Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

এইচআইভি নিয়ে ডাক্তার-নার্সদের ‘অজ্ঞতা’ দেখল শহর

এড্‌স নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়। ১ ডিসেম্বর, বিশ্ব এড্‌স দিবসে ঘটা করে অনুষ্ঠানও হয় বিভিন্ন জায়গায়। তার পরেও পরিস্থিতি যে সেই তিমিরেই, তা ফের দেখিয়ে দিল দুই সরকারি হাসপাতাল। বিশ্ব এড্স দিবসের দিন কয়েক আগে এইচআইভি পজিটিভ হওয়ার ‘অপরাধে’ দুর্ঘটনায় আহত এক মহিলার চিকিত্‌সা করতে অস্বীকার করল একটি সরকারি হাসপাতাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৮
Share: Save:

এড্‌স নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়। ১ ডিসেম্বর, বিশ্ব এড্‌স দিবসে ঘটা করে অনুষ্ঠানও হয় বিভিন্ন জায়গায়। তার পরেও পরিস্থিতি যে সেই তিমিরেই, তা ফের দেখিয়ে দিল দুই সরকারি হাসপাতাল। বিশ্ব এড্স দিবসের দিন কয়েক আগে এইচআইভি পজিটিভ হওয়ার ‘অপরাধে’ দুর্ঘটনায় আহত এক মহিলার চিকিত্‌সা করতে অস্বীকার করল একটি সরকারি হাসপাতাল। শুধু তা-ই নয়, নিয়ম ভেঙে তাঁর ‘রেফারাল’ কার্ডে এইচআইভি পজিটিভ কথাটা লিখেও দেওয়া হল। যা দেখে মুখ ফেরালেন রাজ্যের অন্যতম প্রধান এক মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারেরাও। গুরুতর অসুস্থ ওই মহিলা আপাতত বিনা চিকিত্‌সায় বাড়িতেই শয্যাশায়ী।

অভিযোগের কেন্দ্রে হাওড়া জেলা হাসপাতাল এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় হাওড়ার বেলেপোলের কাছে হ্যাংস্যাং মোড়ে স্বামীর সঙ্গে সাইকেলে বাড়ি ফেরার সময়ে ট্রেলারের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন বছর বত্রিশের এক মহিলা। তাঁর কোমরের হাড় ও ডান হাত ভেঙে যায়। রামরাজাতলার বাসিন্দা, পেশায় নির্মাণকর্মী ওই মহিলাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে ওই মহিলা ভর্তি হওয়ার পরে তাঁর স্বামী চিকিত্‌সক ও নার্সদের জানান, তাঁরা দু’জনেই এইচআইভি পজিটিভ। অভিযোগ, এ কথা শুনেই শোরগোল পড়ে যায়। চিকিত্‌সক ও নার্সরা অবিলম্বে ওই মহিলাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ির লোককে চাপ দিতে থাকেন।

বুধবার টালির চালের একচিলতে ঘরে শুয়ে ওই মহিলা বলেন, “চিকিত্‌সক বা নার্সরা কেউ আমাকে ছুঁয়েও দেখেননি। উল্টে আমার বাড়ি ও পাড়ার লোককে নানা গালমন্দ করে রাতেই আমাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।”

ওই মহিলার মা জানান, এই ঘটনার পরে হাসপাতাল থেকেই তাঁর জামাই নিরুদ্দেশ হয়ে যান। ফলে তিনি এবং পাড়ার কয়েক জন মহিলা মিলে পরদিন, ১০ নভেম্বর মেয়েকে মেডিক্যালে নিয়ে যান। হাওড়া হাসপাতালের অস্থি চিকিত্‌ক ‘রেফারাল’ কার্ডে এইচআইভি পজিটিভ লিখে দিয়েছিলেন। ওই প্রৌঢ়ার অভিযোগ, “মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারবাবুরা ওই কার্ডের লেখা দেখেই রোগীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। আমরা কান্নাকাটি করায় শেষ পর্যন্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দিয়ে কোনওক্রমে মেয়ের কোমরে ও হাতে প্লাস্টার করে দেওয়া হয়। এর পরে আমাদের প্রায় ঘাড় ধরে হাসপাতাল থেকে বার করে দেন তাঁরা।”

বাড়িতে ফেরার পরে ওই রোগিণীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। তাই পরের দিন স্থানীয় বিধায়কের চিঠি নিয়ে ফের মেডিক্যাল কলেজে ছোটেন পরিজনেরা। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। বরং মেডিক্যালের ডাক্তাররা ওই রোগিণীকে ফের হাওড়া হাসপাতালেই রেফার করেন বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, সেখানেও চিকিত্‌সা না করে ওই মহিলাকে শৌচাগারের পাশে ফেলে রাখা হলে পরিজনেরা ব্যক্তিগত বন্ডে তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান।

কেন চিকিত্‌সা না করে ফিরিয়ে দেওয়া হল ওই মহিলাকে? হাওড়া হাসপাতাল বা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কতৃর্পক্ষ এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েছে হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর। হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস রায় বলেন, “দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত ওই মহিলাকে ফের হাসপাতালে এনে চিকিত্‌সার ব্যবস্থা করছি।”

হাওড়া জেলা হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “কারা ওই রোগিণীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, খোঁজ নিয়ে আগে তাঁদের শো-কজ করতে নির্দেশ দিয়েছি। মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারদের গাফিলতির ব্যাপারে স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলব।”

এত আশ্বাসের পরেও অবশ্য আশার আলো দেখছেন না এইচআইভি পজিটিভ ওই মহিলা। তাঁর কথায়, “ডাক্তারবাবুরা কতটা নিষ্ঠুর হতে পারেন, গত কয়েক দিনে জেনে গিয়েছি। কোনও কিছুর উপরেই আমার আর ভরসা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hiv doctor-nurse ignorance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE