Advertisement
০১ মে ২০২৪
Rape victim

বাতিল পরীক্ষা

আইন অনুসারে একটি মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে যৌন সংসর্গে বাধ্য করা হয়েছে কি না, তা মেয়েটির বয়ানের দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা। তার যৌনজীবনের ইতিহাস সেখানে অপ্রাসঙ্গিক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৫৩
Share: Save:

যে কাজ বহু আগেই করা উচিত ছিল সরকারের, শেষ অবধি তা করতে হল শীর্ষ আদালতকে। ধর্ষণের প্রমাণ হিসেবে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করল, এবং ওই পদ্ধতি প্রয়োগকারীকে শাস্তিযোগ্য বলে ঘোষণা করল আদালত। দেশের মেয়েদের সম্মান, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য ওই পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করা যে জরুরি, তা বহু আগেই নির্ধারিত হয়েছে। ২০১৩ সালেই একটি মামলার বিচার করতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এই পরীক্ষা নিষিদ্ধ করেছিল। তার পরে ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর যৌন নির্যাতনে আক্রান্ত মেয়েদের মেডিক্যাল পরীক্ষার নতুন কার্যপ্রণালী (‘গাইডলাইন’) প্রকাশ করেছিল। সেখানে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ হয়। সেই সঙ্গে, মেয়েদের প্রতি চিকিৎসকদের সংবেদনশীল হওয়ার উপযুক্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজনের কথাও বলা হয়। ফৌজদারি আইনে সংশোধনের পরে এখন চিকিৎসকদের যে আইনি শংসাপত্র প্রদান করতে হয়, সেখানেও উল্লেখ করতে হয় না ওই পরীক্ষার ফল। তা সত্ত্বেও কেন আট বছর পরে ফের একই পরীক্ষাকে নিষিদ্ধ করতে হল সুপ্রিম কোর্টকে? কারণ, নিষেধ সত্ত্বেও এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়ে চলেছে, এবং আদালতে তার ফলাফল পেশ করা হচ্ছে। অথচ, আইনের চোখেও ওই পদ্ধতি অযৌক্তিক— মেয়েদের যোনিতে চিকিৎসক দু’টি আঙুল প্রবেশ করিয়ে যা বুঝতে চান তা হল, আক্রান্ত মেয়েটির যৌনসংসর্গের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে কি না। ডাক্তারের এই সাক্ষ্য দীর্ঘ দিন মেয়েটির ‘চরিত্র’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধর্ষণের দাবিতে সংশয় প্রকাশ করতে ব্যবহার করা হত। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই মনোভাব একান্ত পুরুষতান্ত্রিক, সংবিধান-নির্দিষ্ট লিঙ্গসাম্যের বিরোধী।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি নির্দেশিকা এত জন চিকিৎসক এত বছর ধরে অবাধে লঙ্ঘন করে চলেছেন, কারণ মেয়েদের মর্যাদাহানি বন্ধ করার কর্তব্য পালনে হাসপাতালের উদ্যোগ নেই, সরকারও নজরদারিতে আগ্রহী নয়। অথচ, আইন অনুসারে একটি মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে যৌন সংসর্গে বাধ্য করা হয়েছে কি না, তা মেয়েটির বয়ানের দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা। তার যৌনজীবনের ইতিহাস সেখানে অপ্রাসঙ্গিক। বরং পরীক্ষার নামে এই অপমানজনক পদ্ধতির প্রয়োগ কার্যত অপরাধ, কারণ মেয়েদের অনুমতি ব্যতিরেকে তাদের শরীরে কোনও রকম পরীক্ষা করার অধিকার চিকিৎসকেরও নেই। আদালতও মেয়েটির নিজের সাক্ষ্যকে ছোট করে চিকিৎসকের সাক্ষ্যকে অধিক গুরুত্ব দিতে পারে না, তা আইন ও ন্যায়ের পরিপন্থী।

এই কুপ্রথা বন্ধ করতে এ বার সুপ্রিম কোর্টকে ঘোষণা করতে হল, ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ প্রয়োগ করলে চিকিৎসকদের বিধিলঙ্ঘনের দায়ে দোষী বলে গণ্য করা হবে। তাতে কতটুকু কাজ হবে, সে সংশয় অবশ্য থেকে যায়। কারণ থানা, আদালত, হাসপাতাল-সহ প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানেই নির্যাতিত মেয়েদের হয়রানির পালা চলতেই থাকে। তদন্ত ও বিচারের প্রক্রিয়া প্রায়ই মেয়েদের প্রতি এমন যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে যে, তা দ্বিতীয় বার নির্যাতনের সমান মনে হয়— এই অভিযোগ উঠেছে বার বার। অতএব বিধি লঙ্ঘনকারীর শাস্তির বিধান থাকাই যথেষ্ট নয়, যদি না সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের রীতিনীতি সংস্কারে আগ্রহী হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rape victim Two Finger Test Supreme Court of India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE