Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

বর্তমানে রাজনীতিগত কারণে, সব দলের কাছেই, ছাত্রছাত্রীরা পড়ুয়া হিসাবে যত না গুরুত্বপূর্ণ, তার থেকেও ভোটার হিসাবে বেশি প্রয়োজনীয়।

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:২৪
Share: Save:

চারুচন্দ্র ও কিছু প্রশ্ন

চারুচন্দ্র কলেজে সাম্প্রতিক যে শিক্ষক হেনস্তার ঘটনা ঘটল, তা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর পিছনে অনেকগুলি কারণ উঠে আসে।

প্রথমত, বর্তমানে রাজনীতিগত কারণে, সব দলের কাছেই, ছাত্রছাত্রীরা পড়ুয়া হিসাবে যত না গুরুত্বপূর্ণ, তার থেকেও ভোটার হিসাবে বেশি প্রয়োজনীয়।

দ্বিতীয়ত, ঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলে যুবসম্প্রদায় তার পর যে চাকরির দাবি জানাবে, তা মেটানো শক্ত। তার চেয়ে, তাদের যদি ঠিক ভাবে শিক্ষিত হওয়া থেকে বিরত করা যায়, তা অনেক বেশি ‘বুদ্ধিমান’-এর কাজ!

তৃতীয়ত, কলেজে পাঠরত পড়ুয়াদের সামনে যখন আর কোনও বৃহত্তর লক্ষ্যবস্তু নেই, তখন নিজেদের ব্যস্ত রাখার কি আর অন্য কোনও উপায় আছে?

আরও প্রশ্ন জাগতে পারে। যেমন, যে কোনও কলেজে আন্দোলনে যে সব বহিরাগত বা দীর্ঘ দিন আস্তানা গেড়ে বসে থাকা অছাত্র-অছাত্রীদের আধিক্য দেখা যায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এত অনীহা কেন? সেও কি কোনও রাজনৈতিক কারণে?

আর, বাবা-মায়েরাও কি ছেলেমেয়ে কলেজ যাওয়া শুরু করতেই, সব হাল ছেড়ে দিচ্ছেন? এ কি শুধুই স্বপ্নভঙ্গ, না দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা?

নীল গুপ্ত বরানগর

প্রেসিডেন্সি

সাম্প্রতিক কালে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে টালবাহানা চলছে। নানা রকম বাদানুবাদ চলছে শূন্য আসন ভর্তি নিয়ে। কলকাতার গণ্ডি পেরিয়ে জেলায় জেলায় গিয়ে ছাত্রদের মধ্যে প্রচার চালাবার কথা ভাবা হচ্ছে। আবার প্রবেশিকার মান কমিয়ে শূন্য আসন পূরণের প্রস্তাবও আসছে। এ সবের পরেও আমরা প্রেসিডেন্সিকে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরতে চাই।

যখন আমি এখানে স্নাতক স্তরে পাঠরত (১৯৬১-৬৪) তখন প্রেসিডেন্সি সমস্ত বিষয়েই গোটা বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে পাল্লা দিত। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজও বাদ যেত না। আজকের মতো এত দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও সে সময় প্রেসিডেন্সির সুনাম বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। এর পিছনে মূল ভূমিকা নিয়েছিল এখান থেকে বেরিয়ে আসা কৃতী ছাত্র-ছাত্রীরাই।

ভরপুর উজ্জ্বল মেধাবী সান্নিধ্য একটা গোটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যে আদর্শ পরিমণ্ডল দেয়, সেটা আর কোনও ভাবেই পাওয়া যায় না। এটা ছাত্র-শিক্ষক দুই পক্ষের ক্ষেত্রেই সত্যি। রাজনীতির ছোঁয়া থেকে একেবারে মুক্ত ছিল সে কালের প্রেসিডেন্সি, সে কথা বলা যায় না। কিন্তু সেই রাজনীতিও ছিল নীতি-আদর্শগত। নকশাল আন্দোলনের আঁচ আমরাও পেয়েছিলাম। অথচ আমাদের কখনও আন্দোলন বা ঘেরাওয়ে অংশ নিতে হয়নি।

ইদানীং সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গবেষণাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বেশ ভাল ভাল মৌলিক গবেষণাও উঠে আসছে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে। কিন্তু এখানে (প্রেসিডেন্সি) তা কোথায়?

কেবল মেন্টর কমিটি, পরিচালন সমিতি বা উপাচার্যের পক্ষে সে দিনের সেই আবহাওয়া ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। সামগ্রিক ভাবেই আন্তরিক প্রচেষ্টা একান্ত কাম্য।

গোটা বিশ্বেই শ্রদ্ধাভক্তি দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকা দরকার, সেটাও আজকাল আর দেখা যায় না। বিনীত অনুরোধ করছি, স্লোগানে ভরিয়ে দেবেন না প্রেসিডেন্সির আবহাওয়াকে— সে যতই রোমাঞ্চকর লাগুক না কেন। আদর্শ বৌদ্ধিক পরিমণ্ডল ফিরিয়ে আনতে পারলেই ফিরে পাওয়া যাবে প্রেসিডেন্সির হারানো গৌরব।

বিকাশ সিংহ ই-মেল মারফত

ইনিও শিক্ষক?

কয়েক দিন আগে বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেনে হাওড়া থেকে বোলপুর ফিরছিলাম। উঠেছিলাম সংরক্ষিত কোচে। ওখানে প্রায় কুড়ি-বাইশ জন শিক্ষক (বুকে ব্যাজ আঁটা, কোনও মিটিং থেকে ফিরছেন) বসেছিলেন। তাঁরা প্রথমে বুঝতে পারেননি, ওটা সংরক্ষিত কামরা। যখন বুঝতে পারলেন, ট্রেন ছাড়তে মিনিট পাঁচেক বাকি। ওঁদের মধ্যে অনেকেই ঠিক করলেন, অসংরক্ষিত কোচে চলে যাবেন। তখন ওঁদের মধ্যে যাঁকে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি বলে মনে হচ্ছিল (অনেকেই ওঁকে স্যর-স্যর করছিলেন), তিনি বললেন, অন্য কোচে যেতে হবে না। তা সত্ত্বেও জনা পাঁচেক বাদে সবাই নেমে গেলেন। ট্রেন ছাড়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে টিকিট-পরীক্ষক সেই প্রবীণ ব্যক্তিকে টিকিট দেখাতে বললেন। দেখা গেল, ভদ্রলোক কোনও টিকিটই কাটেননি। পরীক্ষক বললেন, ‘মশাই, আপনার লজ্জা করে না? প্রথমত, টিকিটই কাটেননি, তার উপর আবার সংরক্ষিত কোচে গ্যাঁট হয়ে বসে আছেন!’ প্রশ্ন জাগতেই পারে, ইনি কী ধরনের শিক্ষক?

শান্তভানু সেন শ্রীপল্লি, শান্তিনিকেতন

অন্য বন্ধু

‘ভাষাচার্য সুনীতিকুমার’ (পত্রিকা, ৩০-১২) পড়ে যোগ করি, এক পরম বিদ্বান ব্যক্তির সঙ্গে সুনীতিকুমারের ঘনিষ্ঠতা ছিল, তিনি প্রফেসর সর্বেপল্লি রাধাকৃষ্ণণ। তাঁদের ঘনিষ্ঠতা এতই গভীর ছিল যে ভাষাচার্য রাধাকৃষ্ণণের ‘দ্য প্রিন্সিপাল উপনিষদস’-এর প্রুফ রিডিং করেছিলেন (সিদ্ধেশ্বর ভট্টাচার্যের নামও রাধাকৃষ্ণণ বইয়ের ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন)। এমন দুরূহ বিষয়ের ভাষান্তর ও ব্যাখ্যার ঠিক পরীক্ষণ ভাষাচার্য ব্যতিরেকে অন্য কার পক্ষেই বা করা সম্ভব ছিল।

সঞ্জিত ঘটক উত্তর রামচন্দ্রপুর, নরেন্দ্রপুর

নিউ ক্লাস

আবাহন দত্ত প্রশ্ন তুলেছেন, সর্বহারার নেতারা কী করে বাজারি রাষ্ট্রের প্রধান হয়ে যান (‘শাসক এবং কমিউনিস্ট’, ২৬-১২)? এই প্রসঙ্গে বলি, শুধুমাত্র রাষ্ট্রের প্রধান হওয়াই নয়, সোভিয়েটের পতনের পর সর্বহারার অনেক নেতাই একলপ্তে প্রায় লাখখানেক বিলগ্নিকৃত সরকারি কোম্পানি কবজা করে, ব্যক্তিমালিক হিসাবে ভেসে ওঠেন। এঁদের অনেকেই সোভিয়েট কমিউনিস্ট পার্টি তথা সোভিয়েট রাষ্ট্রের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। দৈনন্দিন নীতি প্রয়োগে আর সোভিয়েট রাষ্ট্রতন্ত্রের নিবিড় অনুশীলনে এঁরা ছিলেন বিশেষ দড়। সোভিয়েট কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চতর স্তরের সহায়তায়, নীরব অনুমতিক্রমে এঁদের বাড়বাড়ন্ত। গর্বাচভের অর্থনৈতিক সংস্কারের পরিবেশে এঁদের রমরমা দেখে কে। কমিউনিস্ট দুনিয়ার ভেতরে নীরবে গড়ে ওঠা এই স্তরকেই প্রায় ষাট বছর আগে ইউগোস্লাভ কমিউনিস্ট বিপ্লবী মিলোভান জিলাস নামকরণ করেন ‘নিউ ক্লাস’, অর্থাৎ নতুন ঘরানার শাসক শ্রেণি।

প্রদ্যুম্ন বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা-১২

জিজিয়া

‘ভুল ধারণা’ (১৩-১২) চিঠিটি পড়লাম। কিছু তথ্য সংযোজন করি। ধর্মাচরণ সংক্রান্ত ‘জিজিয়া কর’ আওরঙ্গজেব হিন্দুদের উপর চাপিয়েছিলেন, কিন্তু তার বিনিময়ে হিন্দুদের উপর থেকে ছোট-বড় ৬৫টি করের বোঝা তুলে নেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন উঠবে, মুসলমানদের উপর এই কর চাপানো হয়নি কেন। সে সময়ে ভারতে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা যা ছিল, তাদের উপর এই কর চাপিয়ে রাজকোষ খুব বেশি পূরণ হত না।

আরও একটি তথ্য উল্লেখ্য: জিজিয়া করের বিনিময়ে সরকারের তরফে করদাতাদের একটি অঙ্গীকারপত্র প্রদান করা হত, যাতে উল্লিখিত থাকত, এই কর গ্রহণের বিনিময়ে সরকার করদাতার প্রাণ রক্ষায় দায়বদ্ধ। ফলে কোনও হিন্দুকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে বাধ্য করা যেত না। এক জন মুসলমানের কিন্তু এই স্বাধীনতা ছিল না।

প্রদীপনারায়ণ রায় শক্তিপুর, মুর্শিদাবাদ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE