Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Letters to Editor

সম্পাদক সমীপেষু: ষড়রিপুর শিকার

এ বছর সেই স্বল্পায়ু ইহুদি নারীবিজ্ঞানীর জন্মশতবর্ষ। রোজ়ালিন্ড এলসি ফ্রাঙ্কলিনের (ছবিতে) মৌলিক গবেষণা গড়ে দিয়েছিল ১৯৬২ সালে অন্য তিন বিজ্ঞানীর ডিএনএ অণুর গঠন ও কাজ বিষয়ে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পথ।

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০ ০১:৫১
Share: Save:

পথিক গুহের ‘কোন আত্মজীবনীর কত কদর’ (১৪-১১) প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। লেখক ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত জেমস ওয়াটসনের লেখা দ্য ডাবল হেলিক্স-এর জনপ্রিয়তার কথা বিস্তৃত ভাবে লিখেছেন। উল্লেখ করেছেন, “বড় বড় মানুষেরা শুধু যে মহত্ত্বের বর্মে ঢাকা পড়ে থাকেন না, তাঁরাও যে আর পাঁচ জনের মতো রক্তমাংস দিয়ে গড়া; বিশেষত ষড়রিপুর শিকার, তা জানলে পাঠকের ভাল লাগে।” লেখক এ কথাও উল্লেখ করেছেন, এই আত্মজীবনী পাঠ করে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন আরও দুই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী। এখানেই একটু খটকা লাগল। ওয়াটসনের সেই আত্মজীবনীর আর এক বিপ্রতীপ দিকের কথা কেন নীরবতায় ঢাকা রইল?

এ বছর সেই স্বল্পায়ু ইহুদি নারীবিজ্ঞানীর জন্মশতবর্ষ। রোজ়ালিন্ড এলসি ফ্রাঙ্কলিনের (ছবিতে) মৌলিক গবেষণা গড়ে দিয়েছিল ১৯৬২ সালে অন্য তিন বিজ্ঞানীর ডিএনএ অণুর গঠন ও কাজ বিষয়ে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পথ। অথচ, তাঁকে নিয়ে ওয়াটসন অজস্র বিরূপ মন্তব্য করেছেন তাঁর বইতে। রিপুর উপদ্রবের উল্লেখ করা মানে কিন্তু কারও মেধার প্রতি অকারণ কটাক্ষ করা নয়। নারীবিজ্ঞানী বলেই কি এ বিষয়ের অবতারণা সচেতন ভাবে করেছিলেন ওয়াটসন? বেঁচে থাকলে হয়তো দু’বার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার অধিকারী হতেন রোজ়ালিন্ড। এখানে অবশ্যই উল্লেখ্য, ওয়াটসনের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছিলেন সমকালীন অসংখ্য বিজ্ঞানী। আর গত ৫০ বছর ধরে রোজ়ালিন্ডের কাজের মূল্যায়ন করে বিস্মিত হয়েছে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানী মহল। ওয়াটসনের আত্মজীবনীর বিতর্কিত অংশটি সেই গরিমাকে ম্লান করতে পারেনি।

কৃষ্ণা রায়, অধ্যক্ষ, বেথুন কলেজ

একই থালায়

আমার ঠাকুরদাদা ছিলেন অবিভক্ত ভারতে ভোলার বীণাপাণি গার্লস হাই স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক। পূর্ববঙ্গের রীতি মেনে আমরা ঠাকুরদাকে ‘দাদা’ বলেই ডেকেছি। বরিশাল জেলার অন্যতম সাব-ডিভিশন ছিল ভোলা। দাদা পরিচিত ছিলেন ‘মানু মাস্টার’ নামে। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে ছাত্রছাত্রী পড়াতেন। এলাকার পরিচিত উকিল খাঁ সাহেবের মেয়েদেরও পড়িয়েছেন। খাঁ সাহেবের পীড়াপীড়িতে স্থানীয় মাদ্রাসায়ও পড়াতেন। দাদার মুখে শুনেছি, খাঁ সাহেব তাঁর পুত্রের বিবাহ ঠিক করে প্রথমে নিজের বাড়িতে না গিয়ে দাদার বাড়িতে গিয়ে বলেছিলেন, “মানু মাস্টার, আপনার ছাত্রের বিয়ে ঠিক করে এলাম।” ছাত্রও বিয়ে করতে যাওয়ার আগে প্রথমে আমার দাদা আর ঠাকুমার আশীর্বাদ নিয়েছিলেন।

সাহেবগঞ্জে আমাদের প্রতিবেশী ছিলেন মিয়াকাকু। মিশনারি স্কুলে জীবন বিজ্ঞান পড়াতেন। ওঁর স্ত্রী কেকা কাকিমা জন্মসূত্রে হিন্দু। কপালে সিঁদুর দিতেন। কাকুর কোয়ার্টার্সে সরস্বতী পুজো করতেন দাদা। এক বার কাকিমা আর কুন্তল পুজোয় এসে অঞ্জলি দিতে পারবে কি না তা নিয়ে ইতস্তত করায়, দাদা ওঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, “ঈশ্বরের কোনও ভাগাভাগি নেই। তিনি সমান ভাবে সকলের।” তার পর থেকে ওঁদের মধ্যে আর অস্বস্তি দেখিনি।

১৯৭৯ সালে দাদা সাহেবগঞ্জে মারা যান। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান নির্বিশেষে বহু মানুষ মরদেহে কাঁধ দেন এবং চিতায় জল দেন। খবর পেয়ে তাঁর কয়েক জন ছাত্র মাস দুয়েক পরে আমাদের কলকাতার বাড়িতে ঠাকুমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তাঁদের সকলেই বাংলাদেশের, মুসলিম ধর্মাবলম্বী এবং সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁদের মধ্যে এক জন আমাকে বলেছিলেন, “মানু মাস্টারের হাতে না পড়লে আমি হয়তো আমার পারিবারিক পেশা ডাকাতিই বেছে নিতাম। ওঁর কাছে পড়েই পরে মাছের ব্যবসা শুরু করি।”

নরেন্দ্রপুরে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকতে আমার সহপাঠী আবুল, আসিফ, আনোয়ারদের সঙ্গে অন্য সকলের মতোই মিশতাম। আমাদের মতোই ওরাও সকাল-সন্ধ্যায় প্রার্থনার জন্য ঠাকুরঘরে যেত। আমরা একই থালায় খেতাম। আমি ভেজিটেবল চপ ভালবাসি বলে আবুল কত বার ওর ভাগেরটা থালা থেকে আমার মুখে গুঁজে দিয়েছে।

ইদের সময় আবুলের বাড়ি থেকে সিমুই এবং অন্যান্য উপাদেয় খাবার আসত। আর আমরা সবাই মিলে তা হইহই করে খেতাম। হস্টেলে থালা এবং গেলাসের গায়ে আমাদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর লেখা থাকত। থালাগুলো খাবার ঘরে থাকত। রেজিস্ট্রেশন নম্বর মিলিয়ে থালা নেওয়ার চল ছিল না। এক জনের থালায় আর এক জনের খাওয়াই ছিল দস্তুর। ক্লাস ফাইভে ফার্স্ট হয়েছিল আসিফ। ক্লাস সিক্সে আমাদের এক সহপাঠীর মাকে বলতে শুনেছিলাম, “তুই আসিফের থালা বেছে নিয়ে তাতে খাবি। তা হলে তুইও ফার্স্ট হতে পারবি।” আমার ওই সহপাঠী কিন্তু হিন্দু ছিল। এই বিশ্বাসের মধ্যে এক ধরনের ছেলেমানুষিপনা থাকলেও ধর্মীয় গোঁড়ামি বা নৈতিক তঞ্চকতা ছিল না।

ধর্মীয় উন্মাদনাকে কেন্দ্র করে মানুষে-মানুষে বিভেদ যখন উস্কে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যখন নিজের ধর্মকে অন্যের ধর্মের তুলনায় উন্নত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, তখন এই সব অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, মানবিকতাই সেরা ধর্ম।

তীর্থঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, হাউনস্লো, লন্ডন

বিপন্ন বাউল

‘বাউলও হাতিয়ার’ (১৫-১১) পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। বলা হয়েছে, জনসংযোগের নতুন উপায় হিসেবে বাউলগানকে ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি। উদ্দেশ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের কৃতিত্ব প্রচার। অর্থাৎ, বাউল অঙ্গের সুরের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশে কিছু পদকর্তার লেখা গান ট্রেনের কামরায় কামরায় বাউলরা গেয়ে যাবেন। অবশ্যই নগদ পয়সার বিনিময়ে। মনে হচ্ছে সিরাজ সাঁই, লালন ফকির, ভবা পাগলা প্রমুখের সৃষ্ট ঐতিহ্যমণ্ডিত বাউলদর্শন ও বাউলগানের সুদীর্ঘ ধারা এ বার রাজনৈতিক প্রভুদের কৃপায় ধ্বংস হতে চলেছে।

রাজনৈতিক বার্তা প্রচার বা চেতনার উন্মেষের জন্যে মানুষের কাছে পৌঁছতে সঙ্গীত অবশ্যই একটি শক্তিশালী মাধ্যম। চল্লিশ বা পঞ্চাশের দশকে অসংখ্য গণসঙ্গীত আইপিটিএ মারফত পরিবেশিত হত, যা শুধু চেতনার উন্মেষ করত না, মনকেও মাতিয়ে দিয়েছিল। সে সব অসাধারণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আমরা অনেক পিছনে ফেলে এসেছি। এখন ক্ষমতায় থাকলে যে কেউ নিজের লেখা কবিতায় সুরারোপ করে পেশাদার শিল্পীদের দিয়ে রেকর্ড করিয়ে পুজো প্যান্ডেলে বাজাতে বাধ্য করতে পারে।

বাউলগানেও গত কয়েক বছর ধরে কিছু পরিবর্তন হয়ে চলেছে। কারণটা মূলত অর্থনৈতিক। বছর পনেরো আগে কর্মসূত্রে আমি প্রায়ই বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেতাম সকালের গণদেবতা এক্সপ্রেস ধরে। সেখানে এক জন বাউল নিয়মিত গান শোনাতেন, যাঁর আমি খুব ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এক বার খাঁটি বাউলগানে চটুল কিছু শব্দ বসিয়ে গাইতে শুরু করতেই আমি প্রতিবাদ করে থামতে বলি। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, বেশির ভাগ মানুষ এই রকম শুনতে ভালবাসে। শান্তিনিকেতনের শনিবারের হাটেও একই অভিজ্ঞতা। কিন্তু কেন্দ্রের শাসক দলের প্রস্তাবিত এই কাজ শুধু যে বাউলদর্শন ও তার অসাধারণ গানের ঐতিহ্যে আঘাত হানবে তা-ই নয়, নিয়ে আসবে অপসংস্কৃতির জোয়ার। তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

অনিলেশ গোস্বামী, শ্রীরামপুর, হুগলি

মোবাইলে মা

কালীপুজোর রাতে টিভিতে তারাপীঠের মন্দিরে আরতি দেখছিলাম। তারামায়ের মুখের সামনে, মাত্র দু’হাত দূরে প্রায় ৯টি মোবাইল ধরা রয়েছে। তাঁরা আরতি রেকর্ড করতে ব্যস্ত। খুবই বিরক্ত লাগছিল। পুজোর দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা কি গর্ভগৃহে মোবাইল নিয়ে ঢোকা বারণ করতে পারেন না?

দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়, কোন্নগর, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters to Editor Pathik Guha Editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE