Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রবিবার হলেই চিকিৎসা মেলেনা জেলা হাসপাতালে, ক্ষুব্ধ রোগীরা

রাত থেকেই ধুম জ্বর। রবিবার সকাল দশটা বাজতেই তাই আসানসোল জেলা হাসপাতালে হাজির হয়েছিলেন হীরাপুরের ডিহিকা গ্রামের জ্যোৎস্না গুপ্ত। বেশ খানিকক্ষণ বসে থেকে জানতে পারলেন, জরুরি বিভাগ ছাড়া সব বিভাগই বন্ধ। অবস্থা আশঙ্কাজনক না হলে চিকিৎসা পাওয়ার উপায় নেই।

চিকিৎসার অপেক্ষায় বসে রোগী ও তার আত্মীয়েরা। নিজস্ব চিত্র।

চিকিৎসার অপেক্ষায় বসে রোগী ও তার আত্মীয়েরা। নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:১১
Share: Save:

রাত থেকেই ধুম জ্বর। রবিবার সকাল দশটা বাজতেই তাই আসানসোল জেলা হাসপাতালে হাজির হয়েছিলেন হীরাপুরের ডিহিকা গ্রামের জ্যোৎস্না গুপ্ত। বেশ খানিকক্ষণ বসে থেকে জানতে পারলেন, জরুরি বিভাগ ছাড়া সব বিভাগই বন্ধ। অবস্থা আশঙ্কাজনক না হলে চিকিৎসা পাওয়ার উপায় নেই।

হাসপাতালের বাইরে বেরিয়েই দেখা মিলল রূপনারায়ণপুরের ফণিভূষণ মাজির। তাঁর ছেলে ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। ফণিভূষণবাবু বলেন, “ভাবতেই পারছি না, রবিবার মানেই জেলা হাসপাতালের প্রায় সব বিভাগ বন্ধ। বুকে ব্যাথা হলে ইসিজি হবে না, রোগীকে ভর্তি হলেও পরের দিন চিকিৎসা মিলবে। হাত ভেঙে গেলেও একই ব্যবস্থা। এর জেরে আমাদের মতো গরীবদের নাকাল হতে হয়। অথচ ধর্মঘটের দিনেও তো জরুরি পরিষেবা বলে ওষুধের দোকান খোলা থাকে।” তাঁর দাবি, রাজ্য সরকারের এ বিষয়টি দেখা উচিত। জামুড়িয়ার বুধন বাউড়ি জানালেন, রবিবার এই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকে। তাছাড়াও রক্তের প্রয়োজন থাকলে প্রভাবশালী ব্যক্তিকে দিয়ে দরবার করাতে হয়। না হলে রোগী রক্ত পায় না।

বছর খানেক আগে আসানসোলকে স্বাস্থ্য জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কতটা বদলেছে আসানসোলের স্বাস্থ্য মানচিত্র? সেই খোঁজেই রবিবার সকালে আসানসোল স্বাস্থ্য হাসপাতালে গিয়েছিল আনন্দবাজার। পর পর যে ছবিগুলি দেখা গেল সেগুলি কিন্তু মোটেও আশাব্যাঞ্জক নয়। রবিবার ছুটির দিন। তাই হাসপাতালের বর্হিবিভাগ বন্ধ। কিন্তু একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের রোগী সহায়তা কেন্দ্রটিও। অথচ ছুটির দিনেও দূরদুরান্ত থেকে প্রচুর রোগী এই হাসপাতালে আসেন। রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, ওই সহায়তা কেন্দ্রটি বেশির ভাগ কাজের দিনেও বন্ধই থাকে। তখন পাশের ডিসপেনশারি (হাসপাতালের নিজস্ব ওষুধের দোকান) বিভাগের কর্মীরাই রোগীর আত্মীয়দের সহযোগিতা করেন। রবিবার বলে এ দিন সেই ডিসপেনশারিটিও বন্ধ ছিল। হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিকের দরজায় দেখা গেল বড় তালা। হাসপাতালের এক নার্স দাবি করলেন, রবিবার বলেই জরুরী পরিষেবা বাদ দিয়ে হাসপাতালের প্রায় সব বিভাগ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু রাজ্য জুড়ে যখন এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে চুড়ান্ত সতর্কতা জারি রয়েছে তখন অন্তত ফিভার ক্লিনিকের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম কি শিথিল করা যেত না? প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিকরা। রোগীর আত্মীয়দের আরও অভিযোগ, এ দিন প্রসূতি বিভাগেও পরীক্ষা প্রায় হয় না বললেই চলে।

হাসপাতালের মত জরুরি পরিষেবার জায়গায় কেন কাজ হবে না রবিবার? রাজ্য কোঅর্ডিনেশন কমিটির আসানসোল জেলা হাসপাতাল ইউনিটের সম্পাদক সুকান্ত দাশগুপ্তের দাবি, “এক দশকের বেশি সময় এইভাবেই চলছে। আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই রবিবার হাসপাতালের প্রায় সব বিভাগ বন্ধ রাখার বিরোধিতা করছি। কর্তৃপক্ষকে ডেপুটেশনও দেওয়া হয়েছে। কাজ হয়নি।” জেলা হাসপাতালের প্রাক্তন সুুপার শ্যামল সান্যালের দাবি, “সপ্তাহের কোনও দিনই হাসপাতাল বন্ধ রাখা বিধিসম্মত নয়। সরকারের উচিত সপ্তাহের এক দিনেই (পড়ুন রবিবার) প্রায় সকলের ছুটি না দিয়ে রোটেশনে ছুটির ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী না থাকার কারণেই এই পরিস্থিতি।”

যদিও রবিবার হাসপাতালে পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস। তিনি বলেন, “যাঁদের এক দিন পরে চিকিৎসা করলে ক্ষতি নেই, শুধুমাত্র তাঁদেরই রবিবার চিকিৎসা করা হয় না। জরুরি প্রয়োজন থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে ডেকে এনে ইসিজি ও এক্স রে করা হয়। একটু অপেক্ষা করলে রক্তও পাওয়া যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

offended pacenet dist hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE