওই খেলাগুলিও প্রতিযোগিতার মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ক্লাব সভাপতি রেজা রাজি বলেন, হাডুডু, ডাংগুলি, কানামাছি বা বুড়ি ছোয়ার মতো খেলা শরীরচর্চার পাশাপাশি ইন্দ্রিয়গুলিকে সতেজ করে তোলে। মোবাইল ফোন আর টেলিভিশন সিরিয়ালের প্রজন্মেও যাতে হারিয়ে না যায়, সেজন্য বার্ষিক ক্রীড়ায় বেশ কিছু খেলা নিয়ে প্রদর্শনীও করা হবে।

ঘরের জিনিস

বালুরঘাটের হোসেনপুরের চৌধুরী বাড়িতে জামাইষষ্ঠীর বিশেষত্ব, জামাইয়ের পাতে যা কিছু পড়ে সব বাড়ির। ঢেঁকিতে হলুদ কোটা থেকে গাইয়ের দুধ দুইয়ে দই, ছানা, ক্ষীর তৈরি করে নানা স্বাদের মিষ্টি, দই ও পিঠে—সব বাড়িতে তৈরি। জামাইষষ্ঠীর এক দিন আগেই শুরু হয়ে যায় তোড়জোড়। অশীতিপর গৃহকর্ত্রী ৮৫ বছরের সীমা চৌধুরীর নির্দেশ মেনে চলে আয়োজন। বাড়ির ছেলে-বউয়েরা দূর্বা, পাকুড়পাতা সংগ্রহ থেকে বাড়িময় আলপনা দিয়ে রান্নাবান্নার আয়োজনে কোমর বেঁধে লেগে পড়েন। ষষ্ঠীর স্থানে পুজোর পর রীতি মেনে মাটিতে কাঠের পিঁড়ি পেতে জামাইকে বসিয়ে, পিতলের দুধ-জলের ঘট থেকে ষাট-ষষ্ঠীর জল ছিটিয়ে শুরু হয় ভুরিভোজ পর্ব। সাবেকিয়ানা বজায় রেখে তালপাতার পাখা হাতে বসে থাকেন শাশুড়ি সীমাদেবী। মেনুতে থাকে পাটভাজা, ছোলার ডাল, ঝিঙেপোস্ত, পটলের দোরমা, পাবদা মাছের পাতুরি, চিতল মাছের কালিয়া, কাতলার ঝাল, পাঁঠার মাংস, আম পোড়ার চাটনি। শেষ পাতে ক্ষীরের মালপোয়া, নাড়ু, ক্ষীরের পায়েস, বাড়ির তৈরি মিষ্টি দই, টক দই।

গরুর গািড়র ট্রাক-টায়ার

দশ বছর আগেও গরুর গাড়ির চাকা বানিয়েই সংসার চলত দেবেন্দ্র বসাকের। এখন শালকাঠের তৈরি সে সব চাকার চাহিদা নেই। ‘‘দাম পড়ে তিন-চার হাজার টাকা। গরুর গাড়িও কমে গিয়েছে। যে ক’টা রয়েছে, তাতে ট্রাকের পুরনো টায়ার লাগিয়ে চালাচ্ছে মালিকরা।’’ সত্যিই হারিয়ে যেতে বসেছে গরুর গাড়ি। এক সময় কোচবিহারের খেতের ফসল ঘরে তোলা হোক, বা গ্রাম থেকে শহরে যাতায়াত, গরুর গাড়িই ছিল ভরসা। বছর দশেক আগেও গ্রামে গরুর গাড়ি চোখে পড়ত। এখন তার জায়গা নিয়েছে মোটর-চালিত ভ্যান। বিশেষ করে ভুটভুটি। তাতে খুব কম সময়ে যাতায়াত করা যায়। বেশির ভাগ গ্রামে এখন পাকা রাস্তা হয়ে গিয়েছে। তাই খানাখন্দ, কাদাজল পেরোতেও গরুর উপর ভরসা করতে হয় না। বরং মোটরচালিত ভ্যানে খুব কম সময়ে গন্তব্যে যেতে পারছেন বাসিন্দারা। কোচবিহার সদরের ঠকের বাজারের চাষি ইয়াকুব আলি ৪০ বছর ধরে গরুর গাড়িতে ধান, গম, পাট বাজারে নিয়ে যেতেন। এখন একটা গাড়ি, সেটাও সে ভাবে ব্যবহার হয় না। ভুটভুটি ভাড়া করে নেন। ‘‘খরচ কম, সময়ও বাঁচে। ভালবাসি বলেই রেখে দিয়েছি গরুদুটোকে,’’ বললেন তিনি।

বাজ-কাহিনি

ধুলোকাদায় অচেনা হয়ে ওঠা ল্যান্ডরোভার থেকে খরখরে স্বরে মাঝে-মাঝেই ককিয়ে উঠছে ম্যানপ্যাক—‘সিএফ কলিং বাজ-৮...রেসপন্ড ইমিডিয়েটলি বাজ-৮..।’ সামনে চরাচর জুড়ে জ্যোৎস্না ভাসা ধান খেত। কোমর সমান উঁচু সেই নিবিড় খেতের মাঝে তিনি এবং সে। ম্যানপ্যাকে বড় কর্তার ডাকে সাড়া দেওয়ার সময়ই ছিল না তাঁর। কোচবিহারের সেই রাতটা এখনও মনে আছে কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তামাম বন দফতর যাঁকে ‘বাজ-৮’ স্কোয়াড লিডার হিসেবেই চেনে। জলপাই সবুজ ছোপ মিলিটারি ফ্যাটিগটা কোমর থেকে তুলে কাঞ্চন দেখাচ্ছেন চিতাবাঘের ধারাল নখের সেই গভীর স্মৃতি। বলছেন, ‘‘চিতাবাঘটা গোটা তিনেক মানুষ মারার পরে সে বার তলব করা হয়েছিল আমাকে। কোচবিহারের থানেশ্বরে সেই রাতে জনা চারেক সঙ্গী নিয়ে মাঠে নামতেই বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার উপরে। দাগটা এখনও রয়ে গিয়েছে।’’ শুধু শরীরে নয়, মনেও এমন বহু দাগ রয়ে গিয়েছে তাঁর। বলছেন, ‘‘ট্রিগারে হাত পড়েছে বহু বার। কিন্তু অমন সুন্দর একটা প্রাণীকে মারতে ভাল লাগে? দিন কয়েক মেঘলা হয়ে থাকে মন।’’ যাঁর আস্তিনে রয়ে গিয়েছে— ‘রোগ’ হাতি থেকে চিতাবাঘ, বাইসন থেকে চোরাশিকারি এমনকী বক্সার জঙ্গল দাপিয়ে বেড়ানো উগ্রপন্থীদের নির্ভুল নিশানায় মুখ থুবড়ে ফেলে দেওয়ার কাহিনী। সদ্য অবসর নিয়েছেন। কিন্তু ঘোর মিশুকে আর দিলখোলা মানুষটা এখনও রয়ে গিয়েছেন জল-জঙ্গল, বাঘ-হরিণের ছায়ায়। কখনও ডুয়ার্সে হাতি, কখনও বা সুন্দরবনে ঘুরে ডব্লু ডব্লু এফের হয়ে বাদাবন সংরক্ষণের কাজে ডুবে রয়েছেন বাজ-৮।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE