Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল

ন্যায্য মূল্যের দোকানে অমিল ওষুধ, ক্ষোভ

ঘটা করে উদ্বোধনই সার! মাত্র আট মাসেই ধুঁকতে শুরু করেছে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে চালু হওয়া ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকান। রোগীদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় ওষুধই মেলে না ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকানে। ফলে বাইরে থেকে বেশি দাম দিয়ে ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে নির্দিষ্ট করে দেওয়া ১৪২ রকমের ওষুধ থাকার কথা ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকানে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৪ ০২:৩২
Share: Save:

ঘটা করে উদ্বোধনই সার! মাত্র আট মাসেই ধুঁকতে শুরু করেছে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে চালু হওয়া ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকান।

রোগীদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় ওষুধই মেলে না ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকানে। ফলে বাইরে থেকে বেশি দাম দিয়ে ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে নির্দিষ্ট করে দেওয়া ১৪২ রকমের ওষুধ থাকার কথা ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকানে। এ ছাড়াও হাসপাতালের পক্ষ থেকে চিকিৎসকেরা একটি তালিকা দিয়ে থাকেন। সেখানেও খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের পক্ষ থেকে প্রায় তিরিশ রকমের ওষুধের নাম দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের দেওয়া তালিকার ওষুধ তো দূর, স্বাস্থ্য দফতরের তালিকার ওষুধেরও অধিকাংশই ওই দোকানে মিলছে না বলে অভিযোগ। ফলে দুর্ভোগে পড়ছেন রোগীরা।

কেন নেই তালিকায় থাকা ওষুধ? দোকানের ম্যানেজার কুমার বেরার সাফাই, “ওষুধ শেষ হয়ে গেলে তো আনতে সময় লাগে! তাই কখনও সমস্যা হচ্ছে।” তবে তাঁর দাবি, ১৪২টির মধ্যে প্রায় ১২৮ রকমের ওষুধ সবসময়েই মজুত থাকে।

যদিও দিনের পর দিন ঘুরেও অনেকেই প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। দীর্ঘ দিন ধরে লিভারের সমস্যায় ভুগছেন ঝাপেটাপুরের নিখিল দাস। তাঁর কথায়, “বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনতে এসেছিলাম ওই দোকানে। কিন্তু একটি মাত্র ওষুধ ছাড়া কিছুই পেলাম না। এখন বাইরের দোকান থেকেই কিনতে হবে!”

সমস্যার মধ্যে রয়েছে জননী-শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা, রাষ্ট্রীয় শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় থাকা রোগীরাও। নিয়ম অনুযায়ী, হাসপাতালের এই ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের মাধ্যমে এই প্রকল্পের রোগীদের নিখরচায় ওষুধ দেওয়ার কথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির। অবস্থা দেখে সম্প্রতি একটি দরপত্র ডেকে যে সব ওষুধ এই ন্যায্য মূল্যের দোকানে নেই, সেগুলি বাইরের একটি দোকান থেকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতাল থেকে দেওয়া একটি কাগজ নিয়ে সেই দোকানে দেখালেই প্রয়োজনীয় ওষুধ মিলবে।

বস্তুত, রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরেই রোগীদের আর্থিক দিকটি ভেবে এই ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গেই জেলা হাসপাতালে এই পরিষেবা চালু হয়। পরে মহকুমা হাসপাতালেও এই পরিষেবা চালুর চিন্তাভাবনা শুরু হয়। সেই মতো আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম ও ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে চালু হয়েছিল এই ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকান। পরে ঠিক হয় খড়্গপুরেও চালু হবে সেই দোকান। গত বছরের ১২ নভেম্বর ঘটা দোকানের উদ্বোধন হয়। সেখানে হাজির ছিলেন তৎকালীন জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি, সভাধিপতি উত্তরা সিংহ প্রমুখ। প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পরিকাঠামো গড়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাছেই নবনির্মিত ভবনে চালু হয় ওই দোকান।

তবে ওই পর্যন্তই।

প্রথমে সব ওষুধ মিললেও এখন সেখানে অধিকাংশ ওষুধ পাওয়া যায় না বলে রোগী ও তাঁর পরিজনদের অভিযোগ। নিয়ম অনুযায়ী, ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকান থেকে একজন রোগী সর্বোচ্চ ৬৩ শতাংশ ছাড়ে ওষুধ কিনতে পারেন। তবে এখানে ছাড় কম রয়েছে এমন ওষুধ মজুত রাখারও অভিযোগ উঠছে।

হাসপাতালের সুপার তথা অতিরিক্ত জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল বলেন, “ওষুধ নেই এই অভিযোগ জানার পর থেকে বহুবার ওই দোকানটির যে সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তার জেনারেল ম্যানেজারকে চিঠি দিয়েছি। কোনও সদুত্তর পায়নি। বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরেও জানিয়েছি।” ঠিকাদার সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার রিতেশ অগ্রবালও মানছেন, “কিছু ওষুধ নেই ঠিকই। তবে কিছুদিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”

মহকুমাশাসক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “ওই ওষুধের দোকানের জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব শীঘ্রই অন্য কোনও সংস্থাকে বরাত দেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE