Advertisement
১০ মে ২০২৪
অভিযোগ বাঁকুড়া মেডিক্যালে

ডান দাঁত অবশ করে উঠল বাঁ দাঁত

কখনও নার্সের গাফিলতিতে শিশুর আঙুল কাটা যাচ্ছে। কখনও রক্ত নেওয়ার রবারের নল খুলতে যাওয়ায় রক্ত জমে গ্যাংগ্রিন হয়ে যাওয়া আড়াই বছরের শিশুর ডান হাতই কেটে বাদ দিতে হচ্ছে। আর এ বার ভুল দাঁত তুলে ফেলার অভিযোগ!

তোলার পরে।—নিজস্ব চিত্র।

তোলার পরে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:১৬
Share: Save:

কখনও নার্সের গাফিলতিতে শিশুর আঙুল কাটা যাচ্ছে। কখনও রক্ত নেওয়ার রবারের নল খুলতে যাওয়ায় রক্ত জমে গ্যাংগ্রিন হয়ে যাওয়া আড়াই বছরের শিশুর ডান হাতই কেটে বাদ দিতে হচ্ছে। আর এ বার ভুল দাঁত তুলে ফেলার অভিযোগ!

বারবার অভিযোগের কাঠগড়ায় সরকারি হাসপাতাল। বালুরঘাট থেকে আসানসোল হয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। বাঁকুড়া সদর থানার শালবনির বাসিন্দা, দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ঈশিতা ঘোষের ডান দিকের একটি খারাপ দাঁত তুলে নেওয়ার কথা ছিল শুক্রবার। অভিযোগ, তার বদলে বাঁ দিকের খারাপ দাঁত তুলে ফেলেন চিকিৎসক। এমনকী, বাঁ দিকের দাঁতে অবশ করার ইঞ্জিকেশন দিয়ে ডান দিকের জাঁত তুলেছেন চিকিৎসক বলেও অভিযোগ ঈশিতার বাবা সুভাষ ঘোষের। ভুল করে ভুল দাঁত তোলা হয়েছে মেনে নিলেও অন্য দাঁতে ইঞ্জেকশন দেওয়ার অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট ডাক্তার। রোগী পক্ষের অভিযোগ শোনার পরে বাঁকুড়া মেডিক্যালের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “এই ঘটনা কাম্য নয়। তদন্ত কমিটি গঠন করে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

এই প্রথম নয়। বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এর আগেও বহুবার উঠেছে। কয়েক বছর আগে এক সদ্যোজাতের আঙুলের চ্যানেল খুলতে গিয়ে আঙুলটাই কেটে দিয়েছিলেন এক আয়া। অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর মৃত্যুর জন্য সঠিক চিকিৎসার অভাবকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন রোগীর আত্মীয়েরা। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানান, এমন কোনও ঘটনার কথা তাঁকে জানানোই হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘পরপর এ সব কী হচ্ছে! যদি এই অভিযোগ সত্যি হয়, তা হলে বলব, কাজের ক্ষেত্রে এতটা অমনোযোগ সত্যিই বরদাস্ত করা যায় না। আমি বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।’’

ঈশিতার বাবা সুভাষবাবু জানান, সাত দিন আগে বাঁকুড়া মেডিক্যালের আউটডোরে মেয়েকে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। তখন ঈশিতার ডান দিকের একটি দাঁত খারাপ হয়ে গিয়েছে জানিয়ে সেটি তুলে ফেলতে বলেছিলেন চিকিৎসক। সেই মোতাবেক মেয়েকে এ দিন হাসপাতালের দন্তবিভাগে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মেয়েকে দন্তবিভাগে বসিয়ে দিয়ে তিনি বাইরে বেরিয়ে আসেন। কিছুক্ষণ পরে মেয়ের কান্না শুনে ভিতরে ঢুকে দেখেন মুখে দিয়ে প্রচণ্ড রক্ত বের হচ্ছে। সুভাষবাবু বলেন, “অবশ করার ইঞ্জেকশন ঠিক দাঁতেই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ভুল দাঁত তুলে দেওয়ায় আমার মেয়েকে এত কষ্ট পেতে হল। ওর মুখ ফুলে গিয়েছে। ভাল করে কথাও বলতে পারছে না।’’ এর পরেই তিনি হাসপাতাল সুপারের কাছে অভিযোগ জানাতে যান। সুপার নিজেও আউটডোরের প্রেসক্রিপশন দেখে ডাক্তারদের ভুল হয়েছে বলেও জানান বলে দাবি করেছেন সুভাষবাবু। হাসপাতাল থেকে দুপুরে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসেন সুভাষবাবু। বাড়িতে ফিরেও ঈশিতার যন্ত্রণা কমেনি। সুভাষবাবুর দাবি, “এই ঘটনার জন্য দোষীদের শাস্তি চাই।’’

হাসপাতালের দন্ত বিভাগের প্রধান এবং এ দিন আউটডোরের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ইন্দ্রনীল কুলোভি মেনেছেন, ভুল দাঁত তোলা হয়েছে। তবে, তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই মেয়েটির যে দাঁতটি ভুল করে তুলে দেওয়া হয়েছে, ঘটনাচক্রে সেটিও খারাপ দাঁত ছিল। প্রেসক্রিপশনে ডান ও বাঁ দিকের ওই দু’টি দাঁতই তুলতে বলা হয়েছে।’’ এই ভুল হল কী করে? ইন্দ্রনীলবাবুর জবাব, “এ দিন ডান দিকের দাঁতটিই তোলার কথা ছিল। ওই ছাত্রীটি প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছিল ও কান্নাকাটি করছিল। এই সব কারণেই ভুল বোঝাবুঝির জেরে বাঁ দিকের দাঁত তুলে ফেলা হয়েছে।’’ তাঁর উপস্থিতিতে এক মেডিক্যাল অফিসার ও হাউসস্টাফ এই কাজ করেছেন বলেও তিনি জানান। তবে, ইঞ্জেকশন সংক্রান্ত সুভাষবাবুর অভিযোগ তিনি মানতে নারাজ। ইন্দ্রনীলবাবুর দাবি, “যে দাঁত তোলা হয়েছে, তাতেই ইঞ্জেশন দেওয়া হয়েছিল। তাই অন্য দাঁতে ইঞ্জেকশন দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা।’’

ক্ষতিগ্রস্ত দাঁত ফেলে রেখে সুস্থ দাঁত তুলে নেওয়া কিংবা ভাঙা পা ফেলে রেখে আস্ত পায়ে প্লাস্টার করা ঘটনা নিয়ে নানা রসিকতা চালু রয়েছে। বছর কয়েক আগে এ রাজ্যের সেরা সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমে এক যুবকের পায়ে এমন ভুল অস্ত্রোপচার হওয়ার ঘটনা সামনে আসায় তোলপাড় হয়েছিল। বাঁকুড়া মেডিক্যালের ক্ষেত্রে ডান দিকের বদলে বাঁ দিকের খারাপ দাঁত তোলা হওয়াকেও ‘মারাত্মক গাফিলতি’ হিসাবেই দেখছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘এক্ষেত্রে ভুল করেও খারাপ দাঁত তোলা হয়েছে। কিন্তু, ভাল দাঁতও তো তোলা হয়ে যেতে পারত! তা ছাড়া, শিশুর যন্ত্রণার কথাও মাথায় রাখতে হবে। পরিস্থিতি কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে যে একটি শিশুর চিকিৎসা করার সময়েও ডাক্তারদের ন্যূনতম ভ্রূক্ষেপটুকুও থাকছে না! দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এই ধরনের গাফিলতি বন্ধ করা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE