মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
বেসরকারি সংস্থার কর্মপদ্ধতিতে তথা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কতটা গ্রহণযোগ্য, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু মহানগরের তথা রাজ্যের সবচেয়ে নামী বেসরকারি হাসপাতালগুলির শীর্ষকর্তাদের টাউন হলে ডেকে এনে যে বার্তা মুখ্যমন্ত্রী দিলেন, তাতে এ রাজ্যের সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বরটাই ফুটে উঠল।
বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার যে পরিসর এ রাজ্যে রয়েছে, তা নিয়ে অভিযোগ নিত্য-নৈমিত্তিক। চিকিৎসার গগনচুম্বী দর, অসাধুতা, বিল বাড়িয়ে তোলার বিবিধ ফিকির, অস্বচ্ছতা— গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলি সর্বৈব সত্য, নাকি অনেকাংশেই ভিত্তিহীন, তা নিয়ে তর্কের অবকাশ অবশ্যই রয়েছে। অভিযোগ যাঁরা তোলেন, তাঁরা যে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অগাধ পাণ্ডিত্যের সুবাদে নিজেদের বিশ্লেষণ উত্থাপন করছেন, তেমন নয়। তাই চিকিৎসক তথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কর্মপদ্ধতির যাথার্থ বিচার করা তাঁদের পক্ষে সব সময় সম্ভব নাও হতে পারে। সে রকম কোনও বিচারের উপর দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছনোও অনুচিত। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা যাঁরা নেন, তাঁদের সুবৃহৎ অংশ যখন বার বার অভিযোগ করছেন এবং দীর্ঘ দিন ধরে করছেন, তখন প্রশ্ন তোলার অবকাশ প্রশাসকের থাকেই।
সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় অপ্রতুলতা রয়েছে। রাজ্যের জনসংখ্যার নিরিখে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা নগণ্যই। সুপার স্পেশ্যালিটি ব্যবস্থাপনা আরওই সীমিত। এ চিত্র শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়, প্রায় গোটা ভারতেরই। তাই অনেক ক্ষেত্রেই বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। কিন্তু বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা নিতে গিয়ে তুমুল অর্থনৈতিক হয়রানির যে অভিযোগ এ রাজ্যে বার বার ওঠে, অন্যত্র সে অভিযোগ অপেক্ষাকৃত কম। তাই অনেকেই সুলভে ভাল চিকিৎসার জন্য ভিনরাজ্যে যেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ভিনরাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে কারণ এ রাজ্যে বেসরকারি হাসপাতালগুলির কার্যকলাপ সম্পর্কে অভিযোগ করে কোনও সুরাহা হবে না বলে সাধারণ জনতা ধরে নিয়েছে। কিন্তু রাজ্যের শীর্ষ জনপ্রতিনিধি এ বার বার্তা দিলেন, জনগণের অভিযোগ বা প্রশ্নগুলোকে আমল না দিলেও চলে, এমনটা ভাবলে বেসরকারি হাসপাতালগুলি ভুল করবে।
আবার বলি, অভিযোগগুলো কতটা যুক্তিযুক্ত, বেসরকারি সংস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ কতটা সঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী যে বার্তা দিলেন তাতে আদৌ কোনও ফল মিলবে কি না— এ সব প্রশ্নকে ঘিরে তর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু যে প্রশ্নগুলি মুখ্যমন্ত্রী তুলেছেন, সেগুলি আমজনতারই প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy