Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Puja Pandal

রুদ্ধ পথ

ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো হোক বা হনুমান জয়ন্তী-রামনবমী-গণেশ পুজোর মতো তুলনামূলক ভাবে নতুন পুজো, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিড়ম্বনা একই রকম।

Construction of Pandal blocking road.

২০০৯ সালেই পুজোর আয়োজন এবং প্যান্ডেল নির্মাণের ক্ষেত্রে হাই কোর্টের নির্দেশিকা জারি হয়। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:১২
Share: Save:

পথ কি শুধুই পথচারী এবং যানবাহনের? কলকাতার পরিপ্রেক্ষিতে যদি প্রশ্নটি তোলা হয়, তবে বাস্তবসম্মত উত্তরটি হল, না— পথ হকারের, অস্থায়ী দোকানের, বাজারের, মিছিলের, এবং অতি অবশ্যই পুজো মরসুমে প্যান্ডেলের। নানাবিধ আগ্রাসন থেকে পথকে সুরক্ষিত রাখার আইন অবশ্য এ রাজ্যের আছে, তবে তার অধিকাংশই রাজনীতি এবং ধর্মীয় আবেগের দাপটে কুণ্ঠিত, অদৃশ্যপ্রায়। সম্প্রতি হনুমান পুজোর অনুমতি চেয়ে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের উচ্চ আদালতের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা যেমন জানিয়েছেন, তিনি নিজে রাস্তা বন্ধ করে পুজোর আয়োজনের বিরুদ্ধে। এবং যত ক্ষণ না রাজ্য প্রশাসন এই বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করছে, তত ক্ষণ অবধি সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ হবে না।

এই পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ, বাস্তবধর্মীও বটে। বস্তুত, ২০০৯ সালেই পুজোর আয়োজন এবং প্যান্ডেল নির্মাণের ক্ষেত্রে হাই কোর্টের নির্দেশিকা জারি হয়। বেশ কিছু জরুরি বিষয় তাতে নির্দিষ্ট করা হয়। যেমন— প্যান্ডেলের চার দিকই নিকটবর্তী বাড়ি, সীমানা নির্দেশক দেওয়াল এবং স্থায়ী পরিকাঠামো থেকে অন্তত চার ফুট দূরত্বে থাকতে হবে, সামগ্রিক ভাবে প্যান্ডেলের উচ্চতা ৪০ ফুট ছাড়াবে না, প্যান্ডেলে ঢোকা এবং বার হওয়ার পৃথক দরজা নির্মাণ করতে হবে ইত্যাদি। কিন্তু আদালতের আদেশের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রেখেও বলা প্রয়োজন যে, রাস্তা বন্ধ করে প্যান্ডেল নির্মাণের মতো অন্যায়টিকে ‘সম্পূর্ণ অসহনীয়’ বলে চিহ্নিত করা জরুরি ছিল। পুজোর প্যান্ডেলের দুর্ভোগ ইঞ্চি-ফুটের হিসাবের উপর দাঁড়িয়ে থাকে না। বিশেষত দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে মাসাধিক কাল ধরে যাতায়াতের রাস্তার উপর বাঁশের কাঠামো, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিপজ্জনক নির্মাণ সামগ্রী, নাগরিকের যে অশেষ অসুবিধার সৃষ্টি করে, তাকে আটকানো কি জরুরি নয়? যে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মান্থা নিজ পর্যবেক্ষণটি তুলে ধরেছেন, সেই মামলায় তিনি পূর্বনির্দিষ্ট স্থানে পুজো আটকানোর ক্ষেত্রে আদালতের অপারগতার কথা জানিয়েছেন, কারণ দীর্ঘ দিন ধরে ওই একই জায়গায় পুজোটি হয়ে আসছে। সবিনয় প্রশ্ন: বিষয় যেখানে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজের অসুবিধা, সেখানে দীর্ঘ দিনের রীতির প্রসঙ্গটি কি বৈধতা পেতে পারে? রাস্তা আটকে পুজোর উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করাই কি বিধেয় নয়? নাগরিক অধিকারের প্রশ্নটিকে মানুষের আবেগের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া জরুরি।

ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো হোক বা হনুমান জয়ন্তী-রামনবমী-গণেশ পুজোর মতো তুলনামূলক ভাবে নতুন পুজো, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিড়ম্বনা একই রকম। এবং রাজনীতির কল্যাণে পুজো-উৎসবের ক্রমবর্ধমান সংখ্যাটিও এ বঙ্গে অবহেলার বস্তু নয়। পথ বন্ধ বা সঙ্কীর্ণ পথের কারণে বহু জরুরি পরিষেবাও থমকে যায়। আটকে থাকে অ্যাম্বুল্যান্স, রেল-বিমান ধরতে নাকাল হন নাগরিক। কোনও সভ্য শহরে কি এমন রীতি দীর্ঘ দিন চলতে দেওয়া কাম্য? উৎসব পালনই যদি মূল উদ্দেশ্য হয়, তবে তা অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক জায়গায়ও আয়োজন করা যেতে পারে। বিকল্প ভাবনা ভাবতে হবে প্রশাসনকেও। সর্বোপরি, অন্যায় দীর্ঘ দিন যাবৎ চললেও তা ‘অন্যায়’ই থাকে। তার অবসানের জন্য নাগরিক মহামান্য আদালত এবং প্রশাসনের সাহায্যই প্রত্যাশা করেন। রাস্তা জুড়ে পুজোর প্যান্ডেলের মতো অন্যায়ের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হওয়ার নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Puja Pandal roads
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE