Advertisement
২১ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

কেমন আছেন?

চেনা মুখ দেখিলে স্মিত হাসিয়া ‘কেমন আছেন?’ জিজ্ঞাসা করিবার মধ্যে গূঢ়তর অর্থের সন্ধান করা অবান্তর। কেন নয় মাস এই কুশল বিনিময়ের স্বাভাবিক কাজটিও করিয়া উঠিতে পারেন নাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই প্রশ্ন করা যাইতে পারে। বস্তুত, নরেন্দ্র মোদী কিঞ্চিত্‌ লঘু স্বরে প্রশ্নটি ভাসাইয়া দিয়াছেন। কিন্তু, যাহা হইয়া গিয়াছে, তাহা অপরিবর্তনীয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এত দিন সচেতন ভাবে নরেন্দ্র মোদীকে এড়াইয়া চলিতেন।

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০০:০০
Share: Save:

চেনা মুখ দেখিলে স্মিত হাসিয়া ‘কেমন আছেন?’ জিজ্ঞাসা করিবার মধ্যে গূঢ়তর অর্থের সন্ধান করা অবান্তর। কেন নয় মাস এই কুশল বিনিময়ের স্বাভাবিক কাজটিও করিয়া উঠিতে পারেন নাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই প্রশ্ন করা যাইতে পারে। বস্তুত, নরেন্দ্র মোদী কিঞ্চিত্‌ লঘু স্বরে প্রশ্নটি ভাসাইয়া দিয়াছেন। কিন্তু, যাহা হইয়া গিয়াছে, তাহা অপরিবর্তনীয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এত দিন সচেতন ভাবে নরেন্দ্র মোদীকে এড়াইয়া চলিতেন। দেশের একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হইয়া যে প্রধানমন্ত্রীর সহিত এমন মুখ দেখাদেখি বন্ধ রাখা চলে না, বিলম্বে হইলেও তিনি সম্ভবত বুঝিয়াছেন। টের পাইয়াছেন, রাজনীতি আর প্রশাসন এক নহে। তাঁহার রাজনৈতিক সত্তা যদি বৈর-র পথে হাঁটিতেও চাহে, সেই প্ররোচনায় পা না দেওয়ার দায়িত্বটি তাঁহার প্রশাসক সত্তার। আশা করা চলে, নরেন্দ্র মোদীও বুঝিবেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি দাবি করে, তিনি নিজেকে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখিবেন। অর্থনৈতিক যুক্তরাষ্ট্রীয়তা অতি কাম্য, কিন্তু কেন্দ্রের সক্রিয় সহযোগিতা ভিন্ন একটি রাজ্যের পক্ষে উন্নয়নের পথে একা চলা দুষ্কর। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের ন্যায় পিছাইয়া পড়া রাজ্যের পক্ষে। দেশের স্বার্থেই পশ্চিমবঙ্গকে সঙ্গে লইয়া যাইতে হইবে। প্রধানমন্ত্রীর সহিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্য-সাক্ষাতের যেটুকু গুরুত্ব, তাহা এইখানেই। যে সহযোগিতার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি গত নয় মাস গতি পায় নাই, এই বৈঠক তাহার সূচনার প্রতীক হইতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁহার ভুল বুঝিয়াছেন, এবং সংশোধন করিবার পথে প্রথম পা ফেলিয়াছেন। অতঃপর, সম্পর্কটি তাহার স্বাভাবিক পথে চলিবে, এইটুকুই আশা। এই বৈঠকের নিকট তাহার অধিক প্রত্যাশা করাও ভুল, এবং বৈঠকটির উপর অন্য কোনও তাত্‌পর্য আরোপ করাও ভুল।

ভুলটি অনেকেই করিতেছেন। কেন প্রধানমন্ত্রী এই বৈঠকের পরই পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া ঋণ মকুব করিয়া দিলেন না, সে প্রশ্নে অনেকেই বিদ্ধ। কুড়ি মিনিটের সৌজন্য সাক্ষাতে এমন সিদ্ধান্ত হইবে, যাঁহারা এমন প্রত্যাশা করেন, তাঁহাদের হতাশ হওয়া ঠেকায় কে? এই বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল না, হয় নাই। বস্তুত, পূর্বসূরির রাখিয়া যাওয়া ঋণের বোঝা লইয়া কাঁদুনি গাহিয়া যে লাভ নাই, প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিতে সেই কথাটি বলিয়া দিয়াছেন— তাঁহার পূর্বসূরিরাও ঋণ রাখিয়া গিয়াছেন। যাহা বলেন নাই, তাহা এই যে, যখন নরেন্দ্র মোদী বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত হইতে রাজদণ্ড পরবর্তী সরকারের হাতে যাইবে, তখন তাঁহারাও সম্ভবত ঋণের উত্তরাধিকার রাখিয়াই যাইবেন। প্রশ্নটি অতএব ঋণ বা সেই বোঝা লাঘব করিবার নহে। প্রশ্ন উন্নয়নের। প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়াছেন। তিনি জানাইয়াছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁহার কোনও প্রতিনিধি রাজ্যের যে কোনও প্রয়োজনে তাঁহার সহিত দেখা করিতে পারেন। বৈঠকের দিনকয়েকের মধ্যেই নির্মলা সীতারমনকে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবেও ঘোষণা করা হইয়াছে। বেঙ্কাইয়া নাইডুও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহিত সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করিয়াছেন। এগুলিই সৌজন্য সফরের স্বাভাবিক প্রাপ্তি। এবং, প্রাপ্তিগুলি মূলত প্রতীকী। কেন্দ্রীয় সরকার যে পশ্চিমবঙ্গের সহিত বিমাতৃসুলভ আচরণ করিবে না, তাহার আশ্বাস। রাজ্যের জন্য যাহা করিবার, পশ্চিমবঙ্গের শাসকদেরই করিতে হইবে। কোনও বৈঠকেই সেই দায় কেন্দ্রের স্কন্ধে চাপাইয়া দেওয়া সম্ভব হইবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anandabazar editorial
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE