Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Gender Discrimination

পুষ্টির চিত্র

আন্তর্জাতিক সমীক্ষার তথ্যে যখনই ভারতের অপুষ্টির তীব্রতা প্রকাশিত হয়, তখনই কেন্দ্র সেই সমীক্ষার পদ্ধতি ও ফলাফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে।

পুষ্টিতে বৈষম্য বস্তুত মানব সমাজে লিঙ্গবৈষম্যের একটি প্রধান লক্ষণ।

পুষ্টিতে বৈষম্য বস্তুত মানব সমাজে লিঙ্গবৈষম্যের একটি প্রধান লক্ষণ। —প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:২৪
Share: Save:

ডিম, ফল, দুধের মতো পুষ্টিকর খাবার পুরুষদের তুলনায় কম খাচ্ছে মেয়েরা। দরিদ্র পরিবারে তো বটেও, অপেক্ষাকৃত ধনীদের মধ্যেও এই খাবারগুলি মেয়েদের পাতে পড়ছে সামান্যই। পঞ্চম জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্যের বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত এই তথ্য সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকায়। তথ্যটি অবাক করে না, কারণ পুষ্টিতে বৈষম্য বস্তুত মানব সমাজে লিঙ্গবৈষম্যের একটি প্রধান লক্ষণ। সেখানে আর্থিক শ্রেণির বৈষম্যের মতোই তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে লিঙ্গবৈষম্য। ভারতে অপুষ্টি সমস্যার কয়েকটি স্তর দেখা যায়। প্রাথমিক স্তরে সমস্যা এই যে, কেন্দ্রের সরকার অপুষ্টির সমস্যার গুরুত্বকে স্বীকার করতে অনাগ্রহী। আন্তর্জাতিক সমীক্ষার তথ্যে যখনই ভারতের অপুষ্টির তীব্রতা প্রকাশিত হয়, তখনই কেন্দ্র সেই সমীক্ষার পদ্ধতি ও ফলাফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে। এ বছর অক্টোবরে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান ১২৫টি দেশের মধ্যে ১১১, তা প্রকাশিত হওয়ার পরেই কেন্দ্রীয় সরকার ওই সমীক্ষার উদ্দেশ্য এবং পদ্ধতি, দু’টি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল। সেই সঙ্গে দাবি করেছিল যে, রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার যে খাদ্য বিলি করছে, তাতে উপকৃত হচ্ছে আশি কোটি মানুষ। এই হিসাবে ভুল নেই, কিন্তু সেই ‘খাদ্য’ প্রধানত শস্য— চাল, গম, বজরা, প্রভৃতি। সুষম পুষ্টির জন্য প্রয়োজন নানা ধরনের খাদ্য— ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ফল, দুধ ও দুগ্ধজাত নানা দ্রব্য, ডিম, মাছ, ডাল প্রভৃতি। চতুর্থ ও পঞ্চম জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার ফল তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, এই ধরনের খাদ্যগুলি একেবারেই খান না, এমন মানুষের সংখ্যা কমেছে। অর্থাৎ, পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস বেড়েছে।

তার মধ্যেও তৈরি হচ্ছে দ্বিতীয় স্তরের সমস্যা— আর্থিক শ্রেণি এবং লিঙ্গ পরিচয় ভারতে পুষ্টির নির্ণায়ক। সব শ্রেণির মহিলাদের মধ্যেই ডিম, দুধ প্রভৃতি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার রীতি পুরুষদের থেকে কম— ২০২১ সালে মেয়েদের আটাশ শতাংশ দুগ্ধজাত কোনও খাবার খায়নি, দরিদ্রতম কুড়ি শতাংশ আর্থিক শ্রেণির মধ্যে ওই হার সাতচল্লিশ শতাংশ। ডিম, মাছ, মাংসের মতো প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার অর্ধেকেরও বেশি মহিলা খায় না, পুরুষদের ক্ষেত্রে তা বিয়াল্লিশ শতাংশ। মেয়েদের মধ্যে অর্ধেক খায় না ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ফল, দরিদ্রতম মেয়েদের মধ্যে ওই হার সত্তর শতাংশেরও বেশি। সংখ্যা দিয়েও যে ছবি আঁকা যায়, এই প্রতিবেদন ফের তা দেখাল। দরিদ্রের নাগালের বাইরে থাকছে প্রোটিন, ভিটামিন-সমৃদ্ধ খাবার, এখানেও মহিলারা বিশেষ ভাবে বঞ্চিত।

তার একটা কারণ যেমন পরিবারের মধ্যে মেয়েদের বঞ্চনা, অপর কারণটি অবশ্যই এই যে দারিদ্র মহিলা ও শিশুদের মধ্যে বেশি তীব্র। ভারতে শিশু-অপুষ্টি যে পাঁচ বছরের ব্যবধানের দু’টি জাতীয় সমীক্ষায় যথেষ্ট কমেনি, তার অন্যতম কারণ দারিদ্র। তৃতীয় স্তরের সমস্যাটি পুষ্টি বিষয়ক নীতির দিশাহীনতা। মাথাপিছু পাঁচ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য বিনা পয়সায় বিতরণ পুষ্টির জন্য যথেষ্ট নয়। অথচ, নীতি যখন কার্যকর, তখন তার ফল স্পষ্ট। গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের হার বেশি, কারণ তাদের জন্য রয়েছে সরকারি পুষ্টি প্রকল্প। কী করে সহজপ্রাপ্য পুষ্টিকর খাবার সুলভে দরিদ্রের কাছে পৌঁছনো যায়, পুষ্টি নীতিতে তার প্রতিফলন প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gender Discrimination Society Women Food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE