Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Manmohan Singh

শুধু রাজনীতিক নন, তিনি রাষ্ট্রনায়কও, প্রমাণ করলেন মনমোহন

অনেকে বলেন, তিনি মাত্রাতিরিক্ত নীরব, কণ্ঠস্বরবিহীন। কেউ কেউ বলেন, তিনি রিমোট কন্ট্রোলে নিয়ন্ত্রিত এবং ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছাহীন। কিন্তু মনমোহন সিংহ প্রমাণ করলেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ, অবাঞ্ছিত কটাক্ষ, রুচিহীন চর্চার অনেক ঊর্ধ্বে তিনি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৭
Share: Save:

অনেকে বলেন, তিনি মাত্রাতিরিক্ত নীরব, কণ্ঠস্বরবিহীন। কেউ কেউ বলেন, তিনি রিমোট কন্ট্রোলে নিয়ন্ত্রিত এবং ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছাহীন। কিন্তু মনমোহন সিংহ প্রমাণ করলেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ, অবাঞ্ছিত কটাক্ষ, রুচিহীন চর্চার অনেক ঊর্ধ্বে তিনি। প্রমাণ করলেন, শুধু রাজনৈতিক নেতা নন, প্রকৃত রাষ্ট্রনেতা তিনি।

এই প্রথম বার অবশ্য নয়, মনমোহন সিংহের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কাঠিন্য আগেও প্রমাণিত হয়েছে। ২০০৮ সালে তাঁর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পতন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে জানা সত্ত্বেও এবং তুমুল রাজনৈতিক ঝড়ের মুখে পড়া সত্ত্বেও ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির প্রশ্নে বিন্দুমাত্র মাথা নোয়াননি তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী— গোটা ভারত দেখেছিল সে ঋজুতা। ২০১৭ সালে তিনি আর প্রধানমন্ত্রী নন। কিন্তু রাষ্ট্রনায়কসুলভ ঋজুতা যে তাঁর মেরুদণ্ডেই অঙ্গীভূত, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের উদ্ধারকর্তা হয়ে উঠে আরও এক বার তা প্রমাণ করলেন মনমোহন সিংহ।

মুদ্রা প্রত্যাহার এবং তজ্জনিত পরিস্থিতির বিশদ ব্যাখ্যা চেয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলকে তলব করেছিল এক সংসদীয় সমিতি। প্রবীণ সাংসদদের তীক্ষ্ণ প্রশ্নবাণে নাস্তানাবুদ হচ্ছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর। সংসদীয় সমিতির সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে এমন কিছু মন্তব্য সম্ভবত উর্জিত পটেলকে করতে হত, যাতে রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণের আস্থার ভিতটাই টলে যেতে পারত। ত্রাতা হয়ে দেখা দিলেন সেই ‘নীরব’, ‘কণ্ঠস্বরবিহীন’ ‘রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত’ মনমোহন সিংহই। বিরোধী শিবিরের লাগামটা তো টেনে ধরলেনই। উর্জিত পটেলকেও বরাভয় দিলেন। সর্বোপরি, রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতাগুলোর অনেক উপরে তুলে নিয়ে গেলেন নিজেকে।

মনমোহন সিংহ নিজেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসেবে কাজ করেছেন। তার পর থেকে কখনও যোজনা কমিশনের শীর্ষে, কখনও অর্থ মন্ত্রকের মাথায়, কখনও সরকারের প্রধান পদে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ দায়িত্বগুলো সামলে আসা মনমোহন সিংহ যে সুযোগ্য ব্যক্তি হিসেবেই গুরভারগুলো পেয়েছিলেন, আরও এক বার তার প্রমাণ মিলল। একই সঙ্গে বোঝা গেল, প্রয়োজন পড়লেই দলীয় স্বার্থকে পাশে সরিয়ে রেখে নিখাদ জাতীয় স্বার্থের কথা ভাবতে পারেন যাঁরা, সেই রাজনীতিকরা এখনও নিঃশেষে মুছে যাননি।

বর্তমান সময়টা রাজনীতির পরিসরে ইতিবাচক শক্তিগুলোকে ক্রমশ সঙ্কুচিত হতে দেখছে। দেশের স্বার্থেই যে রাজনীতি, রাজনীতির স্বার্থে যে দেশ নয়, সঙ্কীর্ণ দলবাজির সংস্কৃতি সে সত্যকে ভুলিয়ে দিতে চাইছে। রাজনৈতিক সৌজন্য অনেক আগেই বিপন্ন হয়েছিল সম্ভবত, এ বার শালীনতার বোধগুলোও ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে। এমন একটা অন্ধকারেও কিন্তু মনমোহন সিংহের হাত ধরে আশার আলো ঝিকিয়ে উঠল। জানান দিল, নেতিই সব নয়, নেতিতেই শেষও নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anjan Bandyopadhyay News Letter Manmohan Singh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE