Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Suvendu Adhikari

আপনার ওই কথাটাই বরং মনে রাখতে চাইব!

রোয়াকের আড্ডায় যে ভাষা বলা যায়, সভায় তা বলা যায় না। তবু অনেকে তাৎক্ষণিক উত্তেজনা বা বিরক্তিতে বলে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে জিভ কাটেন, ক্ষমাও চেয়ে নেন। কিন্তু শুভেন্দু সে পথে হাঁটেননি।

The unparliamentary word of Suvendu Adhikari against Rahul Gandhi and the political ethics

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অনিন্দ্য জানা
অনিন্দ্য জানা
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০০
Share: Save:

আপনি তো আমায় মোবাইলে ব্লক করে রেখেছেন! মুখোমুখিও কি ব্লক করবেন?

হাসিমুখে প্রশ্নের জবাবে পাল্টা হাসি এল। জোড়হাতের প্রত্যুত্তরে জোড়হাত। সঙ্গে সহাস্য ঘোষণা, ‘‘আমি অত অভদ্র নই!’’

শিল্পপতি এবং অধুনা বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়ার আলিপুরের আলিশান বাড়িতে নৈশভোজের আসর। বিশেষ অতিথি অনুপম খের। মুণ্ডিতমস্তক অভিনেতা প্রশস্ত লনে চেয়ার পেতে বসেছেন। তাঁকে ঘিরে খানিক ‘আহা’, খানিক ‘উহু’, খানিক ‘ওয়াও’-এর ফুলঝুরি। অনুপমের অভিনয় দেখছি কলেজ জীবন থেকে। ‘সারাংশ’ সম্ভবত প্রথম। তার পরে কালের নিয়মে পাকা এবং ডেঁপো হওয়ার পর একে একে আরও বহু। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ‘আখরি রাস্তা’য় তাঁর অভিনয় মনে থেকেছে। কিন্তু কেন জানি না, স্মৃতিতে সবচেয়ে টাটকা ‘আ ওয়েডনেসডে’ ছবিতে মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনারের ভূমিকায় তাঁর অভিনয়।

অনুপম কলকাতায় এসেছিলেন একটি আলোচনা সভায় বক্তৃতা করতে। পরদিন শান্তিনিকেতন যাবেন। তাঁর সেই সফর নিয়েও কিঞ্চিৎ টানাপড়েন চলছে। এবং তিনি আলোচনাচক্রেই প্রকাশ্যে হুঙ্কার দিয়ে এসেছেন, ‘‘আমি শান্তিনিকেতন যাবই! দেখি কোন মাই কা লাল আটকায়!’’

পুলিশ কমিশনার প্রকাশ রাঠৌড়ের চরিত্রে তাঁকে যে অনবদ্য লেগেছিল এবং যত বার ‘আ ওয়েডনেসডে’ দেখি, তত বার মোহিত হই, একটু ইতস্তত করে সেটা বললাম। ভেবেছিলাম, অনুপম খুবই গুলুগুলু হয়ে যাবেন। কিন্তু কোথায় কী! মাছি তাড়ানোর মতো প্রশংসাটা উড়িয়ে দিয়ে প্রবীণ অভিনেতা বললেন, ‘‘আপনাদের ওয়েবসাইটে কি আমার বক্তৃতাটা কভার করা হয়েছে?’’ হয়েছে তো! আপাতত এক নম্বরেই আছে। মানে আমরা পরিভাষায় যাকে বলি ‘লিড ওয়ান’। মোবাইল খুলে খবরটা দেখিয়ে হেডিংটা ইংরেজিতে অনুবাদ করে শোনালাম, যে তিনি শান্তিনিকেতনে যাওয়া নিয়ে হুঙ্কার দিয়েছেন। কাশ্মীরি পণ্ডিত একটু অপ্রসন্নই হলেন। তার পরে এক চোখের ভুরুটা সামান্য উপরে তুলে বললেন, ‘‘ইয়ার, এত ভাল ভাল কথা বললাম! আর তোমরা এটাই হেডিং করলে? এই জন্যই মিডিয়াকে লোকে এত গাল দেয়।’’

জীবনে অন্য পেশার লোকজনকে যেচে এবং অনধিকার জ্ঞান দিইনি। অন্য পেশার লোকজনের জ্ঞান-টান বিশেষ শুনতে চেয়েছি বলেও মনে পড়ে না। অনুপমকেও বলার ইচ্ছে ছিল, তিনি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তাবড় অভিনেতা হতে পারেন। কিন্তু আমার অধিকাংশ পেশাগত সহকর্মীর কাছাকাছি মানের রিপোর্ট লিখতে পারবেন না। তাঁর অভিনয়ের ভক্ত হতে পারি। সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণের নই। কিন্তু তখনই কানের পাশে উদয় হলেন শঙ্কুদেব পণ্ডা এবং মিহি গলায় বললেন, ‘‘দাদা এসেছেন। ভিতরে ডাকছেন।’’

বিজেপির শঙ্কুদেব এখন যাকে বলে, দাদার একান্ত অনুগামী। কিন্তু তৃণমূলে থাকাকালীন ওঁর একটা অসাধারণ কীর্তি ছিল। এবং সে ক্ষেত্রে, কিমাশ্চর্যম, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওঁর একটা ব্যস্তানুপাতিক গোছের মিলও ছিল। সেটা অতীব ইন্টারেস্টিং— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পারিবারিক সম্পর্কে অভিষেকের ‘পিসি’ হলেও অভিষেক তাঁকে ‘দিদি’ বলেন। আর রাজনৈতিক সম্পর্কে মমতা ‘দিদি’ হলেও শঙ্কুদেব তাঁকে ডাকতেন ‘পিসি’ বলে!

যাক সে কথা। শঙ্কুদেবের মিহিন গলার পিছু পিছু প্রশস্ত ঘরে ঢুকতেই ‘দাদা’ উঠে দাঁড়ালেন। মুখে হাসি। হাত জোড়। অতঃপর একঘর লোকের সামনে কিছুক্ষণ গপ্পো-গুজারি হল। পেশাদার সাংবাদিকের সঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার যেমন হয়ে থাকে। কিছু স্মৃতি রোমন্থন। কিছু চাপান। কিছু উতর। কিছু হাসি-মশকরা। কিছু তর্ক। কিছু প্রতর্ক।

শুভেন্দু অধিকারীকে চিনি দীর্ঘ দিন। তিনি ‘নন্দীগ্রামের হিরো’ হওয়ার অনেক আগে থেকে। পিতা শিশির অধিকারীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে তাঁর উত্থান। প্যারাস্যুটে করে নামেননি। তাঁর রাজনীতি পারিবারিক ঐতিহ্যবাহী এবং খানদানি। ফলে ছোটবেলাতেই তিনি লক্ষ্য ঠিক করে নিয়েছিলেন। তখনই কি ঠিক করে নিয়েছিলেন অকৃতদার থাকবেন? যাতে ‘ফোকাস’ নড়ে না-যায়? যাতে ২৪ ঘণ্টার রাজনীতিক হতে পারেন? আনখশির সংগঠক হতে পারেন? হতে পারে। বরবরই জনতার মধ্যে থেকে, জনতাকে নিয়ে তাঁর রাজনীতি। তৃণমূলের মধ্যে ‘জননেতা’ বলতে যা বোঝায়, শুভেন্দু নিজগুণে তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন। মমতা স্নেহ এবং ভরসা করতেন। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় সেই আস্থা এক তূরীয় পর্যায়ে গিয়েছিল। তখন শুভেন্দু মমতাকে তাঁর ‘রাজনৈতিক গুরু’ মানেন (মানতেন যে, সে কথা তিনি এখনও ঘরোয়া আলোচনায় গোপন করেন না। তবে পাশাপাশিই জানিয়ে দেন, এখন তাঁর ‘রাজনৈতিক গুরু’ মমতা নন, অমিত শাহ)। মমতার সর্বাধিনায়কত্বে নন্দীগ্রাম আন্দোলন প্রায় একাই পরিচালনা করেছিলেন শুভেন্দু। উদয়াস্ত পরিশ্রম করে ভিন্নমুখী সব রাজনীতিকে তীক্ষ্ণ সিপিএম-বিরোধী অভিমুখ দিয়েছিলেন।

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের উপর দাঁড়িয়ে সাড়ে তিন দশকের বামশাসনকে উৎখাত করেছিলেন মমতা। আশ্চর্য নয় যে, ‘পরিবর্তনের সরকার’ ক্ষমতায় আসার পরে তার প্রথম সারিতে ছিলেন শুভেন্দু। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার যাবতীয় দায়দায়িত্ব তো বটেই, সঙ্গে একাধিক জেলার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। একাধিক দফতরের মন্ত্রিত্বও তাঁকে দিয়েছিলেন মমতা। সিঁড়িভাঙা আন্দোলনের পর্ব শেষ করে লিফ্‌টে তরতর করে উপরে উঠছিলেন শিশির-পুত্র।

পরনে সব সময় সাদা কুর্তা-পাজামা। ব্যসনহীন জীবন বেছে নেওয়া। একটা সময়ে কব্জিতে ‘স্লিম ওয়াচ’ বাঁধা থাকত। সেটাও পরা ছেড়ে দিলেন। কারণ জানতে চাওয়ায় বলেছিলেন, ‘‘সময় তো মোবাইলেই দেখে নেওয়া যায়। ঘড়ি পরার কী দরকার?’’ বলেছিলেন বটে। যৌক্তিক কথাই বলেছিলেন। কিন্তু আসল কারণ সেটা ছিল না। ধুরন্ধর শুভেন্দু বুঝেছিলেন, তাঁর রাজনীতি ‘এলিট ক্লাস’-এর নয়। তিনি রাজনীতি করেন গরিব মানুষের মধ্যে। সেই জমায়েতে দামি ঘড়িতে নম্বর কাটা যেতে পারে।

মূলত অভিষেকের সঙ্গে খটাখটির কারণে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। নইলে তৃণমূলে শুভেন্দু মন্দ ছিলেন না। বাংলার শাসকদলে দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতৃত্ব নিয়ে যে সংঘাত শুরু হয়েছিল, ইতিহাসের নিয়ম মেনেই তা রাজনৈতিক ভাবে রক্তক্ষয়ী হয়েছে। শুভেন্দু তাঁর রাজনৈতিক গুরু বদল করেছেন। নতুন গুরু অমিত শাহের হাত থেকে পদ্মচিহ্নের পতাকা নিয়ে দলবদল করেছেন। ‘ধাত্রীগৃহ’ নন্দীগ্রামে বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন তাঁর প্রাক্তন রাজনৈতিক গুরুর বিরুদ্ধে। এবং তাঁকে হারিয়েছেন। একে মমতা। তায় মুখ্যমন্ত্রী। তার উপরে নন্দীগ্রাম। নামমাত্র ভোটে হারালেও শুভেন্দুর কৃতিত্ব একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো ছিল না। ভোটগণনা শেষ হওয়ার অব্যবহিত পরে তাঁর উৎফুল্ল কণ্ঠস্বর এখনও কানে বাজে।

কিন্তু সাফল্য এবং কৃতিত্ব মাথায় চড়ে বসলে মুশকিল! খুব মুশকিল!

শুভেন্দুর মধ্যে সেই উপসর্গগুলো দেখা যাচ্ছিল। যা সবচেয়ে প্রকট হয়ে বেরোচ্ছিল তাঁর ‘আমরা-ওরা’ বিভাজনে। রাজনীতির পরিসরে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের একটা অলিখিত বোঝাপড়া থাকে। যাকে বলে ট্র্যাক-টু। সাধারণত সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বিরোধী হয়ে থাকে। বিরোধী দলনেতার সঙ্গে তারা কোথাও একটা সেই সুতোয় জোড়া থাকে। যুগে-যুগে, কালে-কালে এই সম্পর্ক থেকে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সর্বশেষ উদাহরণ মমতা। যে ভাবে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক নীতি-নির্বিশেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক এবং সখ্য গড়ে তুলেছিলেন, সেটা শিক্ষণীয়। শুভেন্দু মমতাকে তাঁর ‘রাজনৈতিক গুরু’ মানতেন বটে। কিন্তু বিরোধী দলনেতা হয়ে তিনি নিজেকে সেই দীক্ষায় দীক্ষিত করলেন না। বরং তাঁর হাবেভাবে খানিকটা ঔদ্ধত্য ঠিকরে বেরোতে শুরু করল। যাঁর রাজনৈতিক উপবীত ধারণ হয়েছিল কংগ্রেসি ঘরানায়, তিনি ‘আমাদের চ্যানেল-ওদের চ্যানেল’-এর অতি সরলীকরণে চলে গেলেন। বিরোধী দলনেতার পক্ষে যে বিলাসিতা অবশ্য পরিহার্য। শুনেছি, কেউ কেউ তাঁকে শুধরোনোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শুভেন্দু সংশোধনবাদী নন। তিনি নাকি স্পষ্ট বলে দেন, তাঁর পিছনে ‘ন্যাশনাল চ্যানেল’ ছোটে! রাজ্য স্তরে কে কী করল, তাতে অত গুরুত্ব দেওয়া যাবে না।

হতে পারে। একে শুভেন্দু ‘জননেতা’। তায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মুখসমরে পর্যুদস্ত করেছেন। এহ বাহ্য, তাঁর কর্মদক্ষতার কারণেই রাজ্যে তিনি বিজেপির ‘মুখ’। রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে তিনি তাঁর বিবিধ কর্ষিকাকে সচল এবং সক্রিয় করেছেন। যে সূত্রে বহুবিধ সরকারি নথিপত্র তাঁর হাতে আসে। যা রাজ্য সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলার পক্ষে যথেষ্ট। একাধিক সরকারি দফতরে বিজেপির কর্মী সংগঠন চালু করিয়েছেন। ‘নন্দীগ্রামের নেতা’ থেকে তিনি রাজ্যের নেতা হয়ে উঠেছেন। অতএব আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যদি তাঁর নিজের প্রতিবিম্বকে নিজের চেয়েও খানিক বড় মনে হয়, তা হলে তাঁকে কি খুব দোষ দেওয়া যায়?

কে জানে! হয়তো আত্মবিশ্বাস থেকেই এমন ভাবেন। কিন্তু কে না জানে, আত্মবিশ্বাস আর দম্ভের মধ্যবর্তী বিভাজনরেখা অত্যন্ত সূক্ষ্ম। আমরা কখনও-সখনও নিজেদের অজান্তেই সেই চৌকাঠ পেরিয়ে যাই।

পঞ্চায়েত ভোটের সময় যখন শুভেন্দু গিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের ঘরের তালাবন্ধ দরজায় লাথি মারলেন, তখন মনে হয়েছিল, নিজের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে তিনি ওই লক্ষ্মণরেখাটা পেরিয়ে গিয়েছেন। হতে পারে তাঁর মধ্যে একটা হতাশা কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছিল। হতে পারে তিনি শাসকদলের বিবিধ কূটকৌশলের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছিলেন না। হতে পারে নিজের দলের লোকজনকে ‘প্রোটেকশন’ দিতে পারছিলেন না। হতে পারে বিবিধ আইনি প্যাঁচে তাঁকে অহরহ পেড়ে ফেলার চেষ্টা হচ্ছিল। হতে পারে তাঁর গর্ভগৃহ কাঁথিতে ঢুকে পড়ে তাঁকে বিভিন্ন ভাবে উত্ত্যক্ত করা হচ্ছিল। তবে কিনা, তা অপ্রত্যাশিতও ছিল না। শাসক তৃণমূলের এক এবং একমাত্র চাঁদমারি এখন তিনিই। তাঁকে তো কড়া ট্যাকলের মুখে পড়তেই হবে।

শুভেন্দু মেজাজ হারাতে শুরু করলেন। বিরোধী দলনেতার পদের একটা গরিমা থাকে। তিনি জঙ্গি আন্দোলন করতে পারেন, রোজ চোখা চোখা মন্তব্য করে ক্ষমতাসীনকে ব্যতিব্যস্ত করতে পারেন, বিধানসভার অন্দরে হল্লা করতে পারেন। কিন্তু কোনও প্রশাসনিক আধিকারিকের ঘরের দরজায় লাথি মারতে পারেন না। যেমন কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সম্পর্কে সর্বসমক্ষে সাংবাদিক বৈঠকে ছাপার অযোগ্য ভাষা ব্যবহার করতে পারেন না। কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী সম্পর্কে সম্প্রতি শুভেন্দু মাইক্রোফোনের সামনে যে শব্দটি ব্যবহার করেছেন, খুব নরম করে বললেও তা কুরুচিকর, অনভিপ্রেত এবং অবাঞ্ছিত। চায়ের দোকানে বা রোয়াকের আড্ডায় যে ভাষা বলা যায়, সংসদে বা বিধানসভার অন্দরে অথবা সাংবাদিক সম্মেলনে তা বলা যায় না। তবু অনেকে তাৎক্ষণিক উত্তেজনা বা বিরক্তিতে বলে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে জিভ কাটেন, ক্ষমাও চেয়ে নেন। কিন্তু শুভেন্দু সে পথে হাঁটেননি। উল্টে দাবি করেছেন, তিনি আদৌ কোনও অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার করেননি! ‘বোকা’কে চলতি বাংলায় যা বলে, সেটাই বলেছেন। অনুতাপের লেশমাত্র তাঁর মধ্যে দেখলাম না। এটা তাঁর মাপের নেতার কাছ থেকে আশা করিনি। একটু খারাপই লাগল।

মনে হচ্ছিল, শুভেন্দুর বয়স এখন তিপ্পান্ন। রাজনীতির পক্ষে বেশি কিছু নয়। সাংসদ ছিলেন। রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। এখন বিরোধী দলনেতা (যে পদ ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমতুল)। তাঁর তেমন কোনও পিছুটান নেই। দারা-পুত্র-পরিবারের বাঁধন নেই। আক্ষরিক অর্থেই তিনি দিনরাতের রাজনীতিক। অতএব তাঁর রাজনীতির দৌড় এখানেই থেমে যাবে, তেমন ভাবার কোনও কারণ এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সে দৌড় কত দূরে যাবে, তা নির্ভর করবে সাফল্যের পাশাপাশিই তাঁর ভুল স্বীকার করার সৎসাহস এবং তজ্জনিত কলজের জোরের উপর। মামুলি রাজনীতিক থেকে নেতায় উত্তরণের সোপানে সেই সমস্ত উদাহরণ এবং দৃষ্টান্তও জ্বলজ্বলে অক্ষরে প্রোথিত থাকা জরুরি। ‘হলমার্ক’-এর মতো।

দুঃখের যে, শুভেন্দুর মধ্যে সেটা দেখা যাচ্ছে না। জ্ঞান দিতে চাইছি না। তবে একটু খারাপ লাগছে। কারণ, শুভেন্দুর মতো নেতার কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না। কয়েক মাস আগের নৈশভোজের রাতের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। মুখে হাসি। জোড়হাত। সঙ্গে ঘোষণা, ‘‘আমি অত অভদ্র নই।’’

শুভেন্দু অধিকারী, আপনার ওই বাক্যটাই মনে রাখতে চাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE