‘আমি চাই আমার ছবির দর্শক বাড়ুক।’
জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পরে কি লোকে জানলো অতনু ঘোষ ‘ভাল’ পরিচালক?
দেখুন, জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর লোকের আগ্রহ বেড়েছে ‘ময়ূরাক্ষী’ নিয়ে। যাঁরা আগে ছবিটা নিয়ে আগ্রহ দেখাননি তাঁরাও গেলেন ছবিটা দেখতে। এটা বাংলা ছবির জন্য খুব ভাল। তবে আমার খুব একটা আহামরি কিছু হয়নি। আমি জানি লোকে আমায় চেনে না। সেই কারণেই চায়ের দোকানে আমি আড্ডা দিতে পারি। সাধারণ মানুষের জীবনে ঢুকে যেতে পারি। রাস্তার নানা রকম মানুষকে অবজার্ভ করতে পারি। তবে পুরস্কার পাওয়ার পর অনেক মানুষ আবেগের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ছবিটা আবার দেখেছে।
বাংলা ছবি তা হলে আবেগে চলে?
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছবিতে নিশ্চয়ই আসে, তবে চরিত্রগুলো হুবহু আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে তৈরি হলে দর্শক যে সব সময় আমার আবেগ দিয়ে ধরতে পারবে এমনটা নয়।
মানে?
‘ময়ূরাক্ষী’-তে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রটা আমার বাবার থেকে নেওয়া, কিন্তু আর্যনীল আমি কখনওই নই। আমি অনেক সময় বাবার হাত ধরে ওই ভাবেই চুপ করে বসে থাকতাম। আমার ব্যস্ত বাবা কেমন চুপ করে গেলেন! কিন্তু তাঁর আবেগ আমার জীবনে যে অনুভূতি তৈরি করেছে যদি সেটা পুরো দেখাতে চাইতাম তা হলে ২৪ ঘণ্টার ছবি করতে হত। সেটা হয় না। আসলে চরিত্ররা আমার দেখায় শুধু নয়, নিজেদের মতো করে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করুক। ছবির ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক। তবেই সিনেমা সব দর্শকের মধ্যে, বড় স্ফিয়ারে যেতে পারবে বলে আমার মনে হয়।
আরও পড়ুন, এই বলি নায়িকাদের মঙ্গলসূত্রের দাম শুনলে চমকে উঠবেন!
তা হলে আপনি বাজারে বিক্রির কথা ভেবে ছবি করেন না। এই ইন্ডাস্ট্রিতে এই মনোভাব নিয়ে টিকে আছেন কী করে?
ছবি করতে চাইলেই করি না। আমার লেখা অনেক স্ক্রিপ্ট এখনও পড়ে আছে। আমার নিজের পছন্দ হয় না। আমার মনে হয় কোনও ফিল্ম মেকার-ই দর্শকদের পুরো অনুভূতি বুঝতে পারে না। ন’বছর কী করে টিকে রইলাম নিজের কাছেই সেই প্রশ্ন করি। বিরাট যে ডেডিকেটেড দর্শক গোষ্ঠী আছে আমার ছবির তা-ও না। তাঁর মানে এটাও না যে আমি বলছি, আমার ‘অংশুমানের ছবি’ কেউ দেখেনি। ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশনের সঙ্গে তিন বছর কাজও করেছি। এই অবধি। অত বড় ব্যানারের সঙ্গে সারাক্ষণ জড়িয়ে আছি। পার্টিতে যাচ্ছি এমনটা করি না!
কিন্তু অনেকেই বলে অতনু ঘোষ ভাল পরিচালক!
সেটা টেলিফিল্মের জন্য। কিছু টেলিফিল্মের কথা আজ বলতে চাই, আঙ্গিকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছিল তাতে। মনে আছে সৌরভ সড়ঙ্গির ‘আশ্রয়’-এর কথা। এক জন মানুষ ক্রমশ বুঝতে পারে সে অপ্রকৃতিস্থ মানুষের মতো, মানে ক্রমশ পাগল হয়ে ওঠে। যেমন অসাধারণ ছবি, সে রকম চমৎকার অভিনয়। ওই টেলিফিল্মের অভিনেতা ছিলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। এই বিষয় নিয়ে কিন্তু বাংলা টেলিফিল্ম ভাবলেও বাংলা ছবি এখনও ভাবতে পারেনি।
টিম ‘ময়ূরাক্ষী’। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচালক। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।
আপনি বড্ড বিনয়ী। আপনার ছবির নিজস্ব দর্শক হল কেমন করে সেটা বলুন।
বলছি। ওই টেলিফিল্ম থেকেই আমার বেশ কিছু দর্শক তৈরি হয়েছিল। তাঁরা আমার সঙ্গে থেকে গিয়েছেন। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে খুব পরীক্ষাগুলোয় যেতে আজও ভয় পাই আমরা। ‘ময়ূরাক্ষী’-তে অতীত থেকে বর্তমানের গল্প বলা। মানুষ এই অভিজ্ঞতা ধরতে পারে। তবে এই গল্পর চেয়ে সামাজিক বিষয় নিয়ে ছবি করলে তার ঝুঁকি কম থাকে।
আর একটু বুঝিয়ে দিন।
‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর আবার করে রিলিজ হয়েছিল। দর্শক কিন্তু দেখতে চাননি।
কিন্তু বাঙালি দর্শক তো ‘সহজ পাঠের গপ্প’ দেখেছে!
হ্যাঁ, ‘সহজ পাঠের গপ্প’র মধ্যে সমাজ তো বিরাট জায়গা নিয়ে আছে। কিন্তু মানুষের বাস্তব-পরাবাস্তবের ঘোরাফেরার গল্প, জটিল মনস্তত্ত্বের গল্প টেলিফিল্মে এলেও ছবিতে দেখানো হয়েছে বা দারুণ সফল হয়েছে এমনটা নয়। শৈবাল মিত্র অবশ্য এই ধরনের কাজ করেছেন। ওঁর ‘চিত্রকর’ দেখে ভাল লেগেছে।
আরও পড়ুন, অসুস্থ ইরফান টুইটে কী মেসেজ দিলেন?
বাংলা ছবি তা হলে গোয়েন্দা, বাচ্চা আর সম্পর্কে আটকে আছে?
দেখুন, গোয়েন্দার ক্ষেত্রে সত্য অন্বেষণে সাহসিকতা লাগে। সেটা আমি এখনকার ডিটেক্টিভ গল্পে পাই না। এখানে ‘ওপেন অ্যান্ড শাট’ পদ্ধতি চলে। জাতীয় পুরস্কারের সুবাদে আমি তো এ বার প্রচুর অন্য ভাষার ছবি দেখলাম। কত যে নীরবতার ভাষা, কী বলব! মরাঠি, মালয়ালাম ছবিতে এক এক রকম ধারা। ‘ভয়ানকম’ দেখলাম ভীষণ আনপ্রিটেন্সাস ট্রিটমেন্ট, যা বাংলা ছবিতে নেই। সম্পর্কের ছবি তো এখানে অতি সরলীকরণ হচ্ছে। আমি নিশ্চয়ই দেখতে চাইব বাবা-মেয়ের ভীষণ জটিল সম্পর্কের ছবি! কই দেখি না তো! বরং সরলীকরণ দেখছি।
উদাহরণ দেবেন?
‘শব্দ’র মতো আরও বাংলা ছবি চাই।
বাংলা ছবি নিয়ে এত কথা বলছেন, অস্বস্তি হচ্ছে না?
আমার বদনাম এমনিই আছে বোধহয়। কী আর করব? আমি খুব সোজা কথা বলি।
পরের ছবি কী?
জানি না।
মানে? জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক বলছেন, পরের ছবি জানি না!
আরও পড়ুন, ফের ‘বাবা’ হচ্ছেন অভিষেক!
কেউ কিছু না বললে কী করব বলুন?
আপনি নিজের ছবি সম্পর্কে এতটাও উদাসীন নন। ফেসবুকে তো দিব্যি ছবি নিয়ে লেখেন। সবাইকে নিজের ছবি দেখতে বলেন।
বলি তো। আমি চাই আমার ছবির দর্শক বাড়ুক।
এখানে ট্যালেন্ট আছে? কী মনে হয়?
প্রচুর! ঋত্বিক চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ, সুদীপ্তা চক্রবর্তী— এরা অভিনয় নিয়েই জন্মেছে। ঋত্বিক, সুদীপ্তার তা-ও একটা জায়গা আছে। রুদ্রনীলকে সে ভাবে ব্যবহার করা হয়নি এখনও। ‘আমি আদু’-তে ওর অভিনয় দেখে চমকে গিয়েছিলাম। কাঞ্চন, পরানদা খরাজ— এঁরা কৌতুকশিল্পী হয়ে থেকে গেলেন। খারাপ লাগে।
নিজের কাছে প্রত্যাশা নেই?
আছে। ভাল ছবির। তবে সেলিব্রিটি হওয়ার দাবি নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy