উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নার্সকে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় নার্সের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। শনিবার সকাল থেকে মেডিক্যাল কলেজের সুপার নির্মল বেরার ঘরের সামনে অবস্থান শুরু করেন তাঁরা। বিকেলের পরে সুপার তাঁর অফিসে গেলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে অবস্থান তুলে নেন তাঁরা। পক্ষান্তরে, ওই নার্সের দাবি, নিজেদের লোককে বাঁচাতেই ইন্টার্নরা সুপারকে ‘চাপে’ রাখতে চেষ্টা করছেন।
মেডিক্যাল কলেজের মহিলা ওয়ার্ডে নিরাপত্তার অভাবে রাতেই বাড়ি চলে গিয়েছেন বলে জানান ওই নার্স। ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ার পর থেকে বিভিন্নভাবে কটূক্তি করে তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল বলেও জানান তিনি। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন হাসপাতালের কর্মীরাও। কর্মীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইন্টার্নরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করার জন্য পাল্টা চাপ দিচ্ছে।
এ দিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে সুপারের ঘরের সামনে জমায়েত করেন ইন্টার্নরা। সুপারের ঘরের বাইরে অবস্থান শুরু করেন। বিকেল ৪টা নাগাদ সুপার মেডিক্যাল কলেজে গেলে তাঁর কাছ থেকে নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস নিয়ে তারপর অবস্থান উঠে যায়। ইন্টার্নদের চাপের মুখে সুপার বলেন, ‘‘গোটা ব্যপারটিতে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ গোটা ব্যপারটি সহানুভূতির সঙ্গেই দেখছে।’’ আগের দিনও তিনি তদন্ত হচ্ছে বলে জানান। ফলে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কেন ফের বিবৃতি দেওয়ার প্রয়োজন হল জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, ‘‘আমাকে ইন্টার্নরা ঘেরাও করেছিলেন। তদন্ত কমিটি সমস্ত দিক বিচার করেই সিদ্ধান্ত নেবে।
ইন্টার্নদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গোটা ব্যপারটিই সাজানো। এক ইন্টার্ন অর্চক রায় বলেন, ‘‘ওই নার্স বরাবরই দুর্ব্যবহার করেন। ইন্টার্নদের সঙ্গে ঠিকমত ব্যবহার করেন না। কিছু বলতে গেলে পাল্টা চোটপাট করেন। ওই ঘটনাটি পুরোপুরি সাজানো বলেই আমরা মনে করছি। ওই নার্সের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার চিন্তা ভাবনা করছি।’’ অন্য একজন ইন্টার্ন অভীক দে অভিযোগ করেন, ‘‘কোনও বিষয়ে অভিযোগ থাকতেই পারে। তবে এইভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক নয়।’’ এ দিন অবস্থান বিক্ষোভে সামিল ছিলেন অরণ্য প্রাঞ্জলও। তিনিও প্রসূতি বিভাগেই ইন্টার্নের কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি অভিযুক্ত বিবেক জায়সবালকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। ওঁকে ফাঁসানো হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।’’ তবে এ দিনও অভিযুক্তকে অবস্থানে দেখা যায়নি। তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতে চান না বলে জানান তাঁর সহকর্মীরা।
এ দিন অভিযোগকারী মহিলা আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান। এমনকী শুক্রবার সকালে ভর্তি হওয়ার পরে শুধু একবার পেন কিলার দেওয়া ছাড়া তাঁর কোনও রককম চিকিৎসা হয়নি বলেও তিনি জানান। তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘চিকিৎসা তো হয়ইনি, তার উপরে মাঝে মধ্যেই ইন্টার্নরা অনেকেই এসে বিভিন্নভাবে আমাকে উত্যক্ত করেছেন। ফলে রাতে থাকার সাহস পাইনি।’’ তাঁর বিরুদ্ধে বাজে আচরণের অভিয়োগের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্ত ইন্টার্নকে বাঁচাতেই আমাকে দোষী সাব্যস্ত্ করার চেষ্টা চলছে।’’ নিজেদের তাঁর অভিযোগ সম্বন্ধে জানেন না বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত নার্সিং সুপার পারুল দাস। তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবারের পর অভিযোগকারী নার্সের সঙ্গে কথা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। যা বলার সুপার বলবেন।’’ তাঁর দাবি ওই নার্সের মোবাইল ফোন সুইচড অফ রয়েছে। যদিও তাঁর সঙ্গে ফোনেই কথা হয়েছে। তবে কর্মচারী সংগঠনগুলি ওই নার্সের পাশে দাঁড়িয়েছে। কর্মচারী সংগঠনের সম্পাদক প্রশান্ত সরকার বলেন, আমরা চাই একজন মহিলা যখন কোনও অভিযোগ করছেন, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখে তার বিচার হোক। আশা করছি তদন্ত নিরপেক্ষ হবে। সুপার মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন, তার ফল দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।’’ তবে নিরাপত্তা নেই বলে দাবি তুলেছেন ইন্টার্নরাও। তাঁরাও মনে করছেন নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার। যদিও নিরাপত্তা নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে নতুন লোক যোগ না দেওয়া পর্যন্ত কিছু করার নেই বলে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy