Advertisement
১০ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

এ বারের বাজেট পেশের দিন অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘২০১০-১১ আর্থিক বছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে রাজ্যের রাজস্ব ১০৩% বৃদ্ধি পেয়েছে।’ কিন্তু অর্থমন্ত্রী যা একটি বারের জন্যও উল্লেখ করেননি তা হল, ২০১০-১১ আর্থিক বছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় করের রাজ্যের শেয়ার ১৩৩% এবং কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অনুদান ৩৬২% বৃদ্ধি পেয়েছে।

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

টাকা নেই কেবল ডিএ’র?

এ বারের বাজেট পেশের দিন অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘২০১০-১১ আর্থিক বছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে রাজ্যের রাজস্ব ১০৩% বৃদ্ধি পেয়েছে।’ কিন্তু অর্থমন্ত্রী যা একটি বারের জন্যও উল্লেখ করেননি তা হল, ২০১০-১১ আর্থিক বছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় করের রাজ্যের শেয়ার ১৩৩% এবং কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অনুদান ৩৬২% বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১০-১১ এবং ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরের বাজেটে দেখা যাবে, ২০১০-১১ আর্থিক বছরে রাজ্যের মোট প্রকৃত আয় হয়েছিল যথাক্রমে: ১) নিজস্ব কর আদায় ২১,১২৮.৭৪ কোটি, ২) কর বহির্ভূত আয় ২,৩৮০.৫০ কোটি, ৩) কেন্দ্রীয় করের রাজ্যের ভাগ ১৫,৯৫৪.৯৫ কোটি এবং ৪) কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অনুদান ৭,৮০০.০১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১০-১১ আর্থিক বছরে সর্বমোট আয়, ৪৭,২৬৪.২০ কোটি টাকা।

অপর দিকে, ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে রাজ্যের মোট প্রকৃত আয় হয়েছিল যথাক্রমে: ১) নিজস্ব কর আদায় ৪২,৪৯২.০৮ কোটি,২) কর বহির্ভূত আয় ১,৮৬১.৭৯ কোটি, ৩) কেন্দ্রীয় করের রাজ্যের ভাগ ৩৭,১৬৩.৯৩ কোটি এবং ৪) কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত অনুদান ২৮,২১৪.৪১ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে সর্বমোট আয়, ১,০৯৭৩২.২১ কোটি টাকা। এ বারে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থ বছরের (২০১৭-১৮) অনুমিত বাজেটের সঙ্গে বর্তমান বছরের (২০১৬-১৭) সংশোধিত বাজেট ও গত বছরের (২০১৫-১৬) প্রকৃত বাজেটের যে খতিয়ান পেশ করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে বর্তমান বছরে (২০১৬-১৭) সংশোধিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-পেনশন দিতে মোট খরচ হয়েছে ৫১,৩২৩.৭২ কোটি টাকা। আর এ বার অর্থমন্ত্রী, আগামী অর্থ বছরের (২০১৭-১৮) অনুমিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-পেনশন খাতে মোট বরাদ্দ করেছেন ৫৫,১৬৫.৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র ৩,৮৪১.৯২ কোটি বেশি। অর্থাৎ রাজস্ব বাড়লেও মহার্ঘ ভাতা বা বেতন বৃদ্ধির (বেতন কমিশন) কোনও বার্তা এ বারের বাজেটে নেই।

কেন্দ্রের সপ্তম বেতন কমিশন প্রদত্ত নয়া বেতন ১-১-২০১৬ থেকে চালু। পরবর্তী ১-৭-২০১৬ থেকে ২% হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া শুরু হয়েছে। খবরে প্রকাশ, আবারও কেন্দ্রীয় সরকার ১-১-২০১৭ থেকে ২% অথবা ৪% মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি করতে চলেছে। ভোগ্যপণ্যের মূল্য সূচক (সিপিআই) অনুসারে নয়া বেতনের ২% মহার্ঘ ভাতা পুরনো বেতনে তা ৭% পরিণত হয়েছে। তার কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ (স্বশাসিত) সংস্থা সহ অন্যান্য যে সকল কর্মীর এখনও সপ্তম বেতন কমিশনের নয়া বেতন চালু হয়নি, তাঁরা তাঁদের সংশোধন-পূর্ববর্তী স্কেলে ১-১-২০১৬ পর্যন্ত প্রাপ্য ১২৫% মহার্ঘ ভাতা পরবর্তী সিপিআই অনুসারে, সংশোধিত স্কেলের ২% মহার্ঘ ভাতা সংশোধন-পূর্ববর্তী স্কেলে ৭%-এ পরিণত হয়েছে। ফলে তাদের ১২৫% মহার্ঘ ভাতা পরবর্তী ১-৭-২০১৬ থেকে মহার্ঘ ভাতার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩২%। সে কারণে কেন্দ্রীয় সরকার ১-১-২০১৭ থেকে ২% বা ৪% মহার্ঘভাতা বাড়ালে সংশোধিত স্কেলে তা মোট ৪% অথবা ৬% মহার্ঘ ভাতা হবে। অপর দিকে সংশোধন-পূর্ববর্তী স্কেলে মোট মহার্ঘ ভাতা গিয়ে দাঁড়াবে ১৩২%+৭%= ১৩৯% অথবা ১৩২%+১৪%=১৪৬%-এ। কেন্দ্রের নিয়ম মেনে অধিকাংশ রাজ্যে ১৩২% মহার্ঘ ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেশী দুটি রাজ্য বিহার ও ওড়িশার কথা বলা যেতে পারে। অথচ এই রাজ্যে ১-১-২০১৭ মোট মহার্ঘ ভাতা ৮৫%, বকেয়া মহার্ঘ ভাতা ৪৭%। কেন্দ্রীয় সরকার ১-১-২০১৭ থেকে ২% থেকে ৪% ডিএ বৃদ্ধি করলে বর্তমানে এই রাজ্যের কর্মীদের কেন্দ্র সহ অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে মহার্ঘভাতার পার্থক্যের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ৫৪% থেকে ৬১%। মহার্ঘ ভাতা বেতনের অংশ, তাই ঠিক সময়ে মহার্ঘ ভাতা না পাওয়ার কারণে রাজ্য কর্মীরা মাসের পর মাস অর্ধেকেরও বেশি বেতন কম পাচ্ছেন। এই রাজ্যে ২৭-১১-২০১৫ তারিখে ষষ্ঠ বেতন কমিশন গঠন পরবর্তী ছ’মাসের মধ্যে রিপোর্ট পেশের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কমিশন দু’দুবার (৬ মাস+১২ মাস) মোট ১৮ মাস মেয়াদ বৃদ্ধি ঘটালেও রাজ্য কর্মীরা ভেবেছিল এ বারের বাজেটে (’১৭-’১৮) বেতন কমিশন চালু করা সহ বকেয়া মহার্ঘ ভাতার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হবে। সে গুড়ে বালি। দেশে মূল্যবৃদ্ধির কারণে শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি বা বেতনের অবক্ষয় ঘটে, ফলে তাঁদের প্রকৃত মজুরি বা বেতন কমে যায়। কেন্দ্রীয় সরকার সিপিআই অনুসারে বছরে দুই কিস্তি (জানুয়ারি ও জুলাই) মহার্ঘ ভাতা তাদের কর্মীদের দিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় সরকার যে হারে মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করে, সাধারণত রাজ্যগুলিও সেই পথ অনুসরণ করে থাকে। তথাপি রাজ্যকর্মীরা একটি দিনের জন্যও কেন্দ্রের ন্যায় মহার্ঘ ভাতা হাতে পায়নি।

২০১২-১৩ থেকে ৪ বছরে কর্মীদের বেতন-পেনশন খাতে মোট ব্যয় বরাদ্দ হয়েছিল ১,৭৮,৭৩৮.০৪ কোটি টাকা। সরকার খরচ করেছে: ১,৬৮,৩৫৭.৮৯ কোটি টাকা। সাশ্রয় ১০,৩৮০.১৫ কোটি। প্রশ্ন ওঠে, হরেক রকম ভাতা আর উৎসবের নামে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচে সরকারের কোনও কার্পণ্য নেই, যত অনটন কি শুধুমাত্র রাজ্য কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা দিতেই?

মলয় মুখোপাধ্যায় সাধারণ সম্পাদক, কনফেডারেশন অব স্টেট গভঃ এমপ্লয়িজ, (আইএনটিইউসি)

কী কী করণীয়

ক্রমবর্ধমান পথ দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী পরিবহণ দফতর এবং আরটিও কর্তাব্যক্তিরা। শুধু ড্রাইভারের ওপর দায় চাপিয়ে কঠিন বাস্তবকে অস্বীকার করলে দুর্ঘটনার প্রতিবিধান হবে না। এই প্রেক্ষিতে পরিবহণ মন্ত্রীর উদ্দেশে কয়েকটি কথা।

এক, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে দালাল চক্র নির্মূল করুন। অযোগ্য লোক ড্রাইভিং ঠিক মতো না জেনেও গাড়ি চালাবার লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে দালাল ও যথাস্থানে ঘুষ দিয়ে। এক দল রেজিস্টার্ড খুনিকে স্টিয়ারিং হাতে রাজপথে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এক সংবাদপত্র প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও ওসামা বিন লাদেনের চুল উল্টেপাল্টে তাদের নামে ড্রাইভিং লাইসেন্স বের করে প্রমাণ করেছিল আরটিও থেকে যার তার নামে লাইসেন্স বের করা কত সহজ। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে এই ছেলেখেলা বন্ধ হোক। দালালদের কঠিন শাস্তি দিয়ে নির্মূল করা প্রয়োজন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে।

দুই, ড্রাইভারদের মেডিক্যাল ফিটনেস সার্টিফিকেট ঠিক মতো দেখা হয় না। দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি পরীক্ষা না করেই ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এক জন জেনারেল ফিজিশিয়ান কখনওই আই স্পেশালিস্ট এবং ইএননটি স্পেশালিস্টের দায়-দায়িত্বের ভাগ নিতে পারেন না। সাধারণ ডাক্তার বলতে পারেন না কেউ কালার ব্লাইন্ড কি না বা বধির কি না, যা ড্রাইভারদের ক্ষেত্রে কঠোর ভাবে যাচাই করা দরকার। পশ্চিমবঙ্গে এক জন সাধারণ ডাক্তার ‘ফিজিক্যালি ফিট, মেনটালি অ্যালার্ট’ লিখে দায়সারা সার্টিফিকেট দেয়, তার ভিত্তিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হয়। ফলে আনফিট মানুষ ড্রাইভার হয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়, সাধারণ মানুষ মারা পড়ে রাস্তায়। এই অবস্থার পরিবর্তন কাম্য।

তিন, ড্রাইভারদের নিয়মিত মেডিক্যাল ফিটনেস যাচাই করা দরকার, যা করাই হয় না। তাদের কাজের সময় নির্দিষ্ট থাকা দরকার। দেখা যায় আগের দিন রাত তিনটে পর্যন্ত ডিউটি করে পরের দিন সকাল সাতটায় গাড়ি নিয়ে বেরোতে হচ্ছে ঘুম ও বিশ্রাম ছাড়াই। মনঃসংযোগ ব্যাহত হয়, স্টিয়ারিং হাতে ধরে ঘুম পায়। পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ে।

চার, এ বার গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট বনাম প্রকৃত ফিট গাড়ির প্রসঙ্গ। শোনা যায় ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় গাড়ি সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ফিট সার্টিফিকেট মিলে গেলে তাপ্পি লাগানো টায়ার, লঝঝড়ে বডি সব ফিরে আসে, গাড়ি চলে মৃত্যু শকট হয়ে। টায়ারে তাপ্পি লাগানো দণ্ডনীয় ঘোষিত হোক। টায়ার মেরামতির দোকানগুলি ভেঙে দেওয়া হোক।

স্বপনকুমার গোস্বামী কলকাতা-২৭

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE