Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Education system

সম্পাদপ সমীপেষু: শিক্ষায় আঁধার

উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের সময় সংসদ সভাপতি উল্লেখ করেন, একমাত্র আমাদের রাজ্যেই উচ্চ মাধ্যমিকে ষাটের বেশি বিষয় অন্তর্ভুক্ত।

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৩ ০৪:১৪
Share: Save:

প্রতি বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলে দেখা যায়, জেলা-স্কুলগুলির পরীক্ষার্থীরা মেধাতালিকায় বেশির ভাগ স্থান দখল করেছে, এবং তা নিয়ে সাড়া পড়ে যায়। কিন্তু, এর বাইরে সামগ্ৰিক ফলাফলের দিকটি নিয়ে তেমন চর্চা হয় না। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। অথচ, এই চর্চার খুব প্রয়োজন ছিল (প্রদীপের নীচে, ২৬-৫)। কারণ, এ বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সামগ্রিক ফলাফলের ছবি মোটেই স্বস্তিকর নয়। দুই ক্লাসের প্রতিটিতেই এক লক্ষেরও বেশি সংখ্যক পরীক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ। পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো কয়েকটি জেলা ছাড়া বাকি সব জেলার পাশের হার বছরের পর বছর কেন বাড়ছে না?

উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের সময় সংসদ সভাপতি উল্লেখ করেন, একমাত্র আমাদের রাজ্যেই উচ্চ মাধ্যমিকে ষাটের বেশি বিষয় অন্তর্ভুক্ত। এই সমস্ত বিষয় পড়ানোর জন্য স্কুলগুলিতে যথেষ্ট শিক্ষক আছেন কি? অধিকাংশ স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস চালু রাখতে আংশিক অথবা অতিথি শিক্ষকদের উপরই নির্ভর করতে হয়। এ দিকে দুর্নীতির জালে জড়িয়ে শিক্ষক-নিয়োগ ‌প্রক্রিয়া বিগত কয়েক বছর ধরে আটকে। রাজ্য সরকার দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের হাতে মোবাইল তুলে দিচ্ছে। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখছি, তারা পড়াশোনা ছেড়ে মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। স্বাভাবিক ভাবেই, এর কু-প্রভাব পড়ছে পরীক্ষার ফলাফলে।

এরই মধ্যে, সংসদ সম্প্রতি নোটিস দিয়ে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ভার স্কুলের উপর ন্যস্ত করেছে। পদক্ষেপটি একেবারেই সময়োপযোগী নয়। এর ফলে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে, সার্বিক ভাবে পড়াশোনার মান পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষা শিবিরের অনেকেই। তাঁরা মনে করছেন, একাদশে পড়ুয়াদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ আগে যেটুকু ছিল, এর ফলে তাতেও ভাটা পড়বে। আখেরে উচ্চ মাধ্যমিকে সার্বিক ফলাফল খারাপ হবে, অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে।

তাই, অবিলম্বে সরকার ও শিক্ষা দফতরের উচিত আলোচনায় বসে যথাযথ পদক্ষেপ করা। এর অন্যথা হলে, প্রদীপের তলায় অন্ধকারটি থেকেই যাবে।

অরুণ মালাকার, কলকাতা-১০৩

বিজ্ঞানের মর্যাদা

একই দিনে প্রকাশিত দু’টি সংবাদ, ‘রবীন্দ্র সরোবরে যজ্ঞ করতে বাধা নেই, পরিবেশ আদালতের নির্দেশে বিতর্ক’, এবং ‘বেদ-বিজ্ঞান যোগে ইসরোর চেয়ারম্যান’ (২৬-৫) চোখে পড়ল। প্রথম সংবাদ পড়ে এটুকু বুঝলাম যে, যজ্ঞকর্মে ও যজ্ঞের ধোঁয়ায় সরোবর ও পরিবেশের ক্ষতি হয় না, বরং যজ্ঞের ধোঁয়ায় পরিবেশে জীবাণু ধ্বংস হয়, স্বাস্থ্য ভাল হয়, এই তত্ত্ব আদালতে কিছুটা হলেও স্বীকৃতি পেয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষিত ও যুক্তিবাদী যাঁরা আছেন, যে কোনও তত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতা সম্বন্ধে তাঁরা সচেতন, এবং নিজবুদ্ধিতে তত্ত্বের গুণাগুণ উপলব্ধিতে সক্ষম— এটুকুই আজ আশার কথা। সুভাষ দত্ত বা তাঁর মতো পরিবেশচিন্তক কেউ হয়তো এ বার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন রবীন্দ্র সরোবরের বিষয়টিতে বিচার চেয়ে। আধুনিক চিকিৎসা-বিজ্ঞান ও পরিবেশ-বিজ্ঞান এক দিকে, আর ধর্মশাস্ত্র অন্য দিকে। এই দ্বন্দ্ব ক্ষেত্রে আইনশাস্ত্রের প্রয়োগ এ বার শেষ পর্যন্ত কোন পথে চলে, তা দেখে নিলে দেশ ও দশের গতিপথ চিন্তাশীল মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

দ্বিতীয় খবর পড়ে জানা গেল, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চেয়ারম্যান এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন যে, বেদ থেকে আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম। বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নাকি বেদ থেকেই প্রথমে উদ্ভূত হয়ে কালক্রমে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার বলে পরিচিত হয়েছে। এমন কথা ইদানীং অবশ্য এ দিকে-ও দিকে শোনা যায় না, তা নয়। এ বার এক বিজ্ঞানীর মুখে শোনা গেল। মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞানী মহাশয় এই কথাগুলি নিজের বাড়ির বৈঠকখানায় চায়ের আসরে বসে বলেননি। বলেছেন এক সারস্বত কেন্দ্রে বিদ্যার্থীদের সমাগমে দাঁড়িয়ে, শিক্ষাচর্যার এক মহৎ অনুষ্ঠানে দেশের এক বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসাবে অংশগ্রহণ করে!

ঋগ্বেদ থেকে অথর্ব বেদ পর্যন্ত চতুর্বেদ নিঃসন্দেহে ভারতবর্ষীয় সভ্যতার এক সুমহান ঐতিহ্য। বৈদিক সাহিত্যে প্রাচীন ভারতীয়দের মননশীলতার এক অনন্য পরিচয় প্রতিবিম্বিত। অন্য দিকে, আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা ও ক্রমবিকাশ এক স্বতন্ত্র ইতিহাসের বিষয়। সেই ইতিহাসের উপাদান নানা দেশের নানা জাতির নানা কালের মেধা ও জ্ঞানতপস্যা থেকে আহৃত। আধুনিক বিজ্ঞান আজ এক আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির প্রকাশ; এর মাঝে আধুনিক ভারতেরও অংশ রয়েছে। এই নতুন বিশ্বসংস্কৃতিকে আধুনিক মন নিয়েই বুঝতে হবে। শুধু প্রাচীন সাহিত্যের আলোতে আজকের বিজ্ঞানচর্চার ব্যাখ্যা হতে পারে কি? আধুনিক যুক্তিবাদী মন যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা ছাড়া কোনও সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারে না। বিজ্ঞানে ভাবালুতার কোনও স্থান নেই, বিজ্ঞানশিক্ষায় ধর্মীয় তত্ত্বের কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। ব্রিটিশ ভারতে নতুন বিজ্ঞানশিক্ষার যে অঙ্কুরোদ্গম হয়েছিল, তা ছিল এ দেশের, বিশেষত বাংলা প্রদেশের সাংস্কৃতিক নবজাগৃতির অঙ্গ। মনস্বী রামমোহন রায় চেয়েছিলেন দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে পুরনো দেশীয় বিদ্যাচর্চার চেয়ে বরং আধুনিক বিজ্ঞানশিক্ষার সুযোগ তৈরি করুক ইংরেজ সরকার। স্বামী বিবেকানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ একই ভাবে আধুনিক পথে আধুনিক বিজ্ঞানের অনুশীলনের পক্ষপাতী ছিলেন। শুধু প্রাচীন পুঁথিপত্রের মধ্যেই নয়, আধুনিক প্রতীচ্য থেকে পাওয়া বিজ্ঞানের শিক্ষার মধ্যেও শাশ্বত সত্যের পরিচয় গ্রহণ করতে তাঁরা সমান উৎসাহী ছিলেন। বিজ্ঞানের স্বনির্ভর ও স্বাধীন জগৎকে প্রাচীন ভাবনার বৃত্তের সঙ্গে জুড়তে চেষ্টা করা বৃথা। বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলি যে দেশে বা সমাজেই আবিষ্কৃত হয়ে থাকুক, তা সর্বমানবের সম্পদ।

প্রাচীন ভারতে শুদ্ধ বিজ্ঞানচেতনা ও বিজ্ঞানসাধনার যে অস্তিত্ব ছিল, তা ইতিহাস থেকে জানা যায়। মানুষের সামাজিক ও বৌদ্ধিক বিবর্তনে সেই সাধনার যথাযথ মূল্য আছে। কিন্তু আজ ভারতের জনসমাজে ও শিক্ষামহলে নিরপেক্ষ বিজ্ঞানচেতনা ও বিজ্ঞানমনস্কতার অনেকটা অভাব দেখা যাচ্ছে। না-হলে হাজার হাজার বছর আগের প্রত্ন-ভারতীয় ধর্মসাহিত্যের মধ্যেই আধুনিক বিজ্ঞানের ভ্রূণসঞ্চার খুঁজে বার করে অহঙ্কার করার প্রবণতা আজ দেশে নতুন উৎসাহে এত প্রবল হয়ে উঠত না। প্রয়োজন হত না অলৌকিক পৌরাণিক বিষয়কে প্রাচীন ভারতীয় ‘প্লাস্টিক সার্জারি’-র দৃষ্টান্ত হিসাবে ব্যাখ্যা করার।

ভারতীয় সংবিধানের অন্তর্গত ‘মৌলিক কর্তব্য’ শীর্ষক অধ্যায় অনুযায়ী, ভারতের নাগরিকের অন্যতম মৌলিক কর্তব্য হল প্রত্যেক নাগরিককে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, মানবতাবাদ, অনুসন্ধিৎসা ও সংস্কারমূলক মনোভাবের পুষ্টিসাধন করা। এই আধুনিক মন্ত্রটি দেশে আদৃত না হলে কোনও উন্নতিই সম্ভব নয়। সংবিধানেই বিজ্ঞান-উপযোগী চিন্তার অভ্যাস তৈরি করতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক-সমাজই দেশের আসল সম্পদ।

শতদল ভট্টাচার্য, কলকাতা-৯১

পড়ুয়া’ নয়

পার্থপ্রতিম বিশ্বাস তাঁর ‘তিন এবং চারের গেরো’ (১২-৬) প্রবন্ধটিতে সর্বমোট এগারো বার ‘পড়ুয়া’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ‘পড়ুয়া’ শব্দটির ব্যবহার বাংলা ভাষায় খুব একটা ছিল না। এর ব্যাপক প্রয়োগ শুরু হয় ‘সর্বশিক্ষা অভিযান’-এর পর, কারণ এর প্রধান লক্ষ্যই ছিল শিশুদের ‘পড়তে’ শেখানো। প্রবন্ধের বিষয়ভাবনার সঙ্গে একমত হয়েও বলি, ‘পড়ুয়া’ শব্দটির অর্থ ‘যারা পড়ে’, কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা কেবল পড়ে না, তারা লেখে, বোঝে, মুখস্থ করে। তাই ‘পড়ুয়া’র বদলে ‘শিক্ষার্থী’ অথবা ‘ছাত্রছাত্রী’ বলাই বোধ হয় ভাল।

চন্দ্রলেখা দাশগুপ্ত, কলকাতা-২৫

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education system Madhyamik Higher Secondary Exam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE