গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
রায় ঘোষণা হতেই শুরু হয়ে গেল তুমুল রাজনৈতিক চাপানউতোর। টু-জি লাইসেন্স এবং স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে যে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তা যে আদ্যন্ত ভিত্তিহীন, সে কথা প্রমাণ হয়ে গেল— জোর গলায় বলতে শুরু করেছে কংগ্রেস।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম, প্রাক্তন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী কপিল সিব্বল— কংগ্রেসের একের পর এক শীর্ষ নেতা বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করলেন বিশেষ সিবিআই আদালতের রায় ঘোষিত হওয়ার পর। কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও দীর্ঘ সাংবাদিক বৈঠক করে তীব্র সমালোচনায় বিঁধলেন বিজেপিকে।
পাল্টা আক্রমণে নামল বিজেপি তথা সরকার পক্ষও। নিম্ন আদালতের এই রায়কে কংগ্রেস যেন নিজেদের সততার শংসাপত্র না ভাবে— কটাক্ষ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির।
২০১১ সালে টু-জি কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল। মনমোহন সিংহ সরকারের ভাবমূর্তিতে জোর ধাক্কা দিয়েছিল এই বিপুল অঙ্কের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। স্বাভাবিক ভাবেই বৃহস্পতিবার বিশেষ সিবিআই আদালতের রায় ঘোষিত হওয়ার পরে মুখ খুলেছেন মনমোহন। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে যে ‘প্রবল অপপ্রচার’ শুরু হয়েছিল, সে কথা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে বলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আদালতের রায়ই সবটা বুঝিয়ে দিচ্ছে। ... ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে যে প্রবল অপপ্রচার শুরু হয়েছিল, তা যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, সে কথা আদালত দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানানোয় আমি খুশি।’’
মুখ খুলেছেন ইউপিএ জমানার অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও। তিনি বলেছেন, ‘‘একটা বিষয় আজ খুব স্পষ্ট হয়ে গেল। সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের বিরুদ্ধে যে সব দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তা কখনও সত্য ছিল না, কখনও সঠিক ছিল না...।’’
আরও পড়ুন: সাংসদদের মাঝেই কেঁদে ফেললেন মোদী, তিন বার
বর্তমান অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি অবশ্য পাল্টা যুক্তি নিয়ে ময়দানে নেমেছেন। টু-জি কেলেঙ্কারির ১৭ অভিযুক্তকেই বিশেষ সিবিআই আদালত বেকসুর খালাস করায় কংগ্রেস যেন না ভাবে যে আদালত কংগ্রেসকে সততার শংসাপত্র দিয়েছে— এমনই ভাবেই এ দিন কটাক্ষ করেছেন জেটলি। আদালতের এই রায়কে কংগ্রেস ‘মানপত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। জেটলি বলেছেন, ‘‘২০১২-র ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল যে ইউপিএ সরকারের (স্পেকট্রাম বণ্টন) নীতি ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অসৎ। স্পেকট্রাম বণ্টনের প্রতিটি ঘটনাকেই অস্বচ্ছতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিয়েছিল।’’ জেটলির দাবি, বিশেষ সিবিআই আদালতের রায়ে কোনও ভাবেই প্রমাণ হচ্ছে না, ইউপিএ সরকার সৎ ছিল। তদন্তাকারীদের ব্যর্থতাতেই অভিযোগ প্রমাণ করা গেল না বলে তিনি জানিয়েছেন। জেটলি বলেছেন, ‘‘এ কথা স্বীকার করতে আমার কোনও দ্বিধা নেই যে, তদন্তকারীরা অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: লোকসভার আগে ভরসা সেই হিন্দুত্ব
টু-জি মামলায় বিশেষ সিবিআই আদালতের রায় আসার পর সরব হয়েছেন অন্যতম শীর্ষ কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী কপিল সিব্বলও। স্পেকট্রাম বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল ডিএমকে নেতা এ রাজাকে। মন্ত্রকের দায়িত্ব বর্তেছিল কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের উপর। তিনি দায়িত্ব নিয়েই জানিয়েছিলেন, স্পেকট্রাম বণ্টনে কোনও দুর্নীতি হয়নি। তিনি এ দিন বিনোদ রাইয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল পদে থাকাকালীন বিনোদ রাই-ই জানিয়েছিলেন, টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টনে বিপুল অঙ্কের আর্থিক অসঙ্গতি রয়েছে। সিব্বলের ইঙ্গিত, বিজেপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিনোদ রাই ওই রকম রিপোর্ট দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy