Advertisement
০৮ মে ২০২৪
সম্পাদকীয়

অচিন ভোজন

২০১৫ সনে একটি নূতন প্রবণতা: গৃহস্থের সহিত অচেনা মানুষের নৈশ আহার উপভোগ। অর্থাৎ, পেয়িং গেস্ট রাখিবার ন্যায়, ‘হোম স্টে’ বন্দোবস্তে বেড়াইতে গিয়া অচেনা মানুষের বাড়িতে উঠিয়া তাহাকে ভাড়া দিবার ন্যায়, এই বার লোকে খাইতে যাইবে কোনও এক সাধারণ মানুষের বাড়িতে, খাইবার টেবিলে বসিয়া আপ্যায়ক-পরিবারটির সহিত গল্প করিতে করিতে সকলে গৃহস্থের প্রস্তুত খাবার খাইবে, আরও কিছু ক্ষণ গল্পগুজব করিয়া ফিরিয়া আসিবে।

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৫ ০০:২০
Share: Save:

২০১৫ সনে একটি নূতন প্রবণতা: গৃহস্থের সহিত অচেনা মানুষের নৈশ আহার উপভোগ। অর্থাৎ, পেয়িং গেস্ট রাখিবার ন্যায়, ‘হোম স্টে’ বন্দোবস্তে বেড়াইতে গিয়া অচেনা মানুষের বাড়িতে উঠিয়া তাহাকে ভাড়া দিবার ন্যায়, এই বার লোকে খাইতে যাইবে কোনও এক সাধারণ মানুষের বাড়িতে, খাইবার টেবিলে বসিয়া আপ্যায়ক-পরিবারটির সহিত গল্প করিতে করিতে সকলে গৃহস্থের প্রস্তুত খাবার খাইবে, আরও কিছু ক্ষণ গল্পগুজব করিয়া ফিরিয়া আসিবে। ইহার জন্য তাহাকে যে অর্থ ব্যয় করিতে হইবে তাহাও খ্যাত রেস্তরাঁর তুলনায় বহুলাংশে কম, মেনুটি পূর্বেই জানা থাকিবে ও বলিয়া রাখা যাইবে ঝাল কম দিবার কথা, কোনও তাড়াও থাকিবে না, পরবর্তী খদ্দের আসিয়া দাঁড়াইয়া আছে বলিয়া কেহ টেবিলে বিল ফেলিয়া দিয়া যাইবে না। বহু ওয়েবসাইট এই ‘শেয়ারিং’ বা ‘সাধারণ মানুষের ভাগাভাগি করিয়া লওয়া’র ভিত্তিতে ব্যবসায় শুরু করিয়াছে, তাহারা সহস্র বিক্রেতা ও ভোক্তাকে মিলাইয়া দেয়, এবং বলে, সাধারণ লোক নিজের যাহা রহিয়াছে তাহা ব্যবহার করিয়াই কিছু পয়সার মুখ দেখিতে পারেন। অন্য দিকে, সাধারণ লোক অসাধারণ পয়সা না খরচ করিয়াই উত্তম ভোগ করিতে পারেন।

ওয়েবসাইটগুলি অাপ্যায়ক গৃহস্বামী (বা গৃহস্ত্রী) বাছিতে তাঁহাদের সাক্ষাৎকার লইতেছে, তাঁহাদের প্রস্তুত খাদ্য চাখিয়া দেখিতেছে, নিত্যনূতন খাদ্য প্রস্তুত করিতেও উৎসাহ দিতেছে। পার্শ্ববর্তী বাথরুমটি পরিচ্ছন্ন রাখিতে হইবে, সেই শলাও দিতেছে। কিছু দেশে আইনি আপত্তি উঠিয়াছে, বলা হইয়াছে, ইহা রেস্তোরাঁ-ব্যবসায়ই বটে, কেবল ঘুরাইয়া নাক দেখাইয়া, লাইসেন্স ফাঁকি দেওয়া হইতেছে। উত্তরে বলা হইয়াছে, এইটিকে বন্ধুদের সহিত হইহই করিয়া খাবার ভাগ করা হিসাবেই দেখা যাইতে পারে, কেবল বন্ধুরা কিছু নূতন। অধিকাংশ খাদ্য-প্রস্তুতকারী গৃহই কাণ্ডটি সপ্তাহে দুই দিনের অধিক করিয়া উঠিতে পারে না, আর এক দিনে হয়তো অতি সামান্য সংখ্যক মানুষকেই আপ্যায়ন করা যায়। তবে প্রক্রিয়া নহে, এই ক্ষেত্রে যাহা নজর করা প্রয়োজন: মানবিক স্পর্শকে ব্যবসায়ের আকর্ষক উপাদান হিসাবে উপস্থাপন।

এই নূতন পরামর্শ বলিতেছে, হোটেলে-রেস্তোরাঁয় আপনি প্রবল স্বাচ্ছন্দ্য পাইতেছেন, চতুর্দিকে বৈভবের ঔজ্জ্বল্য আপনার ইন্দ্রিয়গুলিকে তৃপ্ত করিতেছে, কিন্তু ‘শেয়ারিং’ সমৃদ্ধ পরিষেবায় আন্তরিকতা অধিক। সর্বোপরি, এইখানে আপনি নূতন মানুষের সহিত পরিচিত হইতে পারিতেছেন। হয়তো নূতন বন্ধুত্বেরও সূচনা হইতেছে। ওয়েটার যতই কেতাদুরস্ত হউন, বা ম্যানেজার যতই সৌজন্যপূর্ণ, আপনি কি খাইতে খাইতে তাহাদের সহিত খোশগল্প জুড়িয়া দিতে পারিবেন? আপনি যদি টুরিস্ট হন, তাহা হইলে এই উপায়ে নূতন স্থানকে প্রকৃষ্ট রূপে জানিবেন। বেড়াইতে গিয়া জাদুঘর বা সুউচ্চ মিনার দেখিবার অপেক্ষা, একটি স্থানীয় মানুষের গৃহে ঢুকিয়া, তাহাদের ঘরে বসিয়া গল্প করিয়া, তাহাদের নির্মিত স্থানীয় খাদ্য খাইয়া একটি দেশ ও জাতির সহিত যে নিবিড় পরিচয়, তাহা অতুলনীয়। এই যে মানবিকতাকে, পারস্পরিক চেনা-জানার সম্ভাবনাকে, সকল প্যাকেজে ইদানীং এক চমৎকার উপাদান ভাবা হইতেছে, ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হইয়া চলা সমাজের ক্ষেত্রে ইহা উত্তম টোটকা হইয়া দাঁড়াইতে পারে। এই ব্যবসায়ে মূল নির্ণায়ক পুঁজি নহে, মনোভঙ্গি। তবে, আন্তরিকতাকে পণ্য করিব কেন, বা, আরও গুরুত্বপূর্ণ: পণ্য করিলে প্রকৃত আন্তরিকতা আদৌ বজায় থাকে কি না, সেই সন্দেহের অবকাশ থাকিয়াই যায়। পয়সা দিয়া খাইতে আসা লোকের সহিত স্বতঃস্ফূর্ত রসিকতা করা, বা কথার ফাঁকে ইচ্ছা থাকিলেই কলঘরে উঠিয়া যাওয়া সম্ভব কি না, ভাবিলে শেয়ারিং-এর দুগ্ধে কিঞ্চিৎ চোনা পড়িতেই পারে।

য ত্ কি ঞ্চি ত্

চিনের একটা কোম্পানি ১৯ দিনে ৫৭তলা বাড়ি তৈরি করে ফেলল! এর পর বলছে তিন মাসে ২২০তলা বাড়ি বানাবে। যদিও আমাদের মতো ইটের পর ইট সাজিয়ে নয়, বাড়িটা বানানো হল অনেকগুলো ‘মডিউল’ একসঙ্গে জড়ো করে, তবু ওতে তো লোক থাকবে, লাফাবে ঝাঁপাবে। নাকি ভূমিকম্পেও ও-বাড়ির কিছু হবে না। আমাদের নেতারা বরং ‘চিনের চেয়ার আমাদের চেয়ার’ স্লোগান দিন ও চিন থেকে ১০ সেকেন্ডে চেয়ার বানিয়ে আনুন, সহস্র ভোটেও সে আসন টলবে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE