Advertisement
০৮ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

রঙের বিপদ

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

রঙের বিপদ

‘দূষণ রোধে সিসাহীন রং’ (১০-৯) শীর্ষক খবর পড়লাম। একটি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। প্রথমেই এই অসাধারণ উদ্যোগের জন্য পর্ষদকে সাধুবাদ জানাই। সেই সঙ্গে এই বিষয়ে আরও দু-চার কথা বলতে চাই। সিসা বা লেড একটি ভারী ধাতু, যা রং তৈরিতে সুদীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লেডের যে বিভিন্ন যৌগগুলি রং-শিল্পে ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে লেড ক্রোমেট ও লেড কার্বনেটের ব্যবহার খুব বেশি। লেড রং’কে উজ্জ্বল করে, রং’কে ধরে রাখে, ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে ও দ্রুত শুকিয়ে তোলে। এই সব কারণে এর এত বহুল ব্যবহার। কিন্তু এর পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ও পরিবেশের পক্ষে লেড অত্যন্ত ক্ষতিকারক। বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা এই কথাই বলে যে, শিশু ও গর্ভবতী মহিলারা লেড দূষণের শিকার হন খুব সহজেই। ঘরবাড়ির রঙে উপস্থিত লেড শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে কণার আকারে আমাদের দেহে প্রবেশ করে। লেড মূলত স্নায়ুর রোগ সৃষ্টি করে। কিডনির সমস্যা, পেশির দুর্বলতা, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদির জন্যও লেড দায়ী।

এ দেশে রঙের গুণমান নির্ধারক সংস্থা হল ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস। বিআইএস খুব সম্প্রতি বাড়ি ও ঘর রং করতে ব্যবহৃত রঙে লেডের মাত্রা বেঁধে দিয়েছে ৯০ পিপিএম পর্যন্ত। এর আগে এই মাত্রা ছিল ১০০০ পিপিএম পর্যন্ত। কিন্তু মুশকিল হল, রঙে লেডের এই মাত্রা মেনে চলতে রং প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি বাধ্য নয়, কারণ এটা একটা ইচ্ছাধীন শর্ত। কিন্তু ইউরোপ, আমেরিকায় রঙে লেডের এই মাত্রা মেনে চলা বাধ্যতামূলক।

এক সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ভারতে ব্যবহৃত রঙের প্রায় ৭২ শতাংশে লেডের পরিমাণ ১০০০ পিপিএম-এর বেশি। এই সমীক্ষায় সর্বোচ্চ লেড পাওয়া গিয়েছিল ঘন কমলা রঙে। যা ছিল বিআইএস-এর পূর্বতন নির্ধারিত মাত্রার ১৮৫ গুণ বেশি। তার পর ছিল সোনালি হলুদ রঙে। এর লেডের মাত্রা ১৬২, ৫৫৯ পিপিএম, যা বিআইএস-এর পূর্বতন নির্ধারিত মাত্রার ১৬৩ গুণ বেশি।

ন্যাশনাল রেফারাল সেন্টার ফর লেড পয়জনিং ইন ইন্ডিয়া (এনআরসিএলপিআই) সম্প্রতি ভারতের শিশুদের রক্তে লেডের পরিমাণ নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। অনেক শিশুর রক্তেই লেডের মাত্রা প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ৩০ মাইক্রোগ্রাম। যা রীতিমত উদ্বেগজনক। এর থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, শিশুদের দেহে বিভিন্ন উত্‌স থেকে সিসা প্রবেশ করছে। এর মধ্যে একটা উত্‌স হল ঘরবাড়িতে ব্যবহৃত রং থেকে উত্‌পন্ন সিসার কণা।

এ ছাড়াও রঙে ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, মার্কারি, নিকেল ইত্যাদি ভারী ধাতুর নিয়ন্ত্রণ দরকার। আর একটা বিপদ হল, রঙে ব্যবহৃত উদ্বায়ী জৈব যৌগ (ভিওসি), যা স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি ও ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে। অয়েল বেসড রঙের চেয়ে ওয়াটার বেসড রঙে ভিওসি-র মাত্রা অনেক কম থাকে। তাই ভবিষ্যতে ওয়াটার বেসড রং উত্‌পাদন বাড়ানো উচিত।

প্রতিমা বিসর্জনের পর প্রতিমার রং জলে মেশে। লেড সহ অন্যান্য ভারী ধাতু জলজ খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে ছোট জলজ প্রাণী থেকে বড় জলজ প্রাণীদের দেহে চলে আসে। এই ভাবে ঘটে ভারী ধাতুর বায়ো-অ্যাকিউমুলেশন এবং বায়োম্যাগনিফিকেশন। এর পর মাছের মাধ্যমে আমাদের দেহে আরও বেশি মাত্রায় এই সব ভারী ধাতু চলে আসতে পারে।

রঙে সিসা ব্যবহারের কুফল নিয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। তা হলে বিআইএস-ও আরও কঠোর ও সুনির্দিষ্ট নিয়ম প্রণয়নে বাধ্য হবে।

সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।শিক্ষক, বিষ্ণুপুর স্যার রমেশ ইনস্টিটিউশন, কলকাতা-১৩৫

ভূতের মতো

রবীন্দ্র সরোবরের উত্তর-পূর্ব কোণে রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর বাল্মীকির চরিত্রে অভিনয়রত একটি সুন্দর মূর্তি স্থাপন করা হয়। আলোকসজ্জায় উজ্জ্বল মূর্তিটির সঙ্গে ক’মাস আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবস্থাও ছিল। বেশ কিছু দিন হল গান বন্ধ, আলোও বন্ধ। যেখানে বহু আলো লাগিয়ে কলকাতাকে লন্ডন করা হচ্ছে, সেখানে রবীন্দ্রনাথের মূর্তিটি অন্ধকারে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে দেখে বড় কষ্ট হয়।

আলোক সরকার। কলকাতা-২৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE