Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Editorial News

দায়িত্বশীল আর কবে হবে চিন!

কেন এমন পদক্ষেপ? চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ওই সব মানচিত্রে অরুণাচলকে (চিনের ভাষায় দক্ষিণ তিব্বত) ভারতের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছিল। তাই নষ্ট করা হয়েছে সে সব।

মানচিত্র ধ্বংসে নয়া উদ্যোগ চিনের। ফাইল চিত্র।

মানচিত্র ধ্বংসে নয়া উদ্যোগ চিনের। ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০০:৩৯
Share: Save:

কথায় এক, কাজে আর এক। ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী রাষ্ট্র চিনের বিদেশ নীতি তথা কূটনীতির সারকথা সম্ভবত এটাই। চিনা প্রতিষ্ঠানের বাইরে বসে চিনের আচার-আচরণ দেখলে অন্তত তেমনই মনে হয়।

আচমকা নিজের দেশেই মানচিত্র সংস্কারে ব্রতী হল চিন। মানচিত্রের কারখানায় অভিযান চালিয়ে ২৮ হাজারেরও বেশি মানচিত্র বাজেয়াপ্ত তথা নষ্ট করল সে দেশের সরকার। কেন এমন পদক্ষেপ? চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ওই সব মানচিত্রে অরুণাচলকে (চিনের ভাষায় দক্ষিণ তিব্বত) ভারতের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছিল। তাই নষ্ট করা হয়েছে সে সব।

চিনের এই বিশেষ তৎপরতা তাৎপর্যপূর্ণ| বিশেষ তৎপরতার খবর গ্লোবাল টাইমসের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আরও তাৎপর্যপূর্ণ। অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে এখনও মানতে রাজি নয় বেজিং। অরুণাচলকে দক্ষিণ তিব্বত হিসেবে তথা নিজেদের দেশের অংশ হিসেবে দাবি করে চিন। মানচিত্র নিয়ে আচমকা তৎপরতা দেখিয়ে চিন আসলে নিজেদের সেই অবস্থানকেই আচমকা জোর দিয়ে তুলে ধরার কৌশল নিল বলে কূটনীতিকরা মনে করছেন। এতে ভারতকে কঠোর বার্তা দেওয়ার তথা চাপে রাখার চেষ্টা অত্যন্ত স্পষ্ট।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে চিনের মতপার্থক্য দীর্ঘ দিনের। জম্মু-কাশ্মীরের অংশবিশেষ চিন দখল করে রেখেছে। সিকিমকে ভারতের অংশ হিসেবে মানতে চিন নারাজ। অরুণাচলকে দক্ষিণ তিব্বত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চিন তৎপর। বার বার সীমান্ত লঙ্ঘন করে চিনা সেনা। কখনও লাদাখে, কখনও উত্তরাখণ্ডে ঢুকে পড়ে তারা। সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ১৯৬২ সালে পুরোদস্তুর যুদ্ধ হয়ে গিয়েছে ভারত ও চিনের মধ্যে। ১৯৬৭ সালে হয়েছে বড়সড় সংঘর্ষ। তার পরেও সীমান্ত বিবাদ স্থায়ী ভাবে মেটানোর আগ্রহ চিন দেখায়নি, তার পরেও বার বার তারা সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে, তার পরেও তারা উত্তেজনা জিইয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। কোনও বৃহৎ শক্তির বা দায়িত্বশীল রাষ্ট্রের ভূমিকা তথা নীতি এই রকম হতেই পারে না।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

চিনের এমন কোনও প্রতিবেশী দেশ নেই, যার সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে চিনের বিরোধ নেই। কোনও কোনও দেশের সঙ্গে সে বিরোধ চিন মিটিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ভারত বা জাপানের মতো যে সব দেশ এশিয়ায় চিনা একাধিপত্য কায়েমের চেষ্টার পথে সবচেয়ে বড় বাধা, তাদের সঙ্গে বিবাদ জিইয়ে রাখতেই চিন বেশি আগ্রহী। তিব্বতকে চিনের অংশ হিসেবে এককালে মানত না ভারত। পরে মেনে নিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় সে স্বীকৃতিও দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তার পরেও চিন নিজেদের অবস্থান থেকে নড়েনি। অরুণাচল বা সিকিম নিয়ে নিজেদের অবান্তর দাবি থেকে সরে যাওয়ার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি। এখনও নিয়মিত সেই বিতর্ক উস্কে দেওয়ার নীতিতেই বেজিং বিশ্বাস রাখছে। বলা বাহুল্য, ভারতের মতো দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক না বাড়িয়ে উত্তেজনা বহাল রাখার চেষ্টা কোনও দেশের পক্ষেই বিবেচকের মতো কাজ নয়। সামরিক বা অর্থনৈতিক--- কোনও মাপকাঠিতেই ওই ধরনের প্রয়াসকে ইতিবাচক ভাবে দেখেন না আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা। চিন সে কথা বুঝেও না বোঝার ভঙ্গি করলে দায়িত্বশীলতার প্রশ্নে চিনা ভাবমূর্তিই যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা বেজিং আর কবে বুঝবে?

আরও পড়ুন: অরুণাচলকে ভারতের অংশ দেখানোয় ৩০ হাজার মানচিত্র ছিঁড়ল চিন!

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের যে কোনও সাফল্য চিনকে আজও বিচলিত করে তোলে। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে চিন বার বার অভিযোগ করে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে যা কিছু পদক্ষেপ চিনের করা উচিত, চিন বরাবরই তার উল্টো দিকে হাঁটে। কুখ্যাত জঙ্গি মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে গোটা পৃথিবী তৎপর হয়ে উঠলেও চিন ভেটো দেয়। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের জন্য পৃথিবীর আর সব বড় শক্তি যত্নবান হয়ে উঠলেও চিন উত্তেজনা তথা বৈরিতা ধরে রাখতে চায়। দায়িত্বশীলতার ঠিক বিপ্রতীপ দিশায় ধাবমান এই চিনা কূটনীতি কার ভাল করবে? আজকের ভারতের সঙ্গে কোনও সঙ্ঘাত কি চিনকে অক্ষত রাখবে? আচমকা উত্তেজনা বাড়ানোর বার্তা দেওয়ার আগে সে বিষয়টাও ভেবে নিক বেজিং।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE