Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

স্বাধীনতার পরে শিক্ষাব্যবস্থায় মোটামুটি এক ধরনের সাম্যবাদ বজায় ছিল। ব্রিটিশ আমল থেকে চালু কিছু এলিট বিদ্যালয় ছিল। এ ছাড়া বাকি স্কুলগুলো রাষ্ট্র পরিচালিত অথবা রাষ্ট্রের অনুদানে চলত।

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

সাম্যহীন শিক্ষার পরিণাম

স্বাধীনতার পরে শিক্ষাব্যবস্থায় মোটামুটি এক ধরনের সাম্যবাদ বজায় ছিল। ব্রিটিশ আমল থেকে চালু কিছু এলিট বিদ্যালয় ছিল। এ ছাড়া বাকি স্কুলগুলো রাষ্ট্র পরিচালিত অথবা রাষ্ট্রের অনুদানে চলত। দেশের বেশির ভাগ শিশু সেই বিদ্যালয়ে পড়ত। সেখান থেকে পড়াশোনা করে এক ধরনের দেশাত্মবোধ থাকত। মানুষের নিজের নীতি আদর্শ রক্ষা করার মানসিকতা গড়ে উঠত। গরিব মধ্যবিত্ত এমনকী উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তানরাও এক ধরনের স্কুলে পড়ত। পরিপূর্ণ সাম্যবাদ না হলেও এক ধরনের সাম্যবাদ আমরা পেয়েছিলাম।

এর পরে এল নতুন নতুন নীতি আর শিক্ষাব্যবস্থা, নতুন নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা। এল সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ইংরাজি তুলে দেওয়া, উঠে গেল প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ-ফেল। শৈশবে মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষা এবং পাশ-ফেল নাকি শিশুর বেড়ে ওঠার পক্ষে ভাল না! কেউ প্রশ্ন তুলল না এগুলো যদি ভাল না হয়, তা হলে অসরকারি স্কুলে এগুলি শিশুর পক্ষে ভাল হয় কী করে? (অসরকারি স্কুলে ইংরাজি মাধ্যমও হল, আবার পাশ-ফেলও থাকল)। সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে এই সব পরীক্ষানিরীক্ষা আসলে শিক্ষাকে অসরকারি করার লক্ষ্যেই গ্রহণ করা হয়েছিল। শিক্ষাকে সরাসরি অসরকারি করলে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ হতে পারে। সেই প্রতিবাদ প্রতিহত করার সাধ্য কোনও সরকারের ছিল না। তাই পিছনের দরজা দিয়ে শিক্ষার অসরকারিকরণ। খুব সুন্দর এক ষড়যন্ত্র করা হল, যাতে শিক্ষিত সম্প্রদায় বিরোধিতা তো করবেই না, উপরন্তু সমর্থন করবে। কারণ, তারা সদলবল সরকারি শিক্ষা থেকে অসরকারি বিদ্যালয়ে চলে গেল। অসরকারি বিদ্যালয় ফুলেফেঁপে উঠতে লাগল। শিক্ষিত সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ অসরকারি বিদ্যালয়ে চলে গেলে সরকারি বিদ্যালয়ের মান নষ্ট হয়ে গেল। এর উপরে রাজনৈতিক নষ্টামির ফলে সরকারি স্কুল নষ্ট হওয়া তরান্বিত হল। শিক্ষিত মধ্যবিত্তরাও খুশি, কারণ তাদের ছেলেমেয়েরা অসরকারি বিদ্যালয়ে নিজেদের পকেটের জোর অনুযায়ী বিদ্যালয় খুঁজে নিল। এর পর কিন্তু ধীরে ধীরে অবস্থাটা এমন দিকে গেছে যেখানে সমাজে শিশুরা ছোট থেকেই পাঁচ-ছ’টি ভাগে অর্থনৈতিক শ্রেণিবৈষম্যের শিকার হয়ে গেছে। বড় হয়ে পারবে তো তারা সবাইকে সহনাগরিক ভাবতে?

যন্ত্রণাটা এখানেই শেষ নয়। বরং শুরু। প্রথম যখন অসরকারি স্কুলে মধ্যবিত্ত যেতে শুরু করে, তখন মাত্র দু’তিনটি শ্রেণি বিভাগ ছিল এবং তাতে খরচও মধ্যবিত্তের আয়ত্তের মধ্যে ছিল। সরকারি স্কুল থেকে মুখ ঘুরিয়ে তারা শ্লাঘা বোধ করত যে, তার সন্তান প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে পারবে। এ ভাবে ধীরে ধীরে সরকারি বিদ্যালয় যখন সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেল এবং অসরকারিকরণের বৃত্তটা যখন সম্পূর্ণ হল, তখন সে দেখল অসরকারি স্তরেও আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী পাঁচ-ছ’টি স্তর তৈরি হয়েছে। যেখানে মাসিক বেতন ৪০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকা কিংবা তারও বেশি। পরিস্থিতিটা দাঁড়াল যে, অভিভাবক সরকারি স্কুলে মিড ডে মিল খাওয়ানোর পরিবেশ ছেড়ে তার উপরের স্তর অর্থাৎ ৪০০ টাকা বেতনের অসরকারি স্কুলের দিকে তাকিয়ে আছে। এই ভাবে প্রত্যেক অভিভাবক তার উপরের স্তরের দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। এমন একটা সমাজব্যবস্থা, যেখানে শিশুশিক্ষা থেকেই মারাত্মক বৈষম্য চালু। সেখানে সমাজ মানবিক হওয়া সম্ভব কি? অথচ আমরা আজকাল প্রায়ই নানা উপলক্ষে সমাজে অমানবিকতার জন্য আক্ষেপ করি।

অর্থের বিনিময়ে যে শিক্ষা কেনার প্রতিযোগিতা চলছে, তা কোন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে আমাদের ঠেলে দিচ্ছে, তা কি আমরা বুঝতে পারছি না? এক সময় যে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সম্প্রদায় শিক্ষা অসরকারিকরণের প্রতিবাদ না করে অসরকারি স্কুলে পালিয়ে বেঁচেছে, আজ পুরো পরিস্থিতি তার হাতের বাইরে চলে গেছে। এর জন্য কিন্তু আমরা মধ্যবিত্ত শিক্ষিত লোকেরাই পরিপূর্ণ ভাবে দায়ী।

গৌরী পাল গড়িয়া, কলকাতা

কৃতিত্ব কার

কোনও রাজনৈতিক দল, শাসক দলকে পরাস্ত করে বিপুল ভোটে জিতলে, তার কৃতিত্ব দেওয়া হয় দলের রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সভাপতিকে। অথচ কৃতিত্ব পাওয়ার কথা জনগণের। সমস্ত প্রকার ভয়, বাধাকে হেলায় উপেক্ষা করে, অথবা তার মোকাবিলা করে পরিবর্তনের ইচ্ছায় ব্যক্তিমানুষ ভোট দেয়। অন্যের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় বিরত থেকেও ভোট বাক্সে নিজ ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়। জয়ী হয় নতুন একটা দল। আর প্রশংসা পান সংগঠক। কার কৃতিত্ব তা নিয়ে চর্চা চলতেই থাকে। জনগণের ইচ্ছার অপমৃত্যু ঘটে।

রমজান আলি বর্ধমান

সুপারস্পেশালিটি

বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল জেলার অত্যন্ত গূরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল। বর্তমানে সুপার স্পেশালিটির তকমা পেয়েছে। কিন্তু সুপারস্পেশালিটির কোনও সুবিধা নেই। কবে হবে জানা নেই। বিশেষত, এই মুহূর্তে সি টি স্ক্যানের পরিষেবা অত্যন্ত জরুরি। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আমাদের জন্য একটু ভাববেন?

শিবু সরেন শান্তিনিকেতন‌

শুধু হাহুতাশ

আমার ধারণা, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি বর্তমান প্রজন্মের এই অনীহার (না কি তাচ্ছিল্যের) দায় কেবলমাত্র বাড়ির পরিবেশ আর অভিভাবকদের নয় (‘বাংলাটা ভাল আসে না’, সম্পাদক সমীপেষু, ১০-৩)। এই অবক্ষয়ের শেকড় আরও অনেক গভীর এবং ব্যাপ্ত। সমাজের প্রতিটা উপাদানই এই অনীহাকে পোক্ত থেকে পোক্ততর করে তুলছে। সেই সব শক্তিশালী উপাদানের পাশে ‘অভিভাবক’ এবং ‘বাড়ির পরিবেশ’ হয়তো এই মুক্ত বাজারের যুগে, উপাদান হিসেবে কিছুটা কম শক্তিশালী। মধ্য-শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, কেবলমাত্র অর্থ/সাফল্যের ইঁদুর দৌড়ে শামিল উচ্চবিত্ত কিংবা হঠাৎ-বড়লোক অর্ধশিক্ষিত— প্রত্যেকের মানসিকতা সর্বক্ষণ নিজেদের এক বিশেষ শ্রেণিভুক্ত দেখতে ও দেখাতে মরিয়া। ফলে ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির উত্তরাধিকার-প্রাপ্ত সহজতম পথটাই তাঁরা বেছে নেবেন, এটাই স্বাভাবিক।

চার পাশে তাকালেই দেখা যায় বাসে/ট্রামে/রাস্তাঘাটে কোনও মানুষ যতক্ষণ শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণে আবেদন/প্রতিবাদ করছেন, অনেক ক্ষেত্রেই তা উপেক্ষিত হচ্ছে। সেই মানুষই যখন সাবলীল ইংরাজিতে কথাগুলো বলেন, চার পাশের দৃষ্টিতে সম্ভ্রম আসে, তাঁর কথা গুরুত্ব পায়! ফলাফলও ভিন্ন হয়। এই অভিজ্ঞতা কমবেশি আমাদের প্রত্যেকেরই আছে। এবং এর কারণগুলোও সহজবোধ্য। কিন্তু অবাক বিস্ময়ে যখন দেখি অন্যতম ঐতিহ্যশালী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বয়ং উচ্চারণ করছেন বাংলা বলায় ওঁর অনীহার/অপারগতার কথা, তার কোনও যুক্তি/কারণ খুঁজে পাই না! আর এখানেই সম্যক অনুভব করতে পারি, এই সমস্যা কত গভীরে!

আমরা কি শুধু হাহুতাশ করব আর ভাষাদিবসে ফেসবুকে সুন্দর পোস্ট দিয়ে আরাম বোধ করব?

অনুক্তা মজুমদার দুর্গাপুর

দিন তো বদলেছে

রত্না রায়ের চিঠি (‘বাংলাটা ভাল আসে না’, ১০-৩) পড়ে ভাল লাগল। কিন্তু দিনকাল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখন প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। সুতরাং বাঙালিদের এখন আর শুধু বাংলা ভাষা নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না, প্রথমে জোর দিতে হবে ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার উপর। কেরিয়ার গড়ার পর বাংলা ভাষার কথা ভাবা যেতে পারে, নচেৎ ‘খালি পেটে হাত বুলিয়ে’ পৃথিবীর মধুরতম বাংলা ভাষার কথা স্মৃতিচারণ করে যেতে হবে। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে তবে সেটা ব্যতিক্রম।

তরুণকুমার বসাক কলকাতা-৬৭

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE