Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
Grand Hotel

দখলের পর

গ্র্যান্ড হোটেলের সামনে হকারদের ফুটপাত দখলের অভিযোগ নতুন নয়। এ কাজ যে হকাররা গায়ের জোরে বা প্রভাব খাটিয়ে করেন তা-ও নয়, বহু বছর ধরে ওই জায়গাটিতে বসতে বসতে এ যেন তাঁদের ‘অঘোষিত অধিকার’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

grand hotel

কলকাতার গ্র্যান্ড হোটেল। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৩
Share: Save:

শহরের ‘গ্রেড-ওয়ান হেরিটেজ’ হিসাবে স্বীকৃতি গ্র্যান্ড হোটেলের, তারই সামনের ফুটপাত তথা ‘আর্কেড’ অংশটি কার্যত হকারদের দখলে চলে গিয়েছিল অনেক কাল ধরেই। তা নিয়ে মামলাও হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে, এ বার সেই সূত্রেই আদালতের নির্দেশ এল, হোটেলের সামনে ফুটপাতের এক-তৃতীয়াংশ জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া অংশেই কেবল হকাররা তাঁদের পসরা নিয়ে বসতে পারবেন, দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা থাকবে পথচারীদের জন্য। কলকাতা পুলিশ, কলকাতা পুরসভা ও টাউন ভেন্ডিং কমিটি এই জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, আদালত বলেছে পুলিশ ও পুরসভাকে খেয়াল রাখতে হবে যেন হকারদের এই সীমারেখা মেনে চলার অন্যথা না হয়।

গ্র্যান্ড হোটেলের সামনে হকারদের ফুটপাত দখলের অভিযোগ নতুন নয়। এ কাজ যে হকাররা গায়ের জোরে বা প্রভাব খাটিয়ে করেন তা-ও নয়, বহু বছর ধরে ওই জায়গাটিতে বসতে বসতে এ যেন তাঁদের ‘অঘোষিত অধিকার’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতটাই যে, এসপ্লানেড-ধর্মতলা অঞ্চলে নানা কাজে যাতায়াত করা শহরবাসী, বিদেশি পর্যটক, গ্র্যান্ড হোটেলে আসা অতিথি— সকলেই ধরে নিয়েছেন যে হোটেলের সামনে ওই অংশটিতে হকাররা থাকবেনই, ভিড় ও বিশৃঙ্খলার এমন ছবিই স্বাভাবিক, এবং জনজীবন, ওই অংশে থাকা অন্য প্রতিষ্ঠিত বিপণি এমনকি গ্র্যান্ড হোটেলকেও এই অব্যবস্থা মানিয়ে চলতে হবে। পুলিশ ও পুরসভার মানসিকতাও এই পারস্পরিক বোঝাপড়া ও মানিয়ে নেওয়ার নীতিতেই সিলমোহর দিয়ে এসেছে। গত সেপ্টেম্বরে আদালত সিইএসসি কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করেছিল হকারদের বিদ্যুৎ চুরি নিয়ে, সাম্প্রতিক রায়ের সূত্রে জানা গিয়েছে হকাররা বিদ্যুৎ চুরি করেন না, তাঁদের জন্য দু’টি বিদ্যুতের মিটার বসানো আছে। অর্থাৎ সমগ্র ব্যবস্থাটিই চলছে হকারদের সুযোগ-সুবিধা মাথায় রেখেই। মাঝে মাঝে যখন তাঁদের কাজ ও আচরণ মাত্রা ছাড়ায়, তখন কর্তৃপক্ষ সক্রিয় হয়ে ওঠে, ক’দিন পর পূর্বাবস্থা ফিরে আসে।

হেরিটেজ তালিকাভুক্ত কোনও ইমারতের সামনে কেন আদৌ হকার ও তাঁদের পসরা ঘিরে বছরভর অব্যবস্থা থাকবে, সে প্রশ্নটি শহরের নীতি-নির্ধারক ও প্রশাসকদের কেন মাথায় আসে না তা চরম আশ্চর্যের। শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশের ঐতিহ্য-চরিত্র রক্ষায় আদালতে যেতে হচ্ছে, এবং আদালত কড়া কথা না বললে কিংবা পুলিশ ও পুরসভাকে স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ না দেওয়া ইস্তক কোনও কাজ হচ্ছে না, এ কি একাধারে নাগরিকদের দুর্ভাগ্য এবং কলকাতা পুলিশ ও পুরসভার ব্যর্থতাকেও তুলে ধরে না? কোর্টের নির্দেশে আপাতত কাজ হয়েছে, হোটেলের সামনের ফুটপাতের সিংহভাগ পথচারীদের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। কিন্তু কত দিন তা থাকবে সেটাই দেখার। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও পুরসভার নাকের ডগাতেই ফের হকাররা তাঁদের ‘পুরনো অধিকার’ ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে তৎপর হবেন, এ আশঙ্কা অমূলক নয়। আদালত চাইলে সম্পূর্ণ ফুটপাতও হকারমুক্ত হতে পারত— এত কিছুর পরেও তাঁদের যে এক-তৃতীয়াংশ জায়গা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানেই বিচারব্যবস্থার মানবিক দিকটিও প্রকাশিত। এখন বাকি দায়িত্ব পুলিশ ও প্রশাসনের, তারা অতিমানবিক ঔদার্যে চোখ বন্ধ করে না থাকলেই হল। দরকার সারা বছর, যে কোনও পরিস্থিতিতে সক্রিয়তা, নজরদারি ও যথাযথ পদক্ষেপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Grand Hotel hawkers police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE