Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কিশোরের মৃত্যুতে পুলিশকে রেহাই আদালতের, উত্তপ্ত ফার্গুসন

পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শপিং মল। আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মী।

পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শপিং মল। আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মী।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ১৩:৪৮
Share: Save:

আমেরিকার মিসৌরি প্রদেশের ফার্গুসনে কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউনের মৃত্যুর জন্য শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনকে দায়ী করার বিরুদ্ধে রায় দিল গ্র্যান্ড জুরি। আমেরিকার স্থানীয় সময় অনুযায়ী সোমবার রাতে এই রায় শোনার পরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ফার্গুসন-সহ আমেরিকার বেশ কয়েকটি শহরে। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ফার্গুসনে। সংঘর্ষ, রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া, লুঠ, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের গাড়িতে হামলার মতো নানা ঘটনা ঘটতে থাকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই রায় মেনে নিয়ে শান্তিরক্ষার আবেদন জানিয়েছেন। রায়ে অখুশি হওয়া সত্ত্বেও শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছে ব্রাউনের পরিবারও।

৯ অগস্ট উইলসনের গুলিতে প্রাণ যায় কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর ব্রাউনের। অভিযোগ ওঠে, নিরস্ত্র ব্রাউনকে ইচ্ছে করে হত্যা করেছেন ড্যারেন। যদিও পুলিশের দাবি, আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছিলেন উইলসন। তাতেই প্রাণ যায় ব্রাউনের। এই ঘটনার পরেই ফার্গুসন এলাকা জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাতের পর রাত বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা। চলে লুঠপাটও। বিচার শুরু হওয়ার পরে সাময়িক শান্তি ফেরে। ঘটনার পরে উইলসনকে সবেতন ছুটি দেওয়া হয়।

এ দিন সব দিক খতিয়ে দেখে গ্র্যান্ড জুরি জানায়, এই মৃত্যুর জন্য পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনকে দায়ী করা যাবে না। মিসৌরির নানা জায়গা থেকে বেছে নেওয়া ১২ জন সাধারণ নাগরিক নিয়ে তৈরি গ্র্যান্ড জুরি কয়েক মাস ধরে ঘটনাটির বিচার করে। এই ১২ জনের মধ্যে ন’জন শ্বেতাঙ্গ ও তিন জন কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন। বিচারের শেষে তাঁরা উইলসনকে এই মৃত্যুর জন্য দায়ী না করার সিদ্ধান্ত নেন। রায়ের পরে অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা ছিল। তাই শান্তি বজায় রাখার কথা মাথায় রেখে মার্কিন সময় সোমবার রাত ৮টা নাগাদ এই রায় প্রকাশ্যে আনা হয়। অশান্তি ঠেকাতে স্থানীয় পুলিশ ছাড়াও স্টেট ট্রুপার ও ন্যাশনাল গার্ডকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও শান্তি বজায় রাখা গেল না। রায় শোনার পরেই দলে দলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। বেশ কিছু অসংগঠিত মিছিল শুরু হয়ে যায়। আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিল পুলিশ ও ফার্গুসনের বাণিজ্যকেন্দ্রগুলি। ফার্গুসনের পুলিশ স্টেশনের সামনে উত্তেজিত জনতা ভিড় জমায়। পুলিশের দিকে পাথর ছোড়ার পাশাপাশি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। জবাবে পুলিশকে ধোঁয়া ছড়ানো বোমা, পিপার স্প্রেস ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করতে দেখা যায়।

বিভিন্ন দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বেশ কিছু দোকানের দরজা ভেঙে মালপত্র লুঠ করা হয়। গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। গুলি চালানোর খবরও পাওয়া গিয়েছে। গুলি চলায় বেশ কিছু দোকানের আগুন নেভাতে পারেনি দমকলকর্মীরা। অন্য জায়গায় আগুন নেভাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গোলমাল হয় ফার্গুসনের সেন্ট লুইস শহরতলি এলাকায়। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, ব্রাউনের হত্যার পরে এ দিনই সবচেয়ে বেশি গোলমাল হয়েছে। প্রায় ১৫০ বার গুলি ছোড়া হয়েছে। শূন্যে গুলি ছোড়া হচ্ছে বলে আমেরিকার ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথরিটি ফার্গুসনের আকাশপথে সাময়িক ভাবে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। নানা অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে কোনও প্রাণহানি ঘটেনি বলে জানা গিয়েছে। অন্য দিকে, ন্যাশনাল গার্ডকে ডাকা হলেও এ দিন তাদের পথে নামানো হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। ফাগুর্সন ছাড়া শিকাগো, নিউ ইয়র্ক, লসএঞ্জেলস, ওয়াশিংটন ডিসির মতো বেশ কিছু শহরেও বিক্ষোভ হয়। তবে সেই সব জায়গায় অশান্তি ছড়ানোর খবর পাওয়া যায়নি।

এই রায় শোনার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন ব্রাউনের মা। পরিবারের পক্ষ থেকে জানান, এই রায় গভীর দুঃখ বহন করে এনেছে। ব্রাউনের মা শান্তি বজায় রাখার কথা বলেন। পাশাপাশি পুলিশকে বডি ক্যামেরা পরার দাবিও করেছেন তিনি। তবে পুলিশ অফিসার উইলসেনর বিরুদ্ধে ভুলবশত মৃত্যুর মামলা দায়ের করতে পারে ব্রাউনের পরিবার। পাশাপাশি, ব্রাউনের নাগরিক অধিকার ভঙ্গ করা হয়েছে কি না তা নিয়ে উইলসনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। বস্তুত, এই ঘটনা ফার্গুসনের সমাজকে আড়াআড়ি ভাবে ভেঙে দিয়েছে। ফার্গুসনে মূলত কৃষ্ণাঙ্গদের বাস। আর পুলিশ বাহিনীতে প্রধানত শ্বেতাঙ্গরাই রয়েছেন। এই অবস্থায় ফার্গুসনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রায় ১০ হাজার পুলিশকর্মী প্রয়োজন বলে স্থানীয় পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন। এই ভাবে গণ্ডগোল করে সমস্যার সমাধান হবে না জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। তিনি রায় মেনে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

ছবি: এএফপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

farguson
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE